এনামুল সরকার আসিফ, টোকিও, জাপান থেকে:
নভেল করোনা ভাইরাস বিশ্বের প্রায় ২০০ টি দেশের মধ্য হানা দিয়েছে । এসব দেশের তালিকায় রয়েছে বিশ্বের অন্যতম ধনী দেশ জাপানও। এ দেশে বাস করছে ১৭ হাজারের উপরে বাঙালি শিক্ষার্থী ও কর্মজীবী মানুষ। করোনাকালে কেমন কাটছে তাদের জীবন ধারা? দ্যা নিউ ইর্য়ক মেইলের পক্ষ থেকে মুখোমুখি হয়েছি কয়েকজন বাঙালি প্রবাসী ও শিক্ষার্থীদের। করোনাকালে তাদের জীবন-যাপনের বিষয়ে বিস্তারিত জানিয়েছেন।
তারা জানিয়েছেন দেশটির আইনের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে জরুরি অবস্থা মেনে নিয়ে তারা জাপানি নাগরিকদের মতোই নিজেদের ঘরবন্দি রেখেছিলেন। এ সময়ে জরুরি কোনো প্রয়োজন ছাড়া বাসা থেকে বের হননি। জীবন জীবিকার সঙ্কট দেখা দিলেও জাপান সরকারের ঘোষিত প্রণোদনার প্রতি আস্থা রেখে কর্মক্ষেত্রে যাওয়া থেকে বিরত ছিলেন।
জাপান সরকারের পক্ষ হতে দেশী ও বিদেশীদের মধ্য যেসকল শিক্ষার্থীও কোম্পানীতে চাকরিরত এবং ব্যবসায়িকরা আর্থিক সংকটের মধ্যে ছিলেন তাদেরকে ৩ মাসের বাড়িবাড়া সহ নগদ অর্থ ঋণ প্রদান করা হয়েছে। জাপানে পড়তে আসা শিক্ষার্থীদের কথা সরকার বিবেচনা করে যারা কাজ করতে পারে নাই তাদেরকে ১০ মান করে বাংলাদেশের ৮০ হাজার টাকার সমপরিমান প্রদান করেছেন।
বাঙালি প্রবাসী বাবুল হক দ্যা নিউ ইর্য়ক মেইলকে জানান, বিশ্ব পরিস্থিতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে আমাদের জীবন যাপন করতে হচ্ছে। গোটা বিশ্বই এখন একটি সঙ্কটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। পরিস্থিতি মেনে নিয়েই আমাদের করোনা মোকাবেলা করে যেতে হবে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে আমরা এতদিন বাসা বাড়িতেই অবস্থান করেছিলাম। মে মাসের ২৫ তারিখ সরকার জরুরি অবস্থা শিথিল করায় কর্মক্ষেত্রে ফিরে আসার সুযোগ পেয়েছি।
বিদেশী কোম্পানীতো চাকুরীরত নাছির উদ্দিন জানান, আমরা দীর্ঘদিন জাপান সরকারের নির্দেশনা মেনে বাসা বাড়িতেই অবস্থান করেছিলাম। এ সময়ে পবিত্র মাহে রমজানের বিশেষ আমল নামাজ ও কোরআন তেলাওয়াতে কাটানোর চেষ্টা করেছিলাম। সন্ধ্যায় মাঝে মাঝে পার্কেও বেড়াতে গিয়েছিলাম। জাপানে বর্তমান সময়ে করোনা ভাইরাসের আক্রান্তের হার কমে যাওয়ার ফলে আবার কাজে ফেরার চিন্তা করছি।
জাপান প্রবাসী বাংলাদেশী মো:খাইরুল ইসলাম জানান, জাপানে করোনা ভাইরাস হানা দেবার পর গত জানুয়ারি মাস থেকে আমার তেমন কোন কাজ নেই। মাঝেমধ্যে অল্প অল্প করে একটু কাজ করি কিন্তু তাতে আমার দৈনন্দিন খরচ বহন করতে পারছি না। এতে করে আমার প্রবাস জীবন ও দেশের পারিবারিক জীবন খুব কষ্টের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। যদিও জাপান সরকার জাপানের সকলের জন্য ১০ মান ইয়েন বরাদ্ধ করেছে কিন্তু আমি দরখাস্ত করেছি প্রায় দেড় মাস হয়ে গেল এখনো টাকা পাচ্ছি না । সেজন্য অর্থনৈতিকভাবে সমস্যায় আছি তবে এখানে কারো কোন হাত নেই। তারপরও আলহামদুলিল্লাহ এই দেশে শতভাগ চিকিৎসা নিরাপত্তা আছে বলে আমরা এখানে তুলনামূলকভাবে ভাল আছি। সব জায়গায় এলকোহল এবং মাস্ক শতভাগ ব্যবহার করা হয়। সেজন্য মানসিক ভাবে আল্লাহ তায়ালা ভাল রেখেছেন। কিন্তু দেশের জন্য অনেক চিন্তিত। দেশে আমাদের পরিবার-পরিজন আত্মীয়-স্বজন সবাই থাকে সেজন্য দেশের মানুষকে মহান আল্লাহ তায়ালা যেন রক্ষা করেন এই কামনা করি।
রনি মোদক জানান, করোনা ভাইরাসের কারণে আমাদের জাপানে নানা সমস্যায় পড়তে হয়েছে। এখানে আমাদের কোন কাজের ব্যবস্থা ছিল না। সমস্ত কোম্পানি, সকল প্রতিষ্ঠান হোটেল-রেষ্টুরেন্ট থেকে শুরু করে বিদেশীরা যে কাজ করে জীবন যাপন করে তার সমস্ত কিছু বন্ধ হয়ে যায়। বিশেষ করে জাপানীরা এমন একটা জাতি যারা এই করোনা রোগ বা যেকোন রোগের ব্যাপারে হোক যে কোনো বিষয়ে খুব সচেতন থাকে। ফলে সকল প্রকার প্রতিষ্ঠানই বন্ধ করে রাখে। এতে করে আমরা সকল প্রবাসীরাই বেকার হয়ে পড়েছি। যার কারনে আমাদের জীবন যাত্রা কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে। জাপান সরকার থেকে যে অনুদান হিসাবে টাকা দিচ্ছে সেই টাকা ও রেসিডেন্স কার্ড না থাকার কারনে পাইনি। যার ফলে জাপানে আমাদের চলতে অনেক কষ্ট হচ্ছে।
ব্যাবসায়ি এখলাছ রহমান জানান, করোনা আক্রমণ থেকে বিশ্বের উন্নত দেশ গুলোর মত জাপান ও রক্ষা পায়নি। কিন্তু জাপান সরকার ও জাপানিজ জনগনের আন্তরিক প্রচেষ্টায় অনেকটা নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসতে পেরেছে। জাপানে বসবাসরত দেশীও বিদেশী জনগন যাতে বিপদে না থাকেন তার জন্য যথাসম্ভব প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ জাপান সরকার গ্রহন করেছেন। করোনার কারনে বিশ্ব বানিজ্য স্থবির হয়ে গেছে। জাপানেও তার ব্যতিক্রম নয়। এ অবস্থা থেকে উত্তরণে ব্যবসায়ীদেরকে নানা রকম প্রনোদনা দিয়ে ব্যাবসা খাতকে সচল রাখার চেষ্টা করে যাচ্ছে জাপান সরকার। যার জন্য জাপান সরকারের ধন্যবাদ প্রাপ্য।
এদিকে জাপানে করোনা ভাইরাস আক্রান্তের সংখ্যা আগের তুলনায় দিন দিন কমে এসেছে। যার ফলে জাপানে ৪৭ টি প্রদেশের সবক’টিতেই জরুরি অবস্থা তুলে নেয়া হয়েছে। বিগত প্রায় ২ মাস জরুরি অবস্থা জারি থাকার কারণে বেকার হয়ে পড়েছেন জাপানে পড়তে আসা বিদেশী শিক্ষার্থী ও কর্মজীবিরা। যার ফলে জাপানে সবচেয়ে কষ্টে জীবন যাপন করতে হচ্ছে তাদের।