বিশেষ প্রতিনিধি:
শোবিজ জগতে নতুন ঝড়। নতুন আলোচনায় তোলপাড়। অভিনেতা অপূর্ব’র সংসার ভাঙ্গার ব্যাপারে নতুন যে রহস্য বেরিয়ে এসেছে তাতে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে মিডিয়া পাড়ায়। প্রতারক রিজেন্ট সাহেদের কারণেই সংসার ভেঙ্গেছে টিভি পর্দার জনপ্রিয় জুটি অপূর্ব-অদিতির। গোয়েন্দাদের কাছে নিজে মুখে এ কথা স্বীকার করেছেন সাহেদ। কবে-কোথায় অদিতিকে নিয়ে ঘুরেছেন তার বিস্তারিত তথ্য দিয়েছেন গোয়েন্দাদের।
এ বছরের ১৭মে নয় বছরের দাম্পত্যজীবনের অবসানের কথা সোস্যাল মিডিয়ায় স্বীকার করেন ছোটপর্দার দর্শকপ্রিয় অভিনেতা জিয়াউল ফারুক অপূর্ব এবং নাট্যকার নাজিয়া হাসান অদিতি। তবে তাদের বিচ্ছেদের কারণ নিয়ে সাধারণ মানুষের কাছে ছিল ধোঁয়াসা। “বনিবনা না হওয়ার কারণেই দু’জনের মধ্যে দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছে” এর বেশি কিছু মিডিয়ায়ও বলেননি তারা। রহস্যঘেরা এই বিচ্ছেদ নিয়ে কেউ প্রকৃত কারণ উদঘাটন করতে পারেনি। এবার সেই রহস্য উন্মোচন হয়েছে।
জানা গেছে, রিজেন্ট হাসপাতালের মালিক প্রতারক সাহেদের ফাঁদে পড়েই তছনছ হয়ে গেছে আদর্শ দম্পতি হিসেবে পরিচিত এই তারকা জুটির। ডিভোর্সের পর অদিতি কারণ হিসেবে ভিন্ন কথা বললেও তাদের সন্তানের ভবিষ্যত এবং ক্যারিয়ারের কথা ভেবে অপূর্ব এ ব্যাপারে মুখ খোলেননি।
আলোচিত প্রতারক সাহেদ ওরফে সাহেদ করিম র্যাবের অভিযানে গ্রেফতার হবার পর রিমান্ডে নানারকম তথ্যের মধ্যে অপূর্ব-অদিতির সংসার ভেঙ্গে যাবার ব্যাপারে তার জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে। তবে ধুরন্ধর এই বহুরূপি প্রতারকের দেয়া সব ধরনের তথ্য যাচাই করছেন গোয়েন্দা কর্মকর্তারা।
রিমান্ডে সাহেদ জানিয়েছেন, অদিতিকে সামনে রেখেই তার সিনেমা জগতে নামার স্বপ্ন পূরণ করতে চেয়েছিলেন। আর সংসারের মোহ ভুলে-সবিকিছু ফেলে সেই ফাঁদে পা দেয় অদিতি।
এ বিষয়ে টেলিফোনে জানতে চাইলে জনপ্রিয় অভিনেতা অপূর্ব’র সাবেক স্ত্রী নাট্যকার নাজিয়া হাসান অদিতি নিউ ইয়র্ক মেইল এর কাছে বিষয়টি সম্পূর্ণভাবে অস্বীকার করেছেন। প্রসঙ্গ তুলতেই তিনি রেগে গিয়ে বললেন, “বিষয়টি একেবারেই অদ্ভুত, ডিভোর্সের বিষয় নিয়ে আমি কোনো কথা বলতে চাই ন।”
অভিনেতা জিয়াউল ফারুক অপূর্‘র সাথে এব্যাপারে জানার জন্য ফোন করলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি এবং তার হোয়াটসআ্যাপ নাম্বারে ম্যাসেজ রাখলেও তিনি কোনো জবাব দেননি।
২০১১ সালের ২১ ডিসেম্বর নাজিয়া হাসান অদিতির সঙ্গে দ্বিতীয় সংসার জীবন শুরু করেন অপূর্ব। এর আগে অপূর্ব ২০১০ সালের ১৮ আগস্ট ভালোবেসে বিয়ে করে মডেল-অভিনেত্রী সাদিয়া জাহান প্রভাকে। প্রভার সাবেক প্রেমিক রাজিবের সাথে তার অবৈধ সম্পর্কের কথা জানতে পেরে ২০১১ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি প্রভার সাথে বিবাহ বিচ্ছেদ করেন। অপূর্ব-অদিতির একমাত্র সন্তান জায়ান ফারুক আয়াশ।
গত ১৭ মে বিকেলে ফেসবুক হ্যান্ডেলে সংসার ভাঙার খবর নিশ্চিত করেন নাজিয়া হাসান অদিতি। রিলেশনশিপ স্ট্যাটাসেও তিনি ‘ডিভোর্সড’ উল্লেখ করেন। এমনকি একটি স্ট্যাটাসে সবার উদ্দেশে তিনি লেখেন, “আমাকে ‘ভাবি’ ডাকা বন্ধ করুন সবাই!” তাদের এই হঠাৎ বিচ্ছেদের খবরে বিস্মিত হয়ে পড়ে শোবিজের মানুষ এমনকি মিডিয়া কর্মিরাও। কেন ভাঙলো আদর্শ এই জুটির সংসার? এই প্রশ্নের উত্তর পায়নি কেউই। তবে পুলিশী রিমান্ডে সাহেদের দেয়া এই তথ্য নিয়ে জনপ্রিয় এই জুটির বিচ্ছেদের বিষয়টি আবার সামনে আসায় তোলপাড় শুরু হয়েছে।
“শাহেদের কারণে তছনছ দুই তারকা দম্পতির সংসার” শিরোনামে মঙ্গলবার বাংলাদেশের পাঠকপ্রিয় ট্যাবলয়েট দৈনিক মানবজমিন একটি রিপোর্ট প্রকাশ করে। তারকাদের নাম উল্লেখ না করে ওই প্রতিবেদনে বিস্তারিত উল্লেখ করা হয় কিভাবে সাহেদের প্রতারণার ফাঁদে পড়ে এই তারকা জুটির সংসার ভেঙেছে। স্বামীর সাথে মিথ্যা কথা বলে নারী তারকাটি সাহেদের সাথে বিদেশ ভ্রমণ করার পর থেকেই মূলত তাদের সংসারে ভাঙ্গন শুরু হয় এবং শেষ পর্যন্ত বিচ্ছেদে গিয়ে তা শেষ হয়।
গোয়েন্দা সূত্রের বরাত দিয়ে মানবজমিন জানিয়েছে, টিভি মিডিয়ার সংগঠন ডিরেক্টর গিল্ডস’র এক নেতার সঙ্গে উত্তরা-ছয় নম্বর সেক্টরে নয় নম্বর সড়কের হোটেল মিলিনায় নিচতলায় রেস্টুরেন্টে খেতে যেতেন দুই নারী তারকা। ওই অভিজাত হোটেলটির দখলদার মালিক শাহেদ।
বছর কয়েক আগে এক বৈধ হোটেল মালিকের কাছ থেকে তিনি নাম ভাঙিয়ে ওই হোটেলটি দখল করেছেন। সেই হোটেলের রেস্টুরেন্টে পরিচয় হয় শাহেদের সঙ্গে দুই নারী তারকার। মোবাইলসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কথা বলা শুরু হয় তাদের। শাহেদের সঙ্গে যখন থেকে তাদের সম্পর্ক হয় তখন থেকে শাহেদ হোটেলের ক্যাশিয়ারকে বলে দিয়েছেন যে, তারা হোটেলে খেতে এলে বিল যেন না নেয়া হয়। মাঝে-মধ্যে শাহেদও তাদের মোটা অংকের টাকা দিতেন। শাহেদের উদারতায় দুই নারী তারকা পটে যান। এরমধ্যে একজনকে নিয়ে তিনি থাইল্যান্ডে গিয়েছিলেন। ওই তারকা তার স্বামীকে বলে গিয়েছিলেন যে, থাইল্যান্ডে তার একটি শো আছে। কিন্তু, পরে তিনি জানতে পারেন যে, তার কোনো শো ছিল না। বরং এক ব্যবসায়ীর আমন্ত্রণে একসঙ্গে থাইল্যান্ডে গেছেন। শুধু তাই নয়, হোটেলের এক রুমে তারা রাতও কাটিয়েছেন। এরপর ওই তারকার স্বামী তাকে ডিভোর্স দিয়ে দেন।
পরিচয়ের পর শাহেদ তাদের নিয়ে শপিংয়ে যেতেন। দেশের বিভিন্নস্থানে লং ড্রাইভে যেতেন। তার মধ্যে একজনকে ২০১৮ সালের জানুয়ারি মাসে হেলিকপ্টারে পার্বত্য এলাকার পর্যটন কেন্দ্র সাজেকে এবং গত বছরের মার্চ মাসে একজনকে নিয়ে থাইল্যান্ডে যান শাহেদ। তাদের যাতায়াত সম্পর্কের বিষয়টি দুই নারী তারকার স্বামীরা জেনে যান। তাদের সম্পর্ক যাতে না থাকে এরজন্য দুই তারকার স্বামী তাদের সতর্ক করে দেন। কিন্তু স্বামীদের কথায় তারা সাড়া দেননি। এ সময় তাদেরকে অর্থ ও বিত্তের লোভ দেখান শাহেদ। তারাও লোভে পড়ে যান। শাহেদের হয়ে দুই তারকাকে অর্থ লেনদেন এবং ভালো-মন্দ দেখাশোনার জন্য শাহেদ তার রিজেন্ট হাসপাতালের এক ব্যক্তিগত নারী উপদেষ্টাকে দায়িত্ব দিয়েছিলেন। এতে দুই তারকা শাহেদের ওপর অনেক সন্তুষ্ট ছিলেন।
শাহেদের ফাঁদে পড়া ওই নারী তারকা দম্পতির এক স্বামী শাহেদের সঙ্গে রিজেন্ট হাসপাতালের তার কার্যালয়ে যোগাযোগ করেছিলেন। কিন্তু তিনি তার কথায় পাত্তা না দিয়ে নিজের স্ত্রীকে সামলানোর পরামর্শ দেন। এ সময় তাদের মধ্যে বাকবিতণ্ডাও হয়।
মানবজমিনে এই রিপোর্ট প্রকাশের পর শোবিজ পাড়ায় ঝড় উঠে। চারিদিকে কানাঘুষা শুরু হয় “কারা এই তারকা জুটি?” তবে খুব কাছের লোকেরাই অনুমান করতে পেরেছে, বাকীরা অন্ধকারেই রয়ে গেছে।
অনুসন্ধানে একাধিক গোয়েন্দা সূত্র নিউ ইয়র্ক মেইলকে জানিয়েছে, এই অপূর্ব-অদিতি দম্পত্তির সংসার ভাঙ্গা ছাড়াও অন্য আরেক তারকা জুটির সংসার তছনছ এবং এক নায়িকার প্রেমে পড়াসহ তার প্রতারণার অসংখ্য তথ্য দিয়েছে সাহেদ। সেসব তথ্য শুনে বিষ্মিত গোয়েন্দারাও। সাহেদের দেয়া বেশিরভাগ তথ্যেরই সত্যতা পেয়েছেন তদন্ত ও রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদ সংশ্লিষ্ঠ গোয়েন্দা কর্মকর্তারা।