logo
আপডেট : 4 June, 2020 07:34
আমার বাবা পৃথিবীটাই বদলে দিয়েছে!

আমার বাবা পৃথিবীটাই বদলে দিয়েছে!

নিহত জর্জ ফ্লয়েডের মেয়ে জিয়ানা

বিশেষ প্রতিনিধি:
বাবার বন্ধুর কাঁধে চড়ে রাস্তা পার হবার সময় পিছন থেকে এক সাংবাদিকের প্রশ্ন “তোমার বাবার জন্য গর্ব হয় ? কি করেছিল তোমার বাবা, জানো তুমি?” পিছন দিকে ঘাড় ফিরিয়ে ছয় বছরের জিয়ানা হাসিমুখে উত্তর দিল “ আমার বাবা পৃথিবীটাই বদলে দিয়েছে!” যুক্তরাষ্ট্রের মিনেসোটা রাজ্যে শ্বেতাঙ্গ পুলিশ অফিসারের হাতে নিহত কৃষ্ণাঙ্গ যুবক জর্জ ফ্লয়েড এর কন্যার এই বক্তব্য মুহুর্তের মধ্যে স্যোসাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়ে যায়। 
স্বামীর মৃত্যুর আট দিন পর বুধবার প্রথম বার প্রকাশ্যে কথা বলেন রক্সি ওয়াশিংটন।  মিনিয়াপোলিসের সিটি হলে জর্জ ফ্লয়েডের স্মরণসভায় তখন উপচে পড়া ভিড়। মায়ের সাথে সাদা টপ পরা ছ’বছরের মেয়ে জিয়ানা আসেন অনুষ্ঠানে। তার দিকে তাকিয়েই রক্সি ভাঙা গলায় বললেন, ‘‘মেয়েটা আমার চোখের সামনেই বড় হবে। এক দিন গ্র্যাজুয়েটও হবে। কিন্তু জর্জের কিছুই দেখা হল না।’’ এসময় বারবার চোখ মুছতে থাকেন রক্সি। ছোট্ট জিয়ানা একেবারে চুপচাপ দাঁড়িয়ে মায়ের পাশে। ডায়াস ছেড়ে আসার সময় মাকে জড়িয়ে ধরে এক বার শুধু চোখ বুজল সে। 
সিটি হল থেকে বাবার বন্ধু প্রাক্তন বাস্কেটবল তারকা স্টিফেন জ্যাকসন সিনিয়রের হাত ধরে বেরিয়ে এল ছোট্ট জিয়ানা। রাস্তা পার হবার সময় কাঁধে চড়লো। রাস্তায় প্রতিবাদি হাজারো মানুষ। জিয়ানার মুখখানা হাসিভরা। রাস্তা পার হবার সময় পিছন থেকে এক সাংবাদিক তাকে প্রশ্ন করেন-’তোমার বাবার জন্য গর্ব হয়? কি করেছিল তোমার বাবা, জানো তুমি? হাসিমুখে পিতৃহীন ছোট্ট জিয়ানার জবাব- “ আমার বাবা পৃথিবীটাই বদলে দিয়েছে!” 
হত্যাকারী পুলিশের শাস্তির দাবিতে গত আট দিন ধরে প্রতিবাদে অগ্নিগর্ভ পুরো আমেরিকা। ৪০টিরও বেশি রাজ্যে জারি করা হয়েছে কারফিউ। তাতেও থামানো যায়নি বিক্ষোভকারীদের। সেনা-পুলিশের ভয় আর কারফিউ উপেক্ষা করে লাখ লাখ মানুষ দিন-রাত বিক্ষোভ করছে দেশজুড়ে। কয়েকটি শহরে সেনা মোতায়েনও করা হয়েছে। বিক্ষোভকারীদের একটাই কথা-বিচার আমরা চাই-ই, চাই।” 
গতকাল হিউষ্টনে জর্জ ফ্লয়েডের স্মরণে রাস্তায় হেঁটেছেন প্রায় ৬০ হাজার মানুষ। মার্টিন লুথার কিংয়ের হত্যাকাণ্ডের পর এত শক্তিশালী বিক্ষোভ আর দেখেনি আমেরিকা।
   

বিক্ষোভকারীদের দমন করতে যখন সেনা নামানোর হুমকি দিচ্ছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প, তখন টুইটার ও  ইনস্টাগ্রামে বিক্ষোভকারীদের সমর্থন করে পোস্ট দিয়েছেন ট্রাম্পের ছোট মেয়ে টিফানি ট্রাম্প। ট্রাম্পের প্রতিরক্ষাসচিব মার্ক এস্পারও ট্রাম্পের সেনা নামানোর হুমকির ঘটনার বিরোধিতা করেছেন। 
নৃশংস এই হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে আমেরিকানদের সাথে কন্ঠ মিলিয়ে আস্তে আস্তে অশান্ত হয়ে উঠছে গোটা বিশ্ব। বর্ণবাদ বৈষম্যের অবসান চায় পুরো পৃথিবী। শ্বেতাঙ্গ পুলিশের হাতে সর্বশেষ নিহত কৃষ্ণাঙ্গ যুবক জর্জ ফ্লয়েড এর হত্যার প্রতিবাদ মিছিল থেকে ভেসে আসা “চিৎকার” পুরো পৃথিবীকে সত্যিই বদলে দিয়েছে। জর্জের ছয় বছরের মেয়ের কথাই যেন সত্যি। তার বাবা জীবন দিয়ে বদলে দিয়েছে বর্ণবাদের অভিশাপে জর্জরিত সাদা-কালো মানুষের এই আবাসস্থল।