কেবল তিন বছরের মধ্যে সংখ্যালঘু উইঘুর মুসলিম অধ্যুষিত উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় জিনজিয়াং প্রদেশে হাজার হাজার মসজিদ ধ্বংস কিংবা নষ্ট করেছে চীনা কর্তৃপক্ষ।
সংখ্যালঘুদের ওপর চীনা নিপীড়ন নিয়ে অস্ট্রেলিয়ান স্ট্র্যাটেজিক পলিসি ইনস্টিটিউট (এএসপিআই)-এর নতুন এক গবেষণায় এই চিত্র উঠে এসেছে।
স্যাটেলাইট থেকে পাওয়া ছবি এবং মাঠপর্যায়ের প্রতিবেদনের ওপর ভিত্তি করে শুক্রবার (২৫ সেপ্টেম্বর) প্রতিবেদনটি প্রকাশ করেছে এএসপিআই। চীনা কর্তৃপক্ষ জিনজিয়াংয়ে ২৪ হাজার মসজিদ থাকার দাবি করলেও অস্ট্রেলীয় থিংকট্যাংকটি জানিয়েছে, অঞ্চলটিতে বর্তমানে ১৫ হাজারেরও কম মসজিদ রয়েছে। যার অর্ধেকেরই বেশি বিভিন্নভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করা হয়েছে। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম গার্ডিয়ানের প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।
চীনের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় প্রদেশ জিনজিয়াংয়ে বসবাসকারী উইঘুরদের বেশিরভাগই তুর্কি মুসলিম। আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলো প্রায়ই এই সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীটির ওপর চীনা নিপীড়নের তথ্য হাজির করছে। মানবাধিকার সংস্থাগুলো বলছে, ১০ লাখের বেশি উইঘুরকে জিনজিয়াংয়ের শত শত বন্দিশিবিরে আটকে রাখা হয়েছে। ধর্মীয় কার্যক্রম ও রীতিনীতি ত্যাগে উইঘুরদের ওপর চাপ প্রয়োগেরও অভিযোগ রয়েছে চীনা কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে। তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে বেইজিং।
এএসপিআই’র প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ওই অঞ্চলের দুই-তৃতীয়াংশ মসজিদ চীনা কর্তৃপক্ষের হাতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এছাড়া সেখানকার সুরক্ষিত সাংস্কৃতিক স্থাপনার প্রায় অর্ধেকই ক্ষতিগ্রস্ত কিংবা ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে। এরমধ্যে দশম শতাব্দী থেকে অন্যতম তীর্থ স্থান হিসেবে বিবেচিত ওরদাম মাজারটিকে পুরোপুরি ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে।
প্রতিবেদনটি বলছে, ২০১৭ সাল থেকে প্রায় ৩০ শতাংশ মসজিদ ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে। এছাড়া আরও প্রায় ৩০ শতাংশ মসজিদ কোনও না কোনোভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করা হয়েছে। এরমধ্যে রয়েছে মিনার বা গম্বুজের মতো স্থাপত্য নিদর্শন নষ্ট করে দেওয়া। ধ্বংস করে দেওয়া মসজিদগুলোর বেশিরভাগ জায়গা খালি রাখা হয়েছে। আবার কোনও কোনও জায়গা সড়ক, গাড়ি পার্কিং কিংবা কৃষি খামারে পরিণত করা হয়েছে বলেও জানানো হয় ওই প্রতিবেদনে।
এএসপিআই বলছে, ১৯৯০-এর দশকে চীনে সাংস্কৃতিক বিপ্লবের পর মুসলিমদের উপাসনালয়ের সংখ্যা এখন সর্বনিম্ন পর্যায়ে পৌঁছেছে। মসজিদ ধ্বংস করা হলেও জিনজিয়াংয়ে খ্রিস্টানদের গির্জা এবং বৌদ্ধদের মন্দির অক্ষত অবস্থায় রয়েছে বলে জানিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।
অস্ট্রেলিয়ার প্রতিষ্ঠানটির প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, উইঘুরদের সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক জীবন পাল্টে দিতে নানা তৎপরতার পাশাপাশি চীনা কর্তৃপক্ষ তাদের ভাষা, সংগীত, বাড়ি এবং এমনকি খাদ্যাভ্যাস পাল্টাতে বাধ্য করছে। চীন সরকারের নীতিতে তাদের সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের মূল উপাদানগুলো মুছে ফেলতে কিংবা বদলে দেওয়ার চেষ্টা করছে বলেও দাবি করা হয়েছে ওই প্রতিবেদনে।