logo
আপডেট : 27 September, 2020 00:34
বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে ইতিহাস বিকৃতি: ফেঁসে যাচ্ছেন নিউ ইয়র্কের বিতর্কিত নেতা মোহাম্মদ আলী সিদ্দিকী
সাইবার ট্রাইব্যুনালে মামলা দায়ের, আরো মামলার প্রস্তুতি

বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে ইতিহাস বিকৃতি: ফেঁসে যাচ্ছেন নিউ ইয়র্কের বিতর্কিত নেতা মোহাম্মদ আলী সিদ্দিকী

বিশেষ প্রতিনিধি, নিউ ইয়র্ক:

ফেঁসে যাচ্ছেন নিউ ইয়র্কের বিতর্কিত আওয়ামীলীগ নেতা মোহাম্মদ আলী সিদ্দিকী। বঙ্গবন্ধুর ভাগ্নে শেখ ফজলুল হক মনি সম্পর্কে ঔদ্ধত্যপূর্ণ বক্তব্য দেয়ায় বাংলাদেশে সাইবার ট্রাইব্যুনালে তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। গত ১৪ সেপ্টেম্বর ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ২০১৮ এর ২৫/২৯ ও ৩১ ধারায় মামলাটি দায়ের করেছেন গোপালগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি-আওয়ামীলীগ নেতা হিন্দাল কাদির বাপ্পা।  
ট্রাইব্যুনালের নির্দেশে ঢাকার সাইবার সিকিউরিটি এন্ড ক্রাইম ডিভিশন মামলাটি তদন্ত করছে। ১৫ অক্টোবরের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
ইতিহাস বিকৃত করে মিথ্যা বক্তব্য দেয়ায় ১০ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামীলীগের দপ্তর সম্পাদকের পদ থেকে বিতর্কিত নেতা মোহাম্মদ আলী সিদ্দিকীকে বহিষ্কার করা হয়। এই বহিষ্কারাদেশকে সাধুবাদ জানিয়ে ফেসবুকে স্টাটাস দিয়েছেন বঙ্গবন্ধুর ভাগ্নে শেখ ফজলুল হক মনির বড় ছেলে এবং বর্তমান যুবলীগের কেন্দ্রিয়  সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ফুফাতো ভাই শেখ ফজলে শামস  পরশ।
১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবসের এক ভার্চুয়াল আলোচনা সভায় সপরিবারে বঙ্গবন্ধু হত্যার ঘটনা বর্ণনা করতে গিয়ে মোহাম্মদ আলী সিদ্দিকী বলেন, দেশে ফিরে আসার পর পরই খুব অল্প সময়ের মধ্যে একটি ষড়যন্ত্রকারী গ্রুপ বঙ্গবন্ধুকে মিসগাইড করেন। খুনী খন্দকার মোশতাক বঙ্গবন্ধুর ভাগ্নে শেখ ফজলুল হক মনির সাথে অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ হয়ে বঙ্গবন্ধুকে বিভিন্নভাবে মিসগাইড করেছেন। ছলে-বলে কৌশলে বঙ্গবন্ধুকে একা করে ফেলেছিলেন। 
মোহাম্মদ আলী সিদ্দিকীর এই ঔদ্ধত্যপূর্ণ ও মিথ্যা বক্তব্য সম্পর্কে জানার পর যুবলীগ সভাপতি শেখ পরশ পারিবারিকভাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ আওয়ামীলীগের কেন্দ্রিয় নেতাদেরকে বিষয়টি জানান। 
পরে আওয়ামীলগের হাই কমান্ড থেকে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামীলীগকে মোহাম্মদ আলীকে বহিষ্কারের নির্দেশ দেয়া হয়। 
যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সভাপতি ড. সিদ্দিকুর রহমান ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আব্দুস সামাদ আজাদ স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, শহীদ শেখ ফজলুল হক মনি একজন সফল রাজনীতিবিদ, সাংবাদিক, আইনজীবী, সাহিত্যিক, লেখক, মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক, মুজিব বাহিনীর প্রধান, দৈনিক বাংলার বানী ও সাপ্তাহিক সিনেমা পত্রিকার প্রতিষ্ঠাতা, বাংলাদেশ আওয়ামী যুব লীগের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান। ১৯৬০-১৯৬৩ সালে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারন সম্পাদক ও কারাবরণকারী। তার এম এ পাশ করা ডিগ্রীও বাতিল করা হয় আন্দোলনের কারণে। পাকিস্তানের স্বৈরাচার সরকার বিরোধী প্রতিটি আন্দোলনে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে অনেকবার তিনি কারাবরণ করেছেন। এখানে উল্লেখ্য যে ৭৫ এর ১৫ আগষ্টের বঙ্গবন্ধু হত্যার পূর্বেই শেখ মনিকে সস্ত্রীক হত্যা করা হয়েছিলো।  
যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক মোহাম্মদ আলী সিদ্দিকী সম্প্রতি একটি জুম মিটিংয়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পরিবারের সদস্য শেখ ফজলুল হক মনিকে নিয়ে আপত্তিকর বক্তব্য দেয়ায় জন্য সাংগঠনিক শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে কেন্দ্রের নির্দেশে তাকে বহিস্কার করা হয়েছে। 
নিউ ইয়র্কসহ যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামীলীগের যেসব নেতা বিতর্কিত মোহাম্মদ আলী সিদ্দিকীর পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন তাদের বিরুদ্ধেও সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
মামলার বাদী গোপালগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামিলীগের সদস্য হিন্দাল কাদীর বাপ্পা বলেছেন, মোহাম্মদ আলী সিদ্দিকির এই ধরনের বক্তব্য প্রমান করে, দলের মধ্য ঘাপটি মেরে লুকিয়ে থাকা জামাতের এজেন্ট। দেশে প্রচলিত আইন অনুযায়ী ইতিহাস বিকৃতির অপরাধে তার বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। শুধু ইতিহাস বিকৃতি নয় পরোক্ষভাবে বঙ্গবন্ধুকে অপমান করা হয়েছে। আইন অনুযায়ি তার সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি জানান বাপ্পা।
আইন বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ২০১৮ এর আওতায় কেউ যদি ডিজিটাল মাধ্যম ব্যবহার করে মুক্তিযুদ্ধ, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা এবং জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কোনও ধরনের প্রপাগান্ডা চালান, তাহলে ১৪ বছরের জেল ও এক কোটি টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে। ২৯ ধারায় বলা হয়েছে, মানহানিকর কোনও তথ্য দিলে তিন বছরের জেল ও পাঁচ লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে।  
২৫ ধারায় বলা হয়েছে, কেউ যদি ওয়েবসাইট বা ডিজিটাল মাধ্যমে আক্রমণাত্মক ভয়ভীতি দেখায়, তাহলে তাকে তিন বছরের জেল ও তিন লাখ টাকা জরিমানাসহ উভয় দণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে। ৩১ ধারায় বলা হয়েছে, ডিজিটাল মাধ্যম ব্যবহার করে কেউ অরাজকতা সৃষ্টি করলে সাত বছরের জেল ও পাঁচ লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে।
বাংলাদেশের ৬৪টি জেলায়ও বিতর্কিত মোহাম্মদ আলী সিদ্দিকীর বিরুদ্ধে মামলার প্রস্তুতি চলছে বলে কেন্দ্রিয় যুবলীগের একটি সূত্রে জানা গেছে।
এ ব্যাপারে মোহাম্মদ আলী সিদ্দিকীর সাথে একাধিকবার তার ফোনে যোগাযোগ করেও তার বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।