logo
আপডেট : 25 September, 2020 02:02
বাংলাদেশকে চীনের প্রভাব থেকে দূরে রাখতে চায় যুক্তরাষ্ট্র
মেইল রিপোর্ট

বাংলাদেশকে চীনের প্রভাব থেকে দূরে রাখতে চায় যুক্তরাষ্ট্র

দক্ষিণ এশিয়ায় উদীয়মান মিত্র বাংলাদেশের কাছে বেশি পরিমাণে সমরাস্ত্র বিক্রি করতে চাইছে যুক্তরাষ্ট্র। মূলত চীনের প্রভাব থেকে বাংলাদেশকে দূরে রাখার কৌশলের অংশ হিসেবে এটি করতে চাচ্ছে ওয়াশিংটন। 

নিক্কেই এশিয়ান রিভিউতে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ দাবি করা হয়েছে।

সংবাদমাধ্যমটি জানিয়েছে, চলতি মাসে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেছেন মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী মার্ক এসপার। তিনি ২০৩০ সালের মধ্যে বাংলাদেশের সামরিক বাহিনীকে আধুনিকায়নে সহযোগিতার প্রস্তাব দিয়েছেন।

গত বছর দুই দেশ অ্যাপাচি হেলিকপ্টার ও ক্ষেপণাস্ত্রসহ অত্যাধুনিক সমরাস্ত্র বিক্রির বিষয়ে কথাবার্তা শুরু করেছিল। ধারণা করা হচ্ছে, এ সংক্রান্ত একটি চুক্তি টেবিলে আছে। তবে এ বিষয়ে বিস্তারিত কোনো তথ্য প্রকাশ করা হয়নি।

মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের ডেপুটি অ্যাসিসট্যান্ট সেক্রেটারি লরা স্টোন জানান, কংগ্রেসকে এ ব্যাপারে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানানো হয়নি। 

বাংলাদেশে স্বস্তায় সবচেয়ে বেশি সমরাস্ত্র সরবরাহ করে চীন। বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের যে কোনো চুক্তি স্বভাবতই হতাশ করবে বেইজিংকে।

লরা স্টোনের কাছে নিক্কেই এশিয়ান রিভিউ সম্প্রতি ইমেইলে এ সংক্রান্ত কিছু প্রশ্ন পাঠিয়েছিল। সেসব প্রশ্নের জবাবে লরা বলেন, ‘আমরা বাংলাদেশের সঙ্গে আমাদের নিরাপত্তা সহযোগিতা আরও ঘনিষ্ঠ করতে চাচ্ছি, যেটি  অনেক বেশি পারস্পরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট, বাংলাদেশের স্বার্বভৌমত্ব ও স্বাধীন কর্মকাণ্ডের প্রতি শ্রদ্ধায় পূর্ণ।’

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ভারত, বাংলাদেশ, নেপাল, শ্রীলংকা, ভুটান ও মালদ্বীপের বিষয়টি দেখভালকারী এই কর্মকর্তা বলেন, ‘প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম বিক্রির চেয়ে আমরা বাংলাদেশের পছন্দের অংশীদার হতে প্রস্তুত।’

স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনিস্টিটিউটের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ১৯৯০ সাল থেকে বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্র থেকে অনেক বেশি অস্ত্র কিনছে। ২০১৯ সাল পর্যন্ত বিগত ১০ বছরে যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে ১১ কোটি মার্কিন ডলারের অস্ত্র কেনা হয়েছে। তবে সেই তুলনায় চীনের কাছ থেকে বাংলাদেশের অস্ত্র কেনার পরিমাণ অনেক গুণ বেশি। ২০১০ সাল থেকে বেইজিংয়ের কাছ থেকে ২৫৯ কোটি ডলারের সামরিক সরঞ্জাম কিনেছে ঢাকা।

যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয়স স্টেট ইউনিভার্সিটির রাষ্ট্রবিজ্ঞানের শিক্ষক আলি রিয়াজ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রীর টেলিফোন আলাপ প্রসঙ্গে জানান, দুই দেশের এই আলোচনার সময়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এর কারণ হচ্ছে, ঢাকার সঙ্গে বেইজিংয়ের উষ্ণ সম্পর্ক।

নিক্কেই এশিয়ান রিভিউর মতে, বাংলাদেশের ওপর চীনের প্রভাব বাণিজ্য ও অবকাঠামো বিনিয়োগের বাইরেও রয়েছে। করোনা মহামারিতে বাংলাদেশে মাস্ক, গাউন ও মেডিকেল টিম পাঠিয়েছে চীন।  চীনের সিনোভ্যাক বায়োটেক বাংলাদেশে করোনার টিকার তৃতীয় ধাপের ট্রায়ালও চালাচ্ছে। সিলেটে ২৫ কোটি মার্কিন ডলার ব্যয়ে বিমানবন্দর নির্মাণের চুক্তি নিশ্চিতের পর বাংলাদেশের আমদানি করা ৯৭ শতাংশ পণ্যের ওপর থেকে শুল্ক প্রত্যাহার করে নিয়েছে বেইজিং। বাংলাদেশ এখন  তিস্তা নদীর উপর একটি প্রকল্পের জন্য চীনের কাছ থেকে প্রায় ১০০ কোটি ডলার ঋণ নেওয়ার চেষ্টা করছে। 

অপরদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের ইন্দো-প্যাসিফিক সীমান্ত কৌশল ওয়াশিংটনের প্রতিরক্ষা কূটনীতির অংশ। ২০১৯ সালের জুনে এই কৌশলের ব্যাপারে প্রথম প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। এতে শ্রীলংকা, নেপাল ও মালদ্বীপের পাশে দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশকে ‘উদীয়মান অংশীদার’ হিসেবে আখ্যা দেওয়া হয়েছে।

২০০৫ সাল থেকে ওয়াশিংটনের শুরু হওয়া বৈদেশিক সামরিক অর্থয়ান প্রকল্পের আওতায় সন্ত্রাসবাদবিরোধী থেকে শান্তিরক্ষা পর্যন্ত বিভিন্ন নিরাপত্তা ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশ ইতোমধ্যে যৌথভাবে কাজ করছে। ২০১৮ সাল থেকে বাংলাদেশের উপকূলীয় নিরাপত্তা ও অন্যান্য জটিল ইস্যুতে অতিরিক্ত ছয় কোটি ডলার ছাড় দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র।

বাংলাদেশের জন্য অবশ্য একই সঙ্গে চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের ভালো বন্ধু হওয়া মুশকিল। কারণ এই মুহূর্তে চীনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য ও  কূটনৈতিক বিরোধ চলছে। তাই ‘উদীয়মান অংশীদার’ বাংলাদেশকে চীনের বিশাল প্রভাব বলয় থেকে যুক্তরাষ্ট্র কতটুকু বের করে নিয়ে আসতে সক্ষম হবে সেটাই এখন দেখার বিষয়।