logo
আপডেট : 2 October, 2020 01:47
ছাত্রাবাসের লোমহর্ষক ঘটনা তুলে ধরলেন স্বামী

ছাত্রাবাসের লোমহর্ষক ঘটনা তুলে ধরলেন স্বামী

অমিতা  সিনহা : 
ছুটির দিন। একদিকে মহামারি করোনায় বন্দি জীবন আর অন্যদিকে একটু প্রকৃতির  সতেজ প্রাণবন্তন প্রাণের খোঁজে তরুণ দম্পতি ঘুঁরতে গিয়েছিল প্রাইভেট কারে যোগে শ্রীহট্টের ঐতিহ্যবাহী মুরারি চাঁদ (এমসি) কলেজ প্রাঙ্গণে। উদ্দেশ্য ছিল ছোট ছোট টিলার ঘেঁরা প্রাকৃতিক পরিবেশের সংস্পর্শ পাওয়া। অথচ ভাগ্য-বিড়ম্বনায় ঘোর অন্ধকারে লোমহর্ষক ঘটনা ঘটে যায়।

সেদিনের ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতা এভাবে তুলে ধরলেন নির্যাতনের শিকার গৃহবধূর স্বামী। 

গত ২৫ সেপ্টেম্বর সিলেটের টিলাগড়ের অবস্থিত মুরারি চাঁদ(এমসি) কলেজের ছাত্রাবাসের ক্যাম্পাসে বিভীষিকাময় যাওয়া বলতে গিয়ে কাঁদতে কাঁদতে থমকে যায় দক্ষিণ সুরমার বাসিন্দা  তরুণ।  

তিনি বলেন, গত শুক্রবার (২৫ সেপ্টেম্বর) বিকেলের দিকে  নিজস্ব প্রাইভেটকার যোগে হযরত শাহপরাণ (র.) এর মাজার জিয়ারত করতে যাই পত্নীকে নিয়ে। জিয়ারত শেষে সন্ধ্যার দিকে বাড়ি ফেরার উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেই। বাড়ি ফেরার পথে এমসি কলেজের ক্যাম্পাসও ঘুঁরে দেখছিলাম। এক পর্যায়ে কলেজের মূল ফটকের সামনে পাকা রাস্তার উপর গাড়ি রেখে একটা সিগারেট কেনার জন্য গাড়ি  থেকে নেমেই একটু অদূরে যেতেই একদল যুবক আমার পত্নীকে ঘিরে বাজে মন্তব্য করতে থাকে।  আমি তা দেখে ছুটে এসে প্রতিবাদ করতেই ওই যুবকেরা আমাকে মারপিট করতে থাকে।  আর আমাদের দুইজনকে বলে উঠে গাড়ীতে উঠতে।  নিরুপায় হয়ে আমরা দুইজন গাড়ির  পিছনের সীটে উঠে পড়লে, তারা দুই পাশ থেকে দুইজন যুবক আমাদের পাশের সীটে বসে পড়ে।  আর সামনের সীটে আরও কয়েকজন যুবক আমাদের গাড়িটি ড্রাইভ করে এমসি কলেজের ছাত্রাবাসের ৫ম তলা বিশিষ্ট ভবনের দক্ষিণ পূর্ব খালি জায়গায় গাড়িটি  দাঁড়িয়ে দেন।  

তিনি বলেন, ওই সময় আরও বেশ কয়েকজন যুবক মোটরসাইকেল যোগে ছাত্রাবাসে ক্যাম্পাসের ওই স্থানে চলে আসে।  তখন দুই জন যুবক আমার মানিব্যাগ থেকে দুই হাজার টাকা নিয়ে নেয়।  আর আমার পত্নীর পরনে এক জোড়া স্বর্ণের কানের দুল ও  স্বর্ণের  গলার চেইন মিলে প্রায় ৬৫হাজার টাকার অলঙ্কার ছিনিয়ে নেন তারা।  ওই সময় আমার পত্নীর চিৎকার শুরু করতেই তারা তার মুখ চেঁপে ধরে। এক পর্যায়ে আমার পত্নীকে গাড়িতে রেখে আমাকে নামিয়ে দিয়ে ছাত্রাবাসের ৭- নং  ব্লকের  পঞ্চম তলার ভবনে পশ্চিম পাশে গাড়িটি নিয়ে যায় তারা।  সেই গাড়িতেই .....

‌'আমি ওকে বাঁচানো চেষ্টা করছিলাম।  কিন্তু যুবকগুলো আমাকে বেধড় মারপিট করে, আটকিয়ে রাখে। পরে যুবকগুলো আমাকে বলে গাড়ি রেখে আমার পত্নীকে নিয়ে চলে যেতে আর ৫০হাজার টাকা চাঁদা দিয়ে তাদের কাছ থেকে গাড়িটি  নিতে। এরপর আমি তাৎক্ষণিক পত্নীকে নিয়ে পায়ে হেঁটে এমসি কলেজের মূলফটকে চলে আসি। এক পর্যায়ে ওই স্থান থেকে একটি সিএনজিতে উঠে শিবগঞ্জ পয়েন্টে আসতে আসতেই আমি পুলিশের কাছে খবর দেই।  তারপর ঘটনাটি পুলিশকে জানানোর জন্য টিলাগড় পয়েন্টের দিকে রওনা দেই।  এই সময় আমার কাছে কোনো টাকা -পয়সা না থাকায়  সিএনজি অটোরিকশা চালকের কাছ থেকে একশত টাকা ধার নেই।  তখন ওই সিএনজি চালক আমাদের সহযোগীতা করার আশ্বাস দেন।  তখন আমরা দু’জন সিএনজি অটোরিকশাতে বসেই  সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনারের অফিসিয়াল ফোন নাম্বারে কল করে পুরো ঘটনা জানাই।  

'কিছুক্ষণ পরেই পুলিশ কমিশনারের নির্দেশক্রমে শাহপরাণ থানার সহকারী কমিশনার আমাকে ফোন দেন এবং ঘটনাস্থলে  এসে পুলিশ  ঘটনার বিবরণ শুনেন।'

তিনি আরও বলেন, আমরা যখন এমসি কলেজের মূলক ফটকের সামনে একটি রেস্টুরেন্টে বসে পুলিশের জন্য অপেক্ষায় ছিলাম, তখন সাবেক ছাত্রলীগের নেতা বিহিত গুহ চৌধুরী বাবলা যাচ্ছিল।  তখন আমার স্ত্রীর কান্না শুনে তিনি এসে  সেখানে দাঁড়ান এবং ঘটনার বিস্তারিত শুনেন।  তারপর তিনি সহ আমরা দুইজন এমসি কলেজের ছাত্রাবাসে গেইটে যাই।  ঠিক ওই সময় শাহপরান থানার সহকারী  পুলিশ কমিশনার (এসি) মাইনুল আফসার  ও  ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল কাইয়ুম চলে আসে।  এক পর্যায়ে ঘটনাস্থলের  উপস্থিতি পুলিশ  হোস্টেলে প্রবেশের জন্য কলেজ কর্তৃপক্ষের অনুমতির জন্য অপেক্ষা করেন।  কিন্তু ওই সময় শাহপরাণ থানার পুলিশের এস.আই সোহেলকে নিয়ে সাবেক ছাত্রলীগ নেতা বাবলা ভেতরে ঢুকে পড়েন।  ঢোকার কিছু সময়ের মধ্যে দেখা যায়, যারা আমাদের অন্যায়ভাবে মারপিট করেছিল। একটু আগের অপরাধীরা সবাই ক্যাম্পাসের ভেতরেই ছিল।  

'পরে কলেজ কর্তৃপক্ষের অনুমতি সাপেক্ষে পুলিশ ছাত্রাবাসের ভেতরে ঢুকে ৭ নং ব্লক থেকে আমার গাড়িটি  চিহ্নিত করি। এরপর ওই ছাত্রাবাসের দ্বিতীয় তলা থেকে একজন যুবকে চিহ্নিত করে শনাক্ত করি আমি।  তারপর তার কাছ থেকে অন্যান্য যুবকদেরকেও  চিহ্নিত করতে সক্ষম হয় আমি।'  

তিনি আরও বলেন, চিহ্নিত যুবকদের পরিচয় খোঁজতে গিয়ে দেখা যায় ওই দুষ্কৃত একদল যুবকদের মধ্যে  ৬জন ছিলো সিলেট ছাত্রলীগের কর্মী।  এসময় ঘটনাস্থল থেকে ওই দুষ্কৃত যুবকদের একটি মোটরসাইকেল উদ্ধার করেন  পুলিশ। 

পরে রাত ১২টা দিকে পুলিশের সহযোগীতায় আমার স্ত্রীকে নিয়ে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা শেষ করে শাহপরাণ থানায় গিয়ে ছাত্রলীগের ৬জন যুবকের নামসহ আরও অজ্ঞাত ৩জনের বিরুদ্ধে নিজে বাদী হয়ে মামলা দায়ের  করেন বলে জানান তিনি। 

দেশের আপামর জনতার কাছে  ও প্রধানমন্ত্রীর কাছে সুস্থ্য বিচারের দাবি জানিয়েছেন তিনি। 

এই ঘটনার এ পর্যন্ত পর পুলিশ ও র‌্যাব-৯ এর তৎপরতায় আটজনকে গ্রেপ্তার করে তাদের সবাইকে আদালতের নির্দেশে ৫দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়।  আসামিরা হলো- সাইফুর রহমান, রাজন আহমেদ, আইনুদ্দিন আইনুল, মাহমুদুর রহমান রনি, রবিউল ইসলাম, অর্জুন লস্কর , তারেকুল ইসলাম তারেক ও মাহফুজুর রহমান মাছুম।