বাংলাদেশের করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) জিনোম সিকোয়েন্সে ৮টি নতুন স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য পেয়েছে বাংলাদেশ শিল্প ও বিজ্ঞান গবেষণা পরিষদের (বিসিএসআইআর)।
রোববার (১৯ জুলাই) এক সংবাদ সম্মেলনে জিনোমিক রিসার্চ ল্যাব প্রধান সেলিম খান বলেন, আমরা ২১২ থেকে ৫২৩ পর্যন্ত ৮টি মিউটেশন পেয়েছি ইউনিক, এই মিউটেশনগুলো পৃথিবীর অন্য কোথাও ঘটে নাই। আমাদের নজর রাখতে হবে আমরা আরও ইউনিক মিউটেশন পাই কি না।
তিনি বলেন, আমরা প্রত্যেকটি জিনোম সিকোয়েন্সে ‘ডি৬১৪জি’ করোনাভাইরাস স্ট্রেইনটি পেয়েছি। গবেষণায় দেখা গেছে, বাংলাদেশে করোনাভাইরাস ইতিমধ্যে তার জিনোমিক লেভেলে ৫৯০টি ও প্রোটিন লেভেলে ২৭৩টিরও অধিক পরিবর্তন ঘটিয়েছে। এগুলোর মধ্যে ৯৫ শতাংশ ক্ষেত্রে ‘ডি৬১৪-জি’ করোনাভাইরাস স্ট্রেইনটি সিকোয়েন্সিংয়ে শনাক্ত হয়েছে, যাকে আমরা বাংলাদেশে সংক্রমণের প্রধান কারণ হিসেবে বলছি।
টিকার ক্ষেত্রে এই গবেষণার গুরুত্ব তুলে ধরে তিনি বলেন, যখন কোনো মেডিসিন, ভ্যাক্সিন ডিজাইন করবে, সমস্ত মিউটেশন মাথায় রেখে ডিজাইন করতে হবে।
ডি৬১৪-জি’ ধরনটি নিয়ে চীনের গবেষকরা বলছেন, করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের দেহে যে এন্টিবডি তৈরি হয়,তা পরবর্তীতে করোনাভাইরাসের বিভিন্ন ধরনগুলোকে ঠেকাতে পারলেও ‘ডি৬১৪-জি‘র ক্ষেত্রে অসহায় হয়ে পড়ে।
সংবাদ সম্মেলনে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী ইয়াফেস ওসমান দেশে করোনাভাইরাসে নমুনার জিনোম সিকোয়েন্সিংয়ের ভিত্তিতে বলেন, বাংলাদেশের করোনাভাইরাসটি ইতালির ভাইরাসটির সঙ্গে বেশি নিবিড়।
ইয়াফেস ওসমান বলেন, বিশ্বব্যাপী করোনার ভ্যাকসিন আবিষ্কারের যে গবেষণা হচ্ছে তাতে বাংলাদেশকে বিবেচনায় রাখা হবে, তা এখন নিশ্চিত হয়েছে। বৃটেন ও আমেরিকার সঙ্গে যোগাযোগ হয়েছে, তারা যে পরিমাণ সিকোয়িন্সিং ডাটা চেয়েছেন তা দিতে সক্ষম হয়েছি। এখন বলা যায় করোনার ভ্যাকসিন বাজারে আসলে বাংলাদেশের জন্য কার্যকর ভ্যাকসিন আমরা পাব।
দেশের সব বিভাগ থেকে সংক্রমণ হার ও জনসংখ্যার ভিত্তিতে তিনশতাধিক জিনোম সিকোয়েন্সিংয়ের উদ্যোগ নিয়েছে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়। বিসিএসআইআর’র একটি গবেষণা দল সারাদেশ থেকে নমুনা ও রোগীর মেডিকেল হিস্টোরি সংগ্রহ এবং জিনোম সিকোয়েন্সিংয়ের কাজ অব্যাহত রেখেছে।
করোনাভাইরাসের জিনোম সিকোয়েন্সের ডাটার ওপর ভিত্তি করে বিশ্বব্যাপী ৭৮টি ভ্যাকসিন প্রকল্প চালু আছে। আরো ৩৭টি চালু হবে। বাংলাদেশের ডাটাগুলো Global Initiative on Sharing All Influenza Data (GISAID) প্রকাশ করেছে। ফলে যে কেউ চাইলে ভ্যাকসিন ডিজাইনের জন্য বাংলাদেশের ডাটা নিয়ে কাজ করতে পারবে। এখন পর্যন্ত বিসিএসআইআর’র ১৭৩টিসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মোট ২২টি করোনা সিকোয়েন্সিং ডাটা NCBI ও GISAID প্রকাশ করেছে।