logo
আপডেট : 23 May, 2021 17:05
জামিনে মুক্তি পেলেন সাংবাদিক রোজিনা ইসলাম
ঢাকা অফিস

জামিনে মুক্তি পেলেন সাংবাদিক রোজিনা ইসলাম

প্রথম আলোর জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক রোজিনা ইসলাম জামিনে মুক্তি পেয়েছেন। রোববার বিকাল সোয়া ৪টার দিকে গাজীপুরের কাশিমপুর মাহিলা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে তিনি মুক্তি পান। 

এর আগে সকালে ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট বাকী বিল্লাহর ভার্চুয়াল আদালত জামিনের আদেশ দেন। পাঁচ হাজার টাকা মুচলেকায় এবং পাসপোর্ট দাখিলের শর্তে জামিনের আদেশ দেওয়া হয়। পরে জামিনের কাগজপত্র কারাগারে পৌঁছালে তা যাচাই-বাছাই ও আইনি প্রক্রিয়া শেষে রোজিনাকে মুক্তি দেওয়া হয়। কারা ফটকে তাকে ফুল দিয়ে বরণ করেন স্বজনরা। মুক্তির পর রোজিনাকে চিকিৎসার জন্য একটি বেসরকারি হাসপালে নেওয়া হয়। এ সময় সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি সাংবাদিকতা চালিয়ে যাওয়ার কথা জনান। জামিন হওয়ায় প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন রোজিনার পরিবারের সদস্যরা।

সকাল ১০টা ৩৫ মিনিটে ভার্চুয়ালি আদালতে যুক্ত হন রোজিনা ইসলামের আইনজীবীরা ও রাষ্ট্রপক্ষ। শুনানির শুরুতে রাষ্ট্রপক্ষের প্রধান পাবলিক প্রসিকিউটর আবদুল্লাহ আবু বলেন, মামলাটি আদেশের জন্য আছে। আগের তারিখে বলা হয়েছিল রাষ্ট্রপক্ষ থেকে কিছু ডকুমেন্ট উপস্থাপন করা হবে। ইতোমধ্যে তদন্ত কর্মকর্তা কিছু তথ্য দিয়েছেন। মামলাটি স্পর্শকাতর এবং আসামি হলেন মহিলা। যদি সে (রোজিনা) আদালতে তার পাসপোর্ট দাখিল করেন এবং বিদেশে যাতে যেতে না পারেন, সেই শর্তে অন্তর্বর্তীকালীন জামিন দেওয়া যেতে পারে। এতে রাষ্ট্রপক্ষ থেকে আমাদের কোনো আপত্তি থাকবে না। অপরদিকে রোজিনা ইসলামের আইনজীবী এহসানুল হক সমাজী বলেন, ‘প্রসিকিউশনের পক্ষ থেকে যে ডকুমেন্ট দাখিল করেছে, সে বিষয়ে বিস্তারিত কোনো তথ্য নেই। পাবলিক প্রসিকিউটর পাসপোর্ট জমা দেওয়ার শর্তে জামিনের কথা বলেছেন। আইনের দৃষ্টিতে শর্তসাপেক্ষে জামিন কোনো জামিন নয়। তদুপরি আইন ও আদালতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে পাবলিক প্রসিকিউটর যে প্রস্তাব দিয়েছেন, সেই প্রস্তাবে আমাদের কোনো দ্বিমত নেই।’

রোজিনা ইসলামের পক্ষে আইনজীবী আমিনুল গনি টিটো, জ্যোতির্ময় বড়ুয়া ও প্রশান্ত কুমার কর্মকার শুনানিতে ছিলেন। অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর হেমায়েত উদ্দিন খান হিরণ। উভয় পক্ষের শুনানি শেষে আদালত রোজিনা ইসলামের জামিনের ওই আদেশ দেন।

আদালত আদেশে বলেন, আসামির জামিন পাঁচ হাজার টাকা বন্ডে (মুচলেকা) মঞ্জুর করা হলো। আসামিকে তার পাসপোর্ট আদালতে দাখিল করার নির্দেশ দেওয়া হলো। আদালত আরও বলেন, ‘গণমাধ্যম গণতন্ত্রের অন্যতম অনুষঙ্গ। গণমাধ্যমই অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বশীল আচরণ করার ক্ষেত্রে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। সুতরাং কোর্ট এবং গণমাধ্যম কখনোই একটি আরেকটির জন্য বাধা হিসাবে কাজ করে না। কোর্ট সহায়ক শক্তি হিসাবে কাজ করে। সুতরাং আমরা আশা করব, উনি (রোজিনা ইসলাম) ওনার দায়িত্ব পালনে আরও সচেতন থাকবেন।’

আদেশের পর রোজিনা ইসলামের স্বামী মনিরুল ইসলাম মিঠু সাংবাদিকদের বলেন, ‘এই জামিনের জন্য সর্বপ্রথম প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। বাংলাদেশের সব সাংবাদিক ভাইয়ের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি তাদের প্রতি, যারা গত পাঁচ-ছয় দিন খেয়ে না খেয়ে আন্দোলন করেছেন। এছাড়া কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি আইনজীবীদের প্রতি।’

জামিন আদেশের পর আদালত প্রাঙ্গণে প্রথম আলোর উপসম্পাদক লেখক আনিসুল হক বলেন, ‘সংবাদপত্রের স্বাধীনতা সুশাসন নিশ্চিত করে। দুর্নীতি কমায়। জনগণের তথ্য জানার মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করে। আমরা সব সময়ই ন্যায়বিচার পাওয়ার ওপর আস্থা রাখি। এখন জামিন হলো, এর পরবর্তী পর্যায়ে রোজিনার পক্ষে আইনানুগ প্রতিকার পাওয়ার জন্য শেষ পর্যন্ত লড়াই করে যাব। আর মামলার যদি ম্যারিট না থাকে, তাহলে অযথা হয়রানি করার জন্য মামলাটি চালিয়ে যাওয়ার কোনো মানে হয় না। সারা বাংলাদেশের সাংবাদিকদের উত্তেজিত করাটাও বুদ্ধিমানের কাজ হবে না। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের লোক হিসাবে আমি সরকারকে পরামর্শ দেব, এ ব্যাপারটিকে অনেক জটিল না করে এখনই এটাকে ফয়সালা করে ফেলা উচিত। মামলাটি প্রত্যাহার করা হোক। রোজিনা এখনো আমাদের মাঝে আসেননি। রোজিনা এলে তিনি এবং তার আইনজীবীরা পরামর্শ করে হয়রানিকারীদের বিরুদ্ধে কোনো আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হবে কি না, সেই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন।’

পেশাগত দায়িত্ব পালনে রোজিনা ইসলাম ১৭ মে বেলা ৩টার দিকে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে যান। স্বাস্থ্য সচিবের পিএস সাইফুল ইসলামের রুমে অবস্থানকালে ফাইল থেকে গোপন নথি সরানোর অভিযোগ এনে তাকে ৫ ঘণ্টা অটকে রাখা হয়। তার মোবাইল ফোন কেড়ে নেওয়া হয়। তার ওপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করা হয়। একপর্যায়ে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন।

রোজিনা ইসলামকে আটকে রাখার খবর পেয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমের সাংবাদিকরা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে যান। তারা রোজিনাকে আটকে রাখার কারণ জানতে চাইলে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা কিছুই জানাননি। রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত সাংবাদিকরা সচিবালয়ের বাইরে একত্রিত হয়ে রোজিনা ইসলামকে হেনস্তার প্রতিবাদ করেন। সাড়ে ৮টার পর রোজিনা ইসলামকে স্বাস্থ্য সচিবের পিএসের রুম থেকে বের করে শাহবাগ থানায় নিয়ে যায় পুলিশ। এরপর মধ্যরাতে তার বিরুদ্ধে অফিশিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্টে মামলা করা হয়।

পরদিন রোজিনা ইসলামকে আদালতে হাজির করে পাঁচদিনের রিমান্ডের আবেদন করে পুলিশ। অপরদিকে রোজিনা ইসলামের পক্ষে রিমান্ড বাতিল চেয়ে জামিন আবেদন করা হয়। উভয় পক্ষের শুনানি শেষে আদালত রিমান্ড আবেদন নাকচ করে জামিন শুনানির জন্য ২০ মে দিন ধার্য করেন। ওইদিন রোজিনা ইসলামের পক্ষে সিনিয়র আইনজীবী এহেসানুল হক সমাজী, আশরাফুল আলম, আমিনুল গণি টিটো, প্রশান্ত কুমার কর্মকার ও ব্যারিস্টার জ্যোর্তিময় বড়ুয়া, আইন ও সালিশ কেন্দ্রের আব্দুর রশিদ জামিন শুনানি করেন। অপরদিকে রাষ্ট্রপক্ষের সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর হেমায়েত উদ্দিন খান হিরণ জামিনের বিরোধিতা করে শুনানি করেন। উভয় পক্ষের শুনানি শেষে আদালত আদেশের জন্য রোববার দিন ধার্য করেন।

রোজিনার মোবাইল ফোনের ফরেনসিক পরীক্ষার আবেদন মঞ্জুর : মামলা তদন্তের স্বার্থে রোজিনা ইসলামের জব্দ করা দুটি মোবাইল ফোনের ফরেনসিক পরীক্ষার অনুমতির আদেশ চেয়ে আবেদন করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা শাখা (ডিবি)। একই আদালত আবেদনটি মঞ্জুর করেন।