logo
আপডেট : 20 December, 2020 23:24
আমরা নজরুল ইসলাস বাবুর দালাল

আমরা নজরুল ইসলাস বাবুর দালাল

॥ তোফাজ্জল লিটন ॥ 

 

একটি বাংলাদেশ তুমি জাগ্রত জনতার । সারা বিশ্বের বিস্ময় তুমি আমার অহংকার। এই গানের কথা লিখে বিজয়ের মাসে অনেকেই স্ট্যাটাস দিচ্ছেন। শুধু বিজয়ের মাসে না বিশ্বব্যাপী বাংলাদেশের কোনো গৌরবময় অর্জনেও আমরা মনের ভাব প্রকাশ করতে এই গানের কথার আশ্রয় নিয়ে থাকি। দেশের প্রতি মমতা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা প্রকাশ করতে এই গান ছাড়াও আমরা বাজাই ‘সব কটা জানালা খুলে দাও না অথবা আমায় গেঁথে দাও না মাগো একটা পলাশ ফুলের মালা। কে এই অবিনশ্বর এই গান লিখেছেন ? তাঁর নাম জানার কথা একবারও মনে হয়নি আপনার ? হলফ করে বলতে পারি বেশির ভাগ মানুষ জানেন না উপরের তিনটি গানের স্রষ্টার নাম । অমর গানগুলো লিখেছেন গীতিকবি ও মুক্তিযোদ্ধা নজরুল ইসলাম বাবু।

একুশে ফেব্রুয়ারি, ছাব্বিশে মার্চ, ষোলোই ডিসেম্বরের জাতীয় থেকে স্থানীয় যেকোনো ধরনের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এ গানগুলো ছাড়া পূর্ণতা পায় না। অবিশ্বস্য হলেও সত্য তাঁর মতো কিংবদন্তিতুল্য গীতিকবির কোনো রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি মেলেনি আজও। অবিশ্বাস্য বল্লাম এজন্য যে, বেশিরভাগ মানুষ বিশ্বাস করতে চায় না তিনি এখন পর্যন্ত স্বার্ধনতা বা একুশে পদকের মতো রাষ্ট্রীয় কোনো পদক পান নাই।

স্বাধীনতাকামী তরুণ নজরুল ইসলাম বাবু ভারত থেকে যুদ্ধের ট্রেনিং নিয়ে দেশের স্বাধীতার জন্য সম্মুখ সমরে লড়েছেন। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে ১১ নম্বর সেক্টরের যুদ্ধের অবসরে তুরার পাহাড়ে লিখেছেন দেশের জন্য গান। কলম ও অস্ত্র দুটোই সমান দক্ষতায় চালাতেন বাবু। এমন মহৎ মানুষকেও কী রাষ্ট্র ভুলে যায় ? যদি ভুলে না গিয়ে থাকে তবে কোনো স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তীর প্রাককালেও কালজয়ী দেশেল গানের স্রষ্টা ও মুক্তিযোদ্ধা বাবুকে রাষ্ট্রিয় কোনো পদকে ভূষিত করা হয় নি ?

১৯৪৯ সালের ১৭ জুলাই জামালপুর জেলার মাদারগঞ্জের চরনগর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন নজরুল ইসলাম বাবু। বাবা বজলুল কাদের ছিলেন স্কুলশিক্ষক। মা রেজিয়া বেগম গৃহিণী। বাবা বজলুল কাদেরের সংগীতের প্রতি অনুরাগ ছোটবেলা থেকেই বড় সন্তান নজরুল ইসলাম বাবুকে প্রভাবিত করে। চার ভাই, পাঁচ বোনের মধ্যে বাবু ছিলেন সবার বড়। স্থানীয় স্কুলে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করে মামার কর্মস্থল বরিশালে চলে যান।

বরিশাল বি এম স্কুল অ্যান্ড কলেজে মাধ্যমিক এবং পরে জামালপুরের আশেক মাহমুদ কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক ও বিএসসি ডিগ্রি নেন। শাহীন আক্তার এর সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন ১৯৮৪ সালে। ১৯৯০ সালে ১৪ সেপ্টেম্বর বাবু মাত্র ৪১ বছর বয়সে মারা যান। ১৯৯১ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত পদ্মা মেঘনা যমুনা চলচ্চিত্রের গান রচনার জন্য তিনি শ্রেষ্ঠ গীতিকার হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন।

এই কলাম লেখক তাঁর ব্যাক্তিগত ফেইসবুক থেকে উপরের লেখাটি ১১ ডিসেম্বর প্রকাশ করার পর ( https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=10224274592481587&id=1506618228 ) নজরুল ইসলাম বাবুকে ভালোবেসে প্রচুর মানুষ তার দাবির সঙ্গে একাত্বতা প্রকাশ করে। একাত্তর টিভির যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ প্রতিনিধি শামীম আল আমিন লেখাটি ৭১ টিভি কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষন করার। একাত্তর টিভি এই কলাম লেখকের লেখাটি হুবহু পাঠ করে এবং এই লেখার উপর ভিত্তি করে ১২ মনিটের একটি পরিবেশনা প্রচার করে ১৭ ডিসেম্বর (https://www.facebook.com/ekattor.tv/posts/4977373059001949 ) রাকিব হাসানের সঞ্চালনায় সেখানে যুক্ত হয়েছিলেন সাংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ, সুরকার ও সঙ্গীত পরিচালক শেখ সাদী খান এবং নজরুল ইসলাম বাবুর স্ত্রী শাহীন আক্তার।

চোখে জল নিয়ে কান্না জড়ানো স্বরে শাহীন আক্তার ক্ষোভ ও আশার কথা বলছিলেন, চাইলে তিনি চাকরি করতে পারতেন। তিনি দেশ স্বাধীন করে একটি প্রেস দিয়েছিলেন। সেখান থেকেও ছোট কাগজ বের করবেন। পরে সব কিছু বাদ দিয়ে গানেই ঝুকে পরলেন। গানই ছিলো তার সম্বল। তাঁর মৃর্তুর এতো বছর পরেও রাষ্ট্র তাকে যোগ্য সম্মান প্রাদন করেন নি। রাস্ট্রের পক্ষ থেকে তাঁকে একদিন সম্মানিত করা হবে এই আশায় এখনো বেঁচে আছি।

শেখ সাদী খান বলেন, আমরা তো চাই তাকে রাস্ট্রের সবোর্চ্চ সম্মাননা পদক দেওয়া হোক। আমরা চাইলে তো কিছু হবে না। রাষ্টকে চাইতে হবে। আমি রাষ্ট্রের উপর চেড়ে দিলাম এ গীতিকার ও স্বসস্ত্র মুক্তিযোদ্ধার সম্মাণ।

নজরুল ইসলাম বাবুর লেখা একটি বাংলাদেশ তুমি জাগ্রত জনতার বাংলাদেশ গানটির গীতিকার হিসেবে অনেক জায়গায় দেখেছি ভুল করে আরেক মহান গীতিকার নঈম গহরের নাম লেখা । নঈম গহরের কন্যা অজান্তা গহর বলেছেন, বাবার লেখা সব গান আমার কাছে সংরক্ষিত আছে এ গানটি বাবার লেখা নয়।

সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ খবর রাখেন নজরুল ইসলাম বাবু ও তার পরিবারের। বাবাুর দুই মেয়ে নাজিয়া ও নাফিয়ার কথা পর্যন্ত তিনি জানেন। বলছিলেন বাবুর আদ্যোপান্ত জীবনী। মহৎ কোনো মানুষকে পদক পাওয়া না পাওয়া দিয়ে চুড়ান্ত বিচার ঠিক না বলে মনে করেন কে এম খালিদ। আশ্বাস দিয়ে তিনি বলেন, জাতি তাকে গানের মাধ্যমে স্মরণ করে যাচ্ছে। রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে বিভিন্ন ভাবে তাঁর নাম প্রচারের চেষ্টা আমরা করছি। কালজয়ী গানের গীতিকবি ও বীর মুক্তিযোদ্ধাকে কীভাবে সম্মানিত করা যায় সেই চেষ্টা আমরা করছি।

নজরুল ইসলাম বাবুর জন্ম জেলে জামালপুরে তাঁর একটি ভাস্কর্য স্থাপন করা যায় কী না একটু ভেবে দেখবেন জামাল পুরের মানুষ অথবা প্রশাসন । হাওয়ায় ভাসে বাংলাদেশে দালাল ছাড়া কোনো কাজ হয় না। ভাস্কর্য স্থাপন অথবা রাষ্ট্রীয় পদক তো অনেক দূরের বিষয়। আমি বিশ্বাস করি সব কিছু এখনো দালালদের খপ্পরের চলে যায় নি। নজরুল ইসলাম বাবুর স্বাধীনতা পদক বা একুশে পদক পেতে যদি দালালের প্রয়োজন হয়; তবে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী বাংলাদেশের নাগরিক সবাই আমরা নজরুল ইসলাম বাবুর দালাল।

তোফাজ্জল লিটন : নাট্যকার ও সাংবাদিক।