logo
আপডেট : 1 February, 2021 07:10
মিয়ানমারে সেনা অভ্যুত্থান: অং সান সু চি ও প্রেসিডেন্ট আটক

মিয়ানমারে সেনা অভ্যুত্থান: অং সান সু চি ও প্রেসিডেন্ট আটক

অং সান সু চি-ছবি সিএনএন থেকে সংগৃহিত

মেইল ডেস্ক:

মিয়ানমারের ক্ষমতাসীন দলের প্রধান অং সান সু চি এবং দেশটির প্রেসিডেন্ট উইন মিন্ট কে আটক করেছে সেদেশের সেনাবাহিনী। ন্যাশনাল লীগ ফর ডেমোক্রেসি (এনএলডি)-র মুখপাত্র ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেছেন, দলটির কয়েকজন শীর্ষ নেতাকেও আটক করা হয়েছে। রাজধানী নিপিডের সাথে টেলিফোন এবং ইন্টারনেট লাইনসহ সব ধরনের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে।

বিবিসি জানিয়েছে, রাজধানী নিপিড এবং প্রধান শহর ইয়ানগনের রাস্তায় বিপুল সংখ্যক সেনা সদস্য টহল দিচ্ছে।

কয়েকদিন ধরে মিয়ানমারে যে সামরিক অভ্যুত্থানের আশংকা দেখা দিয়েছিল সেটাই বাস্তব রূপ দেখা গেল।

গত বছর নভেম্বরের নির্বাচনে অং সান সুচির এনএলডি সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করে। কিন্তু সেনাবাহিনী নির্বাচনে জালিয়াতির অভিযোগ তোলে। সোমবার নব-নির্বাচিত সংসদের প্রথম বৈঠক হবার কথা, কিন্তু সেনাবাহিনী অধিবেশন স্থগিত করার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে আসছিল।

বিবিসি জানিয়েছে, সৈন্যরা দেশের বিভিন্ন প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রীর বাসায় গিয়ে তাদের আটক করে নিয়ে যায় বলে পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছে। এনএলডি মুখপাত্র মিও নয়েন্ট সংবাদ সংস্থা রয়টার্সকে জানায়, প্রেসিডেন্ট মিন্ট এবং অন্যান্য নেতাদের সোমবার ভোরে আটক করা হয়।

এর আগে প্রায় দুই দশক গৃহবন্দী থাকার পর প্রকাশ্যে রাজনীতিতে আসেন আধুনিক মায়ানমারের জাতির জনক অং সান এর কন্যা সু চি।

অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় হতে স্নাতক অর্জন করা সু চি ১৯৯০ সালের নির্বাচনে এনএলডি সংসদের ৮১% আসন পেলেও সেনাবাহিনী ক্ষমতা হস্তান্তরে অস্বীকৃতি জানায় যা আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে হৈ চৈ ফেলে দেয়। নির্বাচনের আগে থেকেই সু চিকে গৃহবন্দী করে রাখা হয়। ১৯৮৯ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত ২১ বছরের মধ্যে ১৫ বছরই তাকে গৃহবন্দী অবস্থায় কাটাতে হয়। এসময় তিনি বিশ্বের আলোচিত রাজবন্দীদের একজন হয়ে উঠেন।

২০১৫ সালের জাতীয় নির্বাচনে তার দল ভূমিধ্বস বিজয় অর্জন করে, অ্যাসেমব্লি অব দি ইউনিয়নের (সংসদ) ৮৬% আসন অর্জন করে। সু চির প্রয়াত স্বামী ও সন্তানেরা বিদেশি নাগরিক হওয়ায় সংবিধান অনুসারে তিনি রাষ্ট্রপতি হতে পারবেন না। তাই তিনি নবপ্রতিষ্ঠিত রাষ্ট্রীয় উপদেষ্টা পদটি গ্রহণ করেন যা কিনা প্রধানমন্ত্রী বা সরকারপ্রধানের সমান।

গণতন্ত্র ও মানবতার পক্ষে সংগ্রামের জন্য ১৯৯১ নোবেল শান্তি পুরস্কার পাওয়া মিয়ানমারের এই নেত্রি রাখাইনে রোহিঙ্গা মুসলিম গণহত্যার জন্য বিশ্ব ব্যাপি তার ভূমিকা তীব্রভাবে সমালোচিত। বিশ্ববিখ্যাত অনেক ইউনিভার্সিটি তাকে দেয়া পুরুষ্কার প্রত্যাহার করে নেয়। সেনাবাহিনীর নির্যাতন আর গণহত্যার শিকার হয়ে মিয়ানমারের রাখাইন থেকে বিতাড়িত হয়ে ১০লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা মুসলিম বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। শুরু থেকে রোহিঙ্গাদের উপর নির্যাতন ও গণহত্যার কথা অং সান সুচি অস্বীকার করলেও সেনাবাহীনির দু’জন সদস্য জেনেভায় আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে তা স্বীকার করে। এরপর থেকে বিতর্কিত হয়ে উঠে সাবেক এই নোবেল জয়ি নেত্রি।

সোমবার সু চি ও সেদেশের রাষ্ট্রপতি আটক হবার পর সেনা অভ্যুত্থান দীর্ঘস্থায়ী হবে বলে মনে করছেন আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।