অমিতা সিনহা: দেশে প্রথম আন্তর্জাতিক মানের ‘ভূতাত্ত্বিক জাদুঘর’ স্থাপন হবে সিলেটের মাটিতে। প্রাকৃতিক সুন্দর্য্যে ভরপুর সিলেটের প্রকৃতি কন্যা জাফলংয়ে ২৫ দশমিক ৫৯ একর ভূমিতে ভূতাত্ত্বিক জাদুঘর নির্মাণের পরিকল্পনার উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ খনিজ সম্পদ উন্নয়ন ব্যুরো (বিএমডি)।
পাথর রাজ্যের মাটিতে সম্প্রতি উচ্চ আদালতের নির্দেশনা সংবলিত একটি সাইনবোর্ড টাঙানো হয়েছে। সেখানে বন্ধ রাখা হবে পাথর উত্তোলন কাজ বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।
জানা গেছে, ২০১২ সালে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে উচ্চ আদালতের নির্দেশনায় জাফলংকে ইসিএ ঘোষণার নির্দেশনা দেন। এরপর ২০১৫ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি জাফলংকে ইসিএ ঘোষণা করে প্রজ্ঞাপন জারি হয়। এর পরবর্তিতে ২০১৬ সনের ১১ জানুয়ারি প্রাকৃতিক ভরপুর পাথর রাজ্য জাফলংকে ‘ভূতাত্ত্বিক ঐতিহ্য’ ঘোষণা করে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়।
এ সময় জাফলংয়ের ২২ দশমিক ৫৯ একর ভূমিকে সংরক্ষিত হিসেবে ঘোষণা করা করা হয় । গত ১৭ আগস্ট বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠান জাফলংয়ে ইসিএ ও ভূতাত্ত্বিক ঘোষিত সংরক্ষিত এলাকা ১৯৭২সালে অধিগ্রহণ করা দাবি করে সম্প্রতি উচ্চ আদালতের আদেশে পাথর উত্তোলন করার প্রস্তুতি শুরু করেন । অথচ ভূতাত্ত্বিক জাদুঘর স্থাপনের নথিপত্রে বলা হয়েছে, উন্মুক্ত শিলাস্তর, চুনাপাথর সংরক্ষণ গবেষণার জন্য জাতীয় স্বার্থে ২৫ দশমিক ৫৯ একর ভূমিকে ভূতাত্ত্বিক ঐতিহ্য ঘোষণা করা হয়েছে । আর ঐ ভূতাত্ত্বিক জাদুঘর নির্মাণ হবে আন্তর্জাতিক মানের।
বিএমডির মহাপরিচালক মো. জাফর উল্লাহ সাক্ষরিত নথিপত্রে উল্লেখ্য করা হয়, জাফলং ইসিএ-ভুক্ত এলাকা ছাড়াও ভূতাত্ত্বিক ঐতিহ্য হিসেবে চিহ্নিত এলাকায় একটি ভূতাত্ত্বিক জাদুঘর স্থাপন করা হবে। মেসার্স জালালাবাদ লাইম ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড ট্রেডিং অ্যাসোসিয়েশনসহ আরও একটি প্রতিষ্ঠানকে ওই স্থানে পাথর উত্তোলন থেকে বিরত থাকতে হবে। ‘খনি ইজারা’ নিয়ে জাফলংয়ের সোনাটিলাসহ আশপাশের এলাকায় পাথর উত্তোলন করা হলে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) একটি ফাঁড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এছাড়া উন্মুক্ত শিলাস্তর, চুনাপাথর সংরক্ষণ গবেষণার জন্য জাতীয় স্বার্থে ২৫ দশমিক ৫৯ একর ভূমিকে ভূতাত্ত্বিক ঐতিহ্য ঘোষণা করা হয়েছে। সেখানে আন্তর্জাতিক মানের ভূতাত্ত্বিক জাদুঘর নির্মাণ হবে। এজন্য জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে জাদুঘর নির্মাণে ইতিমধ্যে পরিকল্পনা প্রণয়ন করা হয়েছে। এই জাদুঘর দেশি ও বিদেশি পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয় হবে।
জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থে ও সরকারের গৃহীত উন্নয়ন পরিকল্পনা বাস্তবায়নে বিএমডি আইনিভাবে মোকাবিলার প্রস্তুতিও নিয়েছে বলে জানান গোয়াইনঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. নাজমুস সাকিব । তিনি আরও জানান, সিলেটের জাফলং তেল, গ্যাস ও খনিজ সম্পদের খুবই গুরুত্বপূর্ণ স্থান। যা অন্যান্য স্থানে এক সাথে দেখা যায় না। পাশ্ববর্তি দেশ ভারতের মেঘালয়ের সাথে সংলগ্ন স্থান হচ্ছে সিলেটের জাফলং। তাই এই প্রকৃতি ভরপুর কন্যাকে সঠিক ভাবে পরিচর্যা করা আমাদের সবার দায়িত্ব। জাফলংয়ে যদি আন্তর্জাতিক মানের ভূতাত্ত্বিক জাদুঘর স্থাপন করা হয় তাহলে প্রকৃতিতে ভরপুর স্থানটি আরও বেশি আকর্ষণীয় হয়ে উঠবে। এতে করে দেশ বিদেশের পর্যটকদের সমাগম ব্যাপক আকারে বৃদ্ধি পাবে।