জানুয়ারি করোনাভাইরাসের বৈশ্বিক সংক্রমণের পর থেকে এ পর্যন্ত ভাইরাস প্রতিরোধে ১৭০টি টিকার উন্নয়ন কাজ শুরু হয়েছে। এগুলোর মধ্যে ১৮টি ইতোমধ্যে মানুষের ওপর ট্রায়ালে রয়েছে। কেউ বলছেন, সেপ্টেম্বরেই করোনার টিকা ইউরোপের বাজারে চলে আসবে। আবার কেউ দ্বিমত পোষণ করে বলেছেন আগামী বছরের জানুয়ারির আগে টিকা বাজারে আসা সম্ভব নয়। তাই স্বভাবতই প্রশ্ন জেগেছে আসলে কবে আসছে প্রাণঘাতি করোনাভাইরাস মোকাবিলার টিকা?
রোববার লন্ডন ইমপেরিয়াল কলেজের টিকা গবেষণায় নেতৃত্বদানকারী অধ্যাপক রবিন শ্যাত্তক জানিয়েছেন, সেপ্টেম্বরে বাজারে টিকা আসার সম্ভাবনা একেবারেই ক্ষীণ।
গত মাসে যুক্তরাজ্যে টিকার ট্রায়ালে নেতৃস্থানীয় অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সারাহ গিলবার্ট হাউজ অব লর্ডসের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি কমিটিকে জানিয়েছিলেন, করোনায় সংক্রমণের হার যুক্তরাজ্যে কমে যাওয়ায় তার দলকে টিকার উন্নয়ন কাজ চালিয়ে যেতে বেগ পেতে হচ্ছে।
সমস্যাটা হচ্ছে টিকা সুরক্ষা দিতে পারে কিনা সেটা নিশ্চিত হতে পর্যাপ্ত সংখ্যক স্বেচ্ছাসেবক প্রয়োজন। কিন্তু সংক্রমণের হার কমে গেলে স্বভাবতই স্বেচ্ছাসেবকের সংখ্যা কমে যাবে। অধিকাংশ বিশেষজ্ঞেরই ধারণা আন্তর্জাতিক প্রচেষ্টার বদৌলতে দ্রুত কার্যকর টিকা পাওয়া সম্ভব। তবে আগামী বছরের মাঝামাঝি সময়ের আগে হয়তো মিলবে না এই টিকা।
অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় ইতোমধ্যে ১০ হাজার স্বেচ্ছাসেবকের ওপর পরীক্ষামূলকভাবে টিকার প্রয়োগ করেছে। তবে এখানে সংক্রমণের হার কমে আসায় যুক্তরাজ্য থেকে সরে গত পহেলা জুলাই তারা ব্রাজিলে ট্রায়াল শুরু করেছে। একই ধরনের ট্রায়াল পরবর্তীতে চালানো হবে দক্ষিণ আফ্রিকায়।
যুক্তরাষ্ট্রের মর্ডানার টিকার তৃতীয় ধাপের ট্রায়াল জুলাইয়ে শুরু হওয়ার কথা থাকলেও প্রতিষ্ঠানটি তা স্থগিত করেছে। অবশ্য আগস্টের মধ্যে এই ট্রায়াল শুরু হবে বলে জানিয়েছে মর্ডানা। স্বাভাবিকভাবেই আগস্টে ট্রায়াল শুরু হলে এর ফলাফল হাতে আসতে অক্টোবর পর্যন্ত সময় লাগবে। এরপর রয়েছে উৎপাদন ও বাজারজাতকরণের ধাপ।
চীনের সিনোভ্যাক বায়োাটেক এবং চীনা ন্যাশনাল ফার্মাসিউটিক্যাল গ্রুপ (সিনোফার্ম) দুটি টিকার ট্রায়ালের তৃতীয় ধাপের অনুমোদন পেয়েছে। তবে দেশটিতে এখন করোনা আক্রান্ত রোগী না থাকায় টিকার ট্রায়ালের জন্য ভাইরাস আক্রান্ত দেশগুলোর কাছে দেনদরবার করতে হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য নিয়ে বিরোধ থাকায় চীনের টিকার ট্রায়ালে অংশ নিতে অনেক দেশই অনীহা প্রকাশ করছে।
যুক্তরাজ্য সরকারের প্রধান বৈজ্ঞানিক উপদেষ্টা স্যার প্যাট্রিক ভ্যালেন্স জানিয়েছেন, কার্যকর টিকার উন্নয়ন নিয়ে কখনোই নিশ্চয়তা দেওয়া যায় না।
ভ্যাকসিন অ্যালায়েন্স গাভির প্রধান নির্বাহী ডা. সেথ বার্কলে বলেছেন, ‘প্রিক্লিনিক্যাল পর্যায়ে টিকার সাধারণ সাফল্যের হার ৭ শতাংশ। ক্লিনিক্যাল পর্যায়ে সেটি ১৫ থেকে ২০ শতাংশ এবং অধিকাংশই সেই সুবাদে ব্যর্থ হয়।’