বিশেষ প্রতিনিধি: আবারও অভিশংসিত হলেন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসের সবচেয়ে বিতর্কিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। কয়েক ঘণ্টার বিতর্ক শেষে দেশটির সংসদের নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি পরিষদে বুধবার তাকে ইমপিচমেন্ট করা হয়। ইতিহাসে প্রথম কোনো প্রেসিডেন্টকে দু'বার ইমপিচমেন্ট করা হলো। যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক ইতিহাসের সবচেয়ে কলঙ্কিত প্রেসিডেন্ট বিদায় নিচ্ছেন ২০জানুয়ারি।
গত সপ্তাহে নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের বিজয়কে কংগ্রেসের যৌথ অধিবেশনে স্বীকৃতি দেয়ার সময় ক্যাপিটল ভবনে নজিরবিহীন সশস্ত্র হামলা চালান ট্রাম্প সমর্থকেরা। ওই দাঙ্গায় উসকানি দেয়ার অভিযোগে বুধবার তাকে অভিশংসনের পক্ষে ভোট দিয়েছেন প্রতিনিধি পরিষদের সদস্যরা। যাতে তার নিজ দল রিপাবলিকান পার্টির সদস্যদেরও সায় ছিল।
মেয়াদ শেষে দায়িত্ব হস্তান্তরের মাত্র এক সপ্তাহ আগে ট্রাম্পকে এই লজ্জাজনক পরিণতি ভোগ করতে হলো। এবার ট্রাম্পের দল রিপাবলিকান পার্টির ১০জন আইনপ্রণেতাও অভিশংসনের পক্ষে ভোট দিয়েছেন। প্রস্তাবের পক্ষে ভোট পড়েছে ২৩১ এবং বিপক্ষে ১৯৭টি। সংখ্যাগরিষ্ঠতার জন্য প্রয়োজন ছিল ২১৭ ভোট।
প্রতিনিধি পরিষদে ট্রাম্প অভিশংসিত হলেও তিনি স্বপদে বহাল থাকবেন। সিনেটে প্রস্তাবটি পাস না হওয়ায় তাকে পদ ছাড়তে হচ্ছে না। ২০ জানুয়ারির আগে সিনেট অধিবেশন বসছে না বলে জানিয়েছেন সিনেট নেতা মিচ ম্যাককনেল। সেদিনই মেয়াদ শেষ হবে ট্রাম্পের এবং অভিষেক হবে জো বাইডেনের।
ট্রাম্পকে অভিশংসনের জন্য বুধবার সকালে প্রতিনিধি পরিষদের সদস্যরা যখন পার্লামেন্ট ভবনে প্রবেশ করেন, তখন সেখানে ন্যাশনাল গার্ডের সৈন্যরা ঘুমাচ্ছিলেন। গত সপ্তাহে সেখানে সহিংসতার পর তাদের মোতায়েন করা হয়েছে। আমেরিকায় গৃহযুদ্ধের পর এই প্রথম ক্যাপিটল ভবনে সেনা মোতায়েন করা হলো। এদিকে ট্রাম্প বুধবার হোয়াইট হাউসে নিভৃতে কাটিয়েছেন। তবে এক বিবৃতিতে সমর্থকদের শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, তিনি কোনো সহিংসতা দেখতে চান না।
প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি বলেন, 'কয়েক মাসের ব্যবধানে আবারও ট্রাম্পকে অভিশংসন করার জন্য সমবেত হতে গিয়ে আমার হৃদয় ভেঙে যাচ্ছে। তবে আমরা ইতিহাসকে এড়িয়ে যেতে পারি না। আসুন, আমরা আমাদের দায়িত্ব পালন করি এবং আমাদের জাতির আস্থাকে সম্মান করি। ট্রাম্প জাতির জন্য স্পষ্ট ও বর্তমান হুমকি।'
২০১৯ সালেও ট্রাম্পকে অভিশংসন করেছিল প্রতিনিধি পরিষদ। পরে রিপাবলিকান নিয়ন্ত্রিত সিনেটে তাকে অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। যুক্তরাষ্ট্রে এর আগে ট্রাম্প ছাড়াও বিল ক্লিনটন ও অ্যান্ড্রু জনসনকে অভিশংসন করেছিল প্রতিনিধি পরিষদ। সিনেটে তাদেরও খালাস দেওয়া হয়। সিনেটে প্রেসিডেন্টকে দোষী সাব্যস্ত করতে দুই-তৃতীয়াংশ সদস্যের সমর্থন প্রয়োজন। যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিদলীয় ব্যবস্থায় সেটা প্রায় অসম্ভব ব্যাপার।
ক্যাপিটল ভবনে সহিংসতায় উস্কানি ও সরকারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহের অভিযোগে ট্রাম্প এবার সংসদের উচ্চকক্ষ সিনেটেও শাস্তি পেতে পারেন। অবশ্য ২০ জানুয়ারি তার মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে সিনেটে শুনানি হওয়ার সম্ভাবনা নেই। ম্যাককনেল বলেছেন, সিনেটের জরুরি অধিবেশন ডাকতে ১০০ সদস্যের সবার সম্মতি প্রয়োজন।
তবে ট্রাম্প ক্ষমতা থেকে বিদায় নিলেও তার বিচার শুরু হতে পারে। তখন ট্রাম্প ক্ষমতায় না থাকায় তাকে অভিশংসন করা হবে না। কিন্তু তাকে রাজনীতিতে নিষিদ্ধ এবং সাবেক প্রেসিডেন্ট হিসেবে যেসব সুবিধা পাওয়ার কথা, তা কেড়ে নেওয়া হতে পারে। এবার রিপাবলিকান দলের ১৭ জন সিনেটর প্রস্তাবে সমর্থন দিলেই প্রস্তাবটি পাস হতে পারে। নিউইয়র্ক টাইমস বলছে, ২০ জনের মতো রিপাবলিকান সিনেটর ট্রাম্পের বিরুদ্ধে প্রস্তাবে সমর্থন দিতে পারেন।
সিনেটের বর্তমান প্রধান এবং শীর্ষস্থানীয় রিপাবলিকান নেতা মিচ ম্যাককনেল ঘনিষ্ঠজনদের বলেছেন, ট্রাম্পের বিরুদ্ধে অভিশংসন প্রস্তাবে তিনি 'খুশি'। গত চার বছর ট্রাম্পকে অব্যাহত সমর্থন দিয়ে গেছেন ম্যাককনেল। এখন অনেক রিপাবলিকানই মনে করছেন, ট্রাম্পকে রাজনীতি থেকে বিদায় করা তাদের নিজেদের স্বার্থেও বেশি জরুরি। কারণ ট্রাম্প থাকলে তাদের ভবিষ্যৎ রাজনীতি হুমকিতে পড়তে পারে। শুধু ট্রাম্পের কারণে জর্জিয়ার দুটি সিনেট আসনের পুনর্নির্বাচনে রিপাবলিকান প্রার্থী পরাজিত হওয়ায় সিনেটে সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারিয়েছে দলটি। রিপাবলিকানরা ট্রাম্পকে এখন বোঝা মনে করছেন। ট্রাম্প এর আগেই ইঙ্গিত দিয়েছেন, তিনি আগামী নির্বাচনেও প্রার্থী হতে আগ্রহী।
প্রতিনিধি পরিষদে রিপাবলিকান দলের ছয় সদস্য ট্রাম্পকে অভিশংসন করার পক্ষে ভোট দিয়েছেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছেন সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট ডিক চেনির মেয়ে লিজ চেনি। এর আগে সিনেটর ম্যাককনেল বলেছেন, ট্রাম্পকে অভিশংসন করা হলে তাকে রাজনীতি থেকে বিদায় করা সহজ হবে। তাকে অভিশংসনের প্রস্তাবে প্রত্যেক ডেমোক্র্যাট সদস্যই ভোট দেন বলে মনে করা হচ্ছে। এবার রিপাবলিকান দলের পক্ষ থেকে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে ভোট না দিতে দলীয় আইনপ্রণেতাদের প্রতি কোনো আহ্বান জানানো বা চাপ দেওয়া হয়নি।
যুক্তরাষ্ট্রে সাবেক কোনো প্রেসিডেন্টের বিচার সিনেটে হয়নি। কোনো কোনো সংবিধান বিশেষজ্ঞ বলছেন, সাবেক কোনো প্রেসিডেন্টের বিচার সিনেট করতে পারে না। এর আগে সিনেটে যারা বিচারের মুখোমুখি হয়েছিলেন তারা সবাই ছিলেন ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্ট। সূত্র: সিএনএন।