রিয়াজুল হক:
উনিশ শতকের শেষ দিকে একটি বাণিজ্য যুদ্ধ শুরু হয় ইতালি ও ফ্রান্সের মধ্যে। সে সময় নতুন সংঘবদ্ধ ইতালি স্থানীয় শিল্পায়নকে জোরদার করতে ফ্রান্সের আমদানির ওপর অত্যধিক ট্যারিফ আরোপ করে। এদিকে ফ্রান্স ছিল ইতালির চেয়ে ধনী ও শক্তিশালী। তারা প্রতিশোধ নিতে ইতালির পণ্যের ওপর বাড়তি ট্যারিফ আরোপ করল। ফলে ইতালির রফতানি হলো ধরাশায়ী। এমনকি পরিস্থিতি বুঝতে পেরে ইতালি নিজেদের ট্যারিফ বাতিল করলেও ফ্রান্স শাস্তিস্বরূপ আরো বহু বছর বাড়তি ট্যারিফ বজায় রেখেছিল।
অনেকেই যুক্তি দেখিয়ে থাকেন, দেশীয় কোন কোন শিল্পের সহায়তার জন্য আমদানীকৃত পণ্যের উপর ট্যারিফ আরোপ করা হয়ে থাকে। এই ট্যারিফ আরোপ যদি দেশের স্বার্থে করা হয়ে থাকে, তবে সেটাকে সাধুবাদ জানানো যায়। তবে কাউকে শায়েস্তা করার চিন্তা করে যদি কোন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, তখন বিষয়টা দেশীয় শিল্পের সহায়তার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে না। আরো একটি বিষয় হচ্ছে, আমদানীকৃত পণ্যের উপর উচ্চ ট্যারিফ বসালেই যে দেশীয় শিল্প বেঁচে যাবে, বিষয়টি কিন্তু এত সহজ নয়। পণ্যের মান, প্রযুক্তির উৎকর্ষতা, মূল্য, ভোক্তার চাহিদা পূরণে সক্ষমতা ইত্যাদি অনেক কিছুই জড়িত থাকে। বাণিজ্য যুদ্ধের কারণে পণ্যের মূল্য বেড়ে যায় এবং মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধি পায়। তবে সবচেয়ে বড় ক্ষতি হয় সাধারণ ক্রেতাদের, যারা সংখ্যায় অনেকগুণ এবং বাণিজ্য যুদ্ধের বিষয়ে সামান্যতম আগ্রহ যাদের থাকে না।
এক কথায় যদি উত্তর দিতে হয়, তবে বলা যেতে পারে, বাণিজ্য যুদ্ধ থেকে অংশগ্রহণকারী দেশ দুটি সাধারণত লাভবান হয় না। পূর্বে ঘটে যাওয়া বাণিজ্যিক যুদ্ধের মাধ্যমে সেটাই প্রমাণিত হয়েছে। তবে যারা বাণিজ্য যুদ্ধে অংশগ্রহণ করে না, তারা অনেক সময় এই যুদ্ধের মাধ্যমে লাভবান হয়ে থাকে। ধরুন, দুইটি দেশ ‘ক’ এবং ‘খ’ এর মধ্যে বাণিজ্য যুদ্ধ সংঘটিত হল। ‘ক’ দেশ ‘খ’ এর পণ্যের উপর এবং ‘খ’ দেশ ‘ক’ দেশের পণ্যের উপর শুল্ক বাড়িয়ে দিল। এর ফলে, ‘খ’ এবং ‘ক’ দেশের রপ্তানি আয় কমে গেল। ’খ’ তার পণ্য নতুন বাজার ‘গ’ দেশে কিছুটা কম মূল্যে রপ্তানী করা শুরু করল। নতুন বাজারে প্রবেশের জন্য পণ্যের মূল্য কম রাখাটাই বাঞ্চনীয়। অর্থাৎ বাণিজ্য যুদ্ধে না থেকেই বরং দেশ ‘গ’ লাভবান হল। তাহলে দেখা যায়, বাণিজ্য যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী দেশ নয়, বরং তৃতীয় কোন দেশ এই যুদ্ধ থেকে লাভবান হয়।
লেখক: অর্থনৈতিক বিশ্লেষক এবং যুগ্ম পরিচালক, বাংলাদেশ ব্যাংক।