॥ শারমিন সুলতানা রীনা॥
সকালে ঘুম থেকে উঠেই আগে এক কাপ চা পান না করলে রিমির শরীর চলেনা।বিকল ইন্জিনের গাড়ির মতো হয়ে যায়।চা পান করার পর শরীর আস্তে আস্তে সচল হলে তার পর কাজে মনোযোগী হয়।
আজ সকালে চা বানাতে গিয়ে দেখে কৌটা খালি চা পাতা নেই।ঘরে গালিব ছাড়া অন্য কেউ নেই। যাকে দোকানে পাঠিয়ে চা পাতা আনিয়ে নেবে।কিন্তু গালিব বেঘোরে ঘুমাচ্ছে।
কাছে গিয়ে নরম সুরে ডাক দেয় রিমি।হুম বলে পাশ ফিরে শুতেই নরম গলা রিমির ধমকে পরিনত হয়।অবশেষে চোখ মেলে গালিব।
ঃ কি হলো ভোরেই চিৎকার শুরু করে দিলে ঘরে ডাকাত পড়েছে নাকি?
ঃ রাখো তোমার ডাকাত, চা পাতা নেই। উঠে দোকানে গিয়ে নিয়ে আসো।তুমি জানোনা ভোরে উঠেই আমাকে আগে চা খেতে হয়।
ঃ জানিতো তবে একদিন না খেলে কি হয়?
রাগ তার দ্বিগুণ বাড়ে।
ঃ বিয়ের আগেতো বলেছিলে চাইলে আকাশের চাঁদটাও এনে দেবে।বিয়েটা যেই হয়ে গেলো কিছুই দিলেনা।
ঃ চায়ের সাথে চাঁদের কি সম্পর্ক? তোমাকেওতে তখন দেখে মনে হয়েছিলো লক্ষীর প্রতিমা, বিয়ের পরে পুরোই কালীমাতার রূপ ধারণ করলে।
ঃ এই শোন এখন আমার কথা বলার মুড নেই চুলায় জল বসানো উঠে চা পাতা নিয়ে আসো।
কি আর করা বউয়ের আদেশ শিরোধার্য। মুখে পানির ঝাপটা দিয়ে দোকান থেকে চা পাতা নিয়ে আসে গালিব।
চায়ের টেবিলে দুজন অতীত জীবনের গল্পে বিভোর।প্রসঙ্গ পাল্টিয়ে রিমি জানায় আজ সন্ধ্যায় তার বান্ধবী শর্মীর জন্ম দিন।
ঃ তুমিতো জানো শর্মী আমার বেষ্ট ফ্রেন্ড আমি চাই সব চেয়ে সেরা গিফট দিয়ে সবাইকে সারপ্রাইজ দেবো।
সারপ্রাইজটা তোমাকেই দিতে হবে কেন? সারপ্রাইজের প্রতিযোগিতায় নামছো বুঝি?
ঃ ধুর কিযে বলো ও আমার বেষ্ট ফ্রেন্ড না?
কথা বাড়ায়না, গালিব জানে রিমি যা বলবে তাই করবে।হাতে টাকা নেই কিন্তু বলতে পারছে না।এখন অফিসে গিয়ে কলিগদের কাছ থেকে ধার করতে হবে।
ঃ আমি বের হচ্ছি। অফিসে গিয়ে তোমার বিকাশ নং এ টাকা পাঠিয়ে দেবো যা খুশি করো।
ঃ তুমি যাবেনা?
ঃ অফিস আওয়ার শেষ হলে মিটিং আছে, যাওয়া হবেনা।
গালিব যাবেনা ভেবে রিমির মনটাও কেমন হয়ে যায়। অন্যমনস্ক হয়ে চা খেতে গিয়ে জিভ পুড়ে যায় গালিবের।সকালের চায়ের স্বাদ বিস্বাদে পরিণত হয়।উঠে যায় গালিব আর কিছু শোনার আগেই তাকে বেড়িয়ে পরতে হবে অফিসের উদ্দেশ্যে।।।
.........................................
লেখক: শারমিন সুলতানা রীনা
কবি ও লেখক, ঢাকা