বিশেষ প্রতিনিধি:
নিজের ফ্লাটে নৃশংসভাবে হত্যার শিকার তথ্যপ্রযুক্তিবীদ ফাহিম সালেহ’র সাবেক ব্যক্তিগত সহকারীকে আটক করেছে নিউ ইয়র্ক পুলিশ। হত্যার সাথে সম্পৃক্ততা থাকার সন্দেহে তাকে আটক করাে হয়েছে। তার নাম-টাইরেস ডেভন হাসপিল। বাংলাদেশের এ তরুণ উদ্যোক্তাকে হত্যার পেছনে ডেভনের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে এবং অর্থ আত্মসাৎ করার জন্যই সালেহকে খুন করা হয়েছে বলে পুলিশের ধারণা।
আটক ২১ বছর বয়সি তরুণ সালেহের ব্যক্তিগত সহকারী হিসাবে কাজ করেছেন। হাসপিল তার কাছে থেকে বড় অঙ্কের অর্থ হাতিয়ে নেন। পরে সেটা ফেরত দিতে বলেন সালেহ। এরপরই এ হত্যাকাণ্ড ঘটে।
পুলিশের বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থা এপি জানিয়েছে, তদন্তকারী দল গুরুত্বপূর্ণ কিছু ভিডিও ফুটেজ উদ্ধার করেছে। লিফট থেকে বেরিয়ে নিজের অ্যাপার্টমেন্টে ঢোকার সময় খুনীর সাথে ধ্বস্তাধস্তির ঘটনা ঘটেছিল। এসময় মুখোশ পরা খুনী ফাহিম সালেহর দিকে ইলেকট্রোশক-টেজার ছুড়ে মারে। এতে সে দুর্বল হয়ে পড়ে যাওয়ার পর তার ঘাড় ও গলায় কাছে একাধিকবার ছুরিকাঘাত করে হত্যা করে।
এরপর রুমের ভিতর নিয়ে ফাহিম সালেহকে ইলেকট্রিক করাত দিয়ে কেটে তার শরীর কয়েক টুকরো করা হয়। কিন্তু এসময় ফাহিমের এক কাজিন তার খোঁজে আসে। ডোরবেলের শব্দ পেয়ে খুনি পিছন দিক দিয়ে ইমার্জেন্সি এক্সিট সিঁড়ি দিয়ে দ্রুত পালিয়ে যায় বলে মনে করছেন হত্যার তদন্ত সংশ্লিষ্ঠ গোয়েন্দারা।
মঙ্গলবার বিকেলে ম্যানহাটনের বিলাশবহুল এ্যাপার্টমেন্ট থেকে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত তরুণ উদ্যোক্তা ফাহিম সালেহের (৩৩) খন্ডিত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য না পেলেও পুলিশ জানিয়েছে শিগগির তারা হত্যার রহস্য উদঘাটন করতে পারবে। ব্যবসায়িক বিরোধ বা বড় ধরনের আর্থিক লেনদেন এবং ব্যক্তিগত বিরোধ ছিল কী না সে বিষয়গুলো সামনে রেখেই তদন্ত করছেন নিউ ইয়র্ক পুলিশের একাধিক টিম।বিভিন্ন বিষয় নিয়ে ফাহিমের পরিবারে সঙ্গেও কথা বলেছে পুলিশ।
ফাহিম সালেহের এই ব্যাক্তিগত সহকারী ছাড়াও আরো একজন সন্দেহভাজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তদন্তের স্বার্থে তার নাম-ঠিকানাও প্রকাশ করা হয়নি।পুলিশ জানিয়েছে, খুনি রাইড শেয়ারিং অ্যাপ ব্যবহার করে একটি গাড়িতে চড়ে ওই এলাকায় এসেছিলেন। পুলিশ সেই গাড়িটিরও সন্ধান পেয়েছে। সেই সূত্র ধরে সন্দেহভাজন খুনিকে তাদের কব্জায় নিলেও আনুষ্ঠানিক কোনো তথ্য দেয়নি পুলিশ।
পুলিশ বলছে, ফাহিম সালেহ লিফটে সপ্তম তলা নির্বাচন করতে একটি ‘কি ফোব’ ব্যবহার করেছিলেন। ‘কি ফোব’ সাধারণত ভবনের বাসিন্দা এবং অনুমোদিত ব্যক্তির লিফট ব্যবহারের জন্য। তবে পুলিশ যে সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করেছে সেখানে একজন ব্যক্তি কালো পোশাক পরা এবং একটি ব্যাগ হাতে ফাহিম সালেহের সঙ্গেই লিফটে প্রবেশ করে। কিন্তু ওই ব্যক্তি ‘কি ফোব’ ছাড়াই অন্য একটি তলা নির্বাচন করেছে এমন অভিনয় করেন। এসময় দুজনের মধ্যে বাক্য বিনিময়ও হয়। ভিডিও ফুটেজে শব্দ ধারণ না থাকায় তাদের মধ্যে কী কথা হয়েছে তা পুলিশের পক্ষে জানা সম্ভব হয়নি। ফাহিম সপ্তম তলায় তার বাসার ফ্লোরে নেমে গেলে কালো পোশাক পরা লোকটিও নেমে যায়। নিজের এ্যাপার্টমেন্টে ঢোকার সময় খুনীর সাথে ধ্বস্তাধস্তির ঘটনা ঘটেছিল। এসময় খুনী ফাহিমকে লক্ষ্য করে টিজার জাতীয় কিছু ছুঁড়ে মারে। এরপরের কোনো দৃশ্যের বর্ণনা দেয়নি পুলিশ।
বাংলাদেশের পাঠাও নামের রাইড শেয়ারিং আ্যাপের সহ-প্রতিষ্ঠাত ফাহিম নাইজেরিয়ায় রাইড শেয়ারিং অ্যাপ ‘গোকাডা’ চালু করতে গিয়ে বাধার মুখে পড়েছিলেন। গতবছর রাইড শেয়ারিং বন্ধ হয়ে গেলে তিনি চালু করেন পার্সেল ডেলিভারি সার্ভিস। সেটির ব্যবসা সফল হয়। দক্ষিণ আমেরিকার দেশ কলম্বিয়ায় একই রকম দুটি সার্ভিস চালু করেন ফাহিম সালেহ। এছাড়া নিউইয়র্কে চালু করেন মূলধনী সংস্থা ‘অ্যাডভেঞ্চার ক্যাপিটাল’।
নাইজেরিয়ায় ‘গোকাডো’ পরিচালনা নিয়ে কারো সঙ্গে ফাহিমের ব্যবসায়িক বিরোধ তৈরি হয়েছিল কী না তাও খতিয়ে দেখছে পুলিশ। বাংলাদেশে ‘পাঠাও’ চালুর পর ব্যবসা সফল হওয়ার পরও সেখান থেকে কেন নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছিলেন ফাহিম এ বিষয়টিও পুলিশের নজরের বাইরে নেই।
এ হত্যার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার দাবি করেছেন নিহত ফাহিম সালেহের পরিবার। নিউইয়র্ক পুলিশের পক্ষ থেকেও বলা হচ্ছে এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনাটি অধিক গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত চলছে।