তুহিন সানজিদ, নিউইয়র্ক:
যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে বিক্ষোভের মুখে ঐতিহাসিক পুলিশ সংস্কার আইনে স্বাক্ষর করেছেন নিউ ইয়র্কের গভর্নর অ্যান্ড্রু কুওমো। শুক্রবার আইনে স্বাক্ষরের পর গভর্নর বলেছেন, মিনিয়াপোলিসে পুলিশ হেফাজতে জর্জ ফ্লয়েডের মৃত্যুর পরে এই রাজ্যে পুলিশি সংস্কার বাস্তবায়িত হতে চলেছে। তবে এই সংষ্কার আইন তৈরিতে ৫০ বছর কেটে গেছে।
এই আইনটি পাশের ফলে এখন থেকে পুলিশের যে কোনো কর্মকাণ্ড এবং শৃংখলার রেকর্ড সাধারণ মানুষ জানতে পারবে।
পুলিশি নির্যাতনে এক কৃষ্ণাঙ্গ যুবকের মৃত্যুর পর আন্দোলন আর বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে উঠে পুরো যুক্তরাষ্ট্র। নৃশংস এই হত্যাকাণ্ডের বিচারসহ পুরোনো আইন বাতিল করে নতুন পুলিশ সংষ্কার আইন পাশের দাবি ছিল দেশব্যাপি বিক্ষোভকারীদের।
নিউ ইয়র্ক গভর্নর এক ব্রিফিংয়ের বলেন, "পুলিশি সংস্কার দীর্ঘ দিনের দাবি। এটা শুধু সাম্প্রতিক ফ্লয়েড হত্যাকাণ্ডের কারণে নয়, বহু আগেই হওয়ার কথা ছিল। আমেরিকায় অপরাধ বিচার বিভাগ দ্বারা সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে অবিচার করা হয় বলেও তিনি মন্তব্য করেন।"
নিউইয়র্কে পুলিশের হাতে নিহত বেশ কয়েকজন কৃষ্ণাঙ্গদের মা, যেমন এরিক গার্নারের মা গোয়েন কার, নিউইয়র্ক সিনেট ও অ্যাসেম্বলির নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
রাজ্য সিনেট এবং অ্যাসেম্বলি ৫০-এ ধারা বাতিল করে দেওয়ার কয়েক দিন পরে এই আইনটি স্বাক্ষর করেন গভর্ণর। বহু বছরের পুরনো আইনটি সমসময় পুলিশ অফিসারদের শৃঙ্খলা রেকর্ডকে জনগণের কাছে প্রকাশ করা থেকে রক্ষা করে আসছিল। গভর্নর এই আইনটি পাশ করার জন্য প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। "নিউইয়র্ক রাজ্য আইনসভা দ্রুত সময়ে দেশের সবচেয়ে আক্রমণাত্মক সংস্কার বিল পাস করেছে বলে জানান তিনি।
সাম্প্রতিক বছরগুলিতে আইনটি বাতিল করার প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়। তবে মিনেয়াপোলিস শহরে পুলিশ হেফাজতে জর্জ ফ্লয়েডের মৃত্যুর পর পুলিশের বর্বরতার বিরুদ্ধে বিক্ষোভ দেশব্যাপি ছড়িয়ে পড়ে। আইনটি পাশের জন্য নতুন করে ”জাতীয় দাবি” হয়ে উঠে।
মিনেসোটা অঙ্গরাজ্যের মিনিয়াপোলিস শহরে গত ২৫মে সন্ধ্যায় সন্দেহভাজন একটি প্রতারণার ব্যাপারে কল পেয়ে পুলিশ ৪৬ বছর বয়স্ক জর্জ ফ্লয়েড নামের এক ব্যাক্তিকে আটক করে। তিনি স্থানীয় একটি রেস্তোরাঁয় নিরাপত্তা কর্মী হিসাবে কাজ করতেন।
গ্রেফতারের পর ডেরেক চাউভিন নামের এক পুলিশ অফিসার রাস্তার উপর ফেলে হাঁটু দিয়ে তার ঘাড় চেপে ধরে রাখে অনেক্ষন। পরে ওই কৃষ্ণাঙ্গ ব্যক্তি মারা যায়। পুলিশী নির্যাতনের সেই ভিডিও স্যোসাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়লে মুহুর্তের মধ্যে তা ভাইরাল হয়ে যায়।
একজন প্রত্যক্ষদর্শীর তোলা ১০ মিনিটের ভিডিও ফুটেজে দেখা যায় জর্জ ফ্লয়েড নি:শ্বাস না নিতে পেরে কাতরাচ্ছেন এবং বারবার একজন শ্বেতাঙ্গ পুলিশ অফিসারকে বলছেন, "আমি নি:শ্বাস নিতে পারছি না।" এঘটনার প্রতিবাদে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যে বিক্ষোভ শুরু হয়। দেশব্যাপি বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়লে কমপক্ষে ৪০টি শহরে কারফিউ জারি করা হয়।
বিক্ষোভকারীদের দাবি অনুয়ায়ি বিভিন্ন রাজ্যের গভর্নরা পুলিশ সংষ্কার আইন পাশের উদ্যোগ নেয়। তবে সবচেয়ে দ্রুত সময়ের মধ্যে নিউইয়র্ক রাজ্য গভর্নর আইনটি পাশ করলো।