সামাজিক দূরত্ব মেনে আর মুখে মাস্ক পরে স্পেনে ঈদুল আযহার নামাজ আদায় করেছেন প্রবাসী বাংলাদেশিরা। দেশটির রাজধানী শহর মাদ্রিদ, পর্যটন নগরী বার্সেলোনা, কানারিয়াস দ্বীপপুঞ্জসহ বিভিন্ন শহরে ছড়িয়ে থাকা প্রবাসী বাংলাদেশিরা ঈদের নামাজ আদায় করে ও একে অপরের সাথে কুশলাদি বিনিময় করে ঈদের দিনকে আনন্দময় করার চেষ্টা করেন। করোনার প্রাদুর্ভাব কিছুটা বেড়ে যাওয়ার পরও স্বাস্থ্যবিধি মেনে দেশটির মসজিদগুলোতে ঈদুল আযহার নামাজের অনুমতি থাকায় মুসল্লিরা ঈদের নামাজে অংশগ্রহণ করতে পেরেছেন। তবে এ বছর করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে ভাটা পড়েছিল ঈদের কোলাকুলিতে।
রাজধানী শহর মাদ্রিদে বাংলাদেশি অধ্যুষিত এলাকা লাভাপিয়েস সংলগ্ন বায়তুল মুকাররম জামে মসজিদে ঈদের নামাজের ৫টি জামাত অনুষ্ঠিত হয়। সকাল ৭টা ৪৫, ৮টা ৩০, ৯টা ১৫, ১০টা ও ১০টা ৪৫মিনিটে অনুষ্ঠিত ঈদের জামাতগুলোতে পাঁচ শতাধিক মুসল্লি অংশগ্রহণ করেন। কভিড-১৯ এর কারণে ঈদের নামাজে ছিল বিশেষ সতর্কতা। প্রতিটি জামাতে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখার জন্য ১৩২ জন করে নামাজ আদায় করেন, যেখানে একইসাথে পাঁচ শতাধিক মানুষ নামাজ আদায় করতে পারতেন। মুসল্লীদের বাসা থেকে অযু করে এবং জায়নামাজ নিয়ে আসার নিদের্শনা ছিল। নামাজ শেষে খুতবায় কভিড-১৯ থেকে মুক্তির জন্য আল্লাহ‘র কাছে বিশেষ ফরিয়াদ ও বিশ্বের সকল নির্যাতিত মুসলমানদের হেফাজত ও শান্তি কামনা করা হয়। এছাড়াও শাহ জালাল লতিফিয়া জামে মসজিদ ও আল হুদা মসজিদে ৩টি করে ঈদের জামাত এবং অন্তেভিয়াস ফুটবল মাঠে সকাল ৮ টা ৩০ মিনিটে একটি জামাত অনুষ্ঠিত হয়।
পর্যটন নগরী বার্সেলোনায় বাংলাদেশি অধ্যুষিত এলাকাগুলোর বাংলাদেশি পরিচালনাধীন মসজিদগুলোতেও ঈদুল আজহার নামাজের বেশ কয়েকটি জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে। বর্তমান সময়ে করোনা সংক্রমণের মাত্রা দেশটির কাতালোনিয়া প্রদেশে বৃদ্ধি পাওয়ায় ঈদের নামাজ পড়া নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিলেও স্বাস্থ্যবিধি মেনে ঈদের নামাজ আদায় করেছেন। পুরোপুরি উৎসবপূর্ণ পরিবেশে না হলেও তারা নিজেদের মধ্যেই ঈদ আনন্দ ভাগাভাগি করে নিয়েছেন।
কানারিয়া দ্বীপপুঞ্জভুক্ত শহর টেনেরিফেও ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে। উল্লেখযোগ্য সংখ্যক প্রবাসী বাংলাদেশিরাও ঈদের নামাজ পড়ে ও একে অপরের সাথে ঈদের কুশলাদি বিনিময় করে ঈদ উদযাপন করেছেন। ওখানেও ছিল স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার নির্দেশনা। সকাল ৭টা ৩০ ও ৮টা ৩০ মিনিটে ঈদের দুইটি জামাত অনুষ্ঠিত হয়। জামাত দু’টিতে বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তানসহ বেশ কয়েকটি দেশের অভিবাসীরা নামাজ আদায় করেন। ঈদের জামাত শেষে দেশ, জাতি ও মুসলিম উম্মাহর শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনা করে মোনাজাত করা হয়। স্পেনের সর্বস্তরের প্রবাসী বাংলাদেশিরা জামাত গুলোতে অংশ নেন।
স্পেনে অনুষ্ঠিত বিভিন্ন জামাতে প্রবাসী বাংলাদেশিদের মধ্যে ছিলেন বাংলাদেশ মসজিদ পরিচালনা কমিটির সভাপতি খোরশেদ আলম মজুমদার, সাধারণ সম্পাদক আবদুল খালিক, বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন ইন স্পেনের সভাপতি কাজী এনায়েতুল করিম তারেক, সাধারণ সম্পাদক কামরুজ্জামান সুন্দর, বাংলাদেশ এসোসিয়েশন ইন স্পেনের সাবেক সভাপতি জামাল উদ্দিন মনির, আল মামুন, বাংলাদেশ এসোসিয়েশন ইন স্পেনের সিনিয়র সহ সভাপতি আলামিন মিয়া, গ্রেটার ঢাকা এসোসিয়েশন ইন স্পেনের সভাপতি এম এইচ সোহেল ভূঁইয়া, সাধারণ সম্পাদক মিল্টন ভূঁইয়া কচি, খুলনা বিভাগীয় কল্যাণ সমিতির সভাপতি সৈয়দ মাসুদুর রহমান নাসিম, ভালিয়েন্তে বাংলার সভাপতি মো: ফজলে এলাহী, সাধারণ সম্পাদক রমিজ উদ্দিন, গ্রেটার সিলেট এসোসিয়েশন ইন স্পেনের সাবেক সভাপতি লুৎফুর রহমান, কানেক্ট বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক আফসার হোসেন নীলু,ঢাকা জেলা এসোসিয়েশন ইন স্পেনের সাধারণ সম্পাদক মাসুদুর রহমান, কমিউনিটি নেতা নূর হোসেন পাটোয়ারী, আবুল খায়ের, দুলাল সাফা, জাকির হোসেন, আরজু মিয়া,আবুল হাসেম মেম্বার, স্পেন বাংলা প্রেসক্লাবের সভাপতি সাহাদুল সুহেদ, সাধারণ সম্পাদক আফাজ জনি, মামুনুর রশিদ, নুরুল ইসলাম, এমদাদুল হক, আলী হোসেন, আব্দুর রহমানসহ কমিউনিটি নেতৃবৃন্দ।
প্রসঙ্গত, স্পেনে করোনা মহামারির কারণে ঈদুল ফিতরের নামাজ আদায় করার অনুমতি ছিল না। করোনার প্রাদুর্ভাব থেকে উন্নতির দিকে যাওয়া দেশটিতে আবারো করোনার ’দ্বিতীয় ধাপ’-এর আশঙ্কা করা হচ্ছে। তাই ঈদুল আযহার নামাজ আদায়ে দেখা দিয়েছিল প্রশ্ন। শেষ পর্যন্ত স্বাস্থ্যবিধি মেনে দেশটিতে অবস্থিত মুসলমানদের মসজিদে ঈদের নামাজ আদায় করার অনুমতি পাওয়া যায়। তবে দেশটিতে প্রকাশ্যে পশু কোরবাণি দেয়ার নিয়ম না থাকায় স্থানীয় গ্রোসারি দোকান থেকে মাংস কিনে নিয়েছেন প্রবাসী বাংলাদেশিরা।