logo
আপডেট : 30 June, 2021 11:48
প্রতিকূলতা থেকে উত্তরণে আগে নিজেদের মোটিভেট করতে হবে : রিমা দাস
অমিতা সিনহা

প্রতিকূলতা থেকে উত্তরণে আগে নিজেদের মোটিভেট করতে হবে : রিমা দাস

নির্মাতা রিমা দাস। ছবি: নিউইয়র্ক মেইল

দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। আমাদের সমাজব্যবস্থাও আগের থেকে অনেক বেশি ইতিবাচক প্রগতির দিকে ধাবিত হয়েছে। কিন্তু কিছু ক্ষেত্রে এখনো চ্যালেঞ্জ রয়ে গেছে। প্রতিকূলতা রয়ে গেছে। প্রতিকূলতা থেকে উত্তরণে আগে নিজেদেরই মোটিভেটেড করতে হবে।

গুণী নির্মাতা রিমা দাস এভাবেই নিজের কাজ এবং বাস্তবতা নিয়ে কথা বলছিলেন। 

এই সময়ে শ্রীভূমি বহুগুণের অধিকারীণি সুদর্শণা নির্মাতা রিমা দাসের জন্মস্থান শ্রীহট্টের প্রাণ কেন্দ্র জিন্দাবাজারে। বর্তমানে তিনি সিলেটের কড়ইপাড়ার বাসিন্দা। কর্মময় জীবনে রিমা উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষার সুপারভাইজার। এর পাশাপাশি নিজ হাতেই গড়ে তুলেছেন সামাজিক সংগঠন  ‘শতভিষা’। যেখানে সম্মুখের পথ পাড়ি দিতে মেয়েদেরকে উৎসাহ ও উদ্বুদ্ধকরণে অসংগতি মূলক ঘটনাবলি তুলে ধরে সেমিনার ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিচালনা করে যাচ্ছেন তিনি। এছাড়া একাধারে বই লেখা, মঞ্চ নাটক ও শর্ট ফিল্ম নির্মাণে বেশ জোড়ালো ভূমিকা রেখেছেন। 

গুণী এই নির্মাতার সাথে নানাবিদ প্রসঙ্গে কথোপকথনকালে রিমা দাস বলেন, সিলেটে মেয়েদের জন্য সবকিছুই আসলে চ্যালেঞ্জিং। সব কিছুতে নিজেই কাজ করতে হয়। লেখালেখির কাজ বলেন বা সংসারের কাজ বলেন, সময়টা আপনাকে বের করতে হবে। আর দ্বিতীয়ত, মেয়েরা তেমন একটা সচেতন না বা নিজ সম্পর্কে আত্মসচেতনতা একটু যৎসামান্য বলা যায়। এসব প্রতিকূলতা থেকে উত্তরণ পেতে হলে  নিজেদের আগে মোটিভেট করতে হবে। নিজে সচেতন হতে হবে। অনেক সময় দেখা যায় মেয়েরা মেয়েদেরকে ফিকি করে ফেলে। এই জায়গা থেকে মেয়েদের বের হয়ে আসতে হবে। চ্যালেঞ্জিং পথ এগিয়ে যাওয়া নিয়ে তিনি বলেন, মেয়ে হলেও আমি একজন মানুষ। আমার আত্ম সচেনতা আছে। আত্ম সচেনতা থেকেই আমাকে কাজগুলো করতে হবে। 

সম্প্রতি বাংলাদেশের অভিনেত্রী পরিমনির অপ্রীতিকর ঘটনা তুলে ধরে তিনি জানান, এতো সমস্যা সম্মুখীন হওয়ার পর অনেক দেড়িতে পরিমনি মুখ খুলেছে। এটা হচ্ছে সচেনতার বিষয়।  কাজ করতে গিয়ে সমস্যা হবে। সেখানে মুখোমুখি হয়ে সমস্যাকে মোকাবেলা করতে হবে এবং বলতে হবে। মেয়েরা প্রতিনিয়ত মাঝামাঝি সময়ে মুখোমুখি হচ্ছে। এই বিষয়ে আমরা যদি সচেতন হয় এবং প্রতিবাদি হয়, তবেই আমাদের চলতি পথের চলাচল মসৃণ হবে। 

সরকারি চাকুরীর পাশাপাশি  ক্রিয়েটিভ কাজ বিষয়ে লেখক রিমা জানান, সংসার ও চাকুরীর পাশাপাশি একটু একটু করে বই লেখালেখি করি। আমার একটা সামাজিক সংগঠন আছে, সেখানে মেয়েদেরকে নিয়ে বিভিন্ন সেমিনার, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও সচেতনমূলক কিছু অনুষ্ঠান করে থাকি। তাছাড়া আমি দুটি শর্ট ফিল্মিমের মতো কাজ করেছি। করোনার জন্য আপাতত কাজ বন্ধ আছে। 

নির্মাণ কাজে আসার আগ্রহ তুলে ধরতে লেখক রিমা বলেন, সামাজিক যে অসংগতিগুলো আছে, সেগুলো আমার হৃদয়কে স্পর্শ করে। আমাদের সমাজে কিছু সমস্যা বলেন বা অসংগতি বলেন,  আমাকে এই বিষয়গুলো সর্বদা একটা কষ্টের মধ্যে রাখে। যখন আমার সন্তান আর পথ শিশুদের মধ্যস্ত যে পার্থক্যগুলো দেখি, সেই জায়গাগুলো আমাকে বেশি নাড়া দেয়। চোখের সামনে তো অনেক ঘটনা ঘটে যায়। সেই ঘটনাগুলো  মনের মধ্যে দাগ কাটে। সেই দাগ থেকেই নির্মাণ কাজগুলো সৃষ্টি করি আমি।এই কাজের আসার পিছনে সবচেয়ে বেশি সহযোগীতা ও উদ্বুদ্ধ করেছেন আমার স্বামী,  আমার বাবা, আমার পরিবার এবং আমার বন্ধুরা। 

নিজের সৃষ্টি সবচেয়ে ভালোলাগার গল্পের কাহিনী জানতে চাইলে তিনি বলেন, ছোট হলেও সবগুলো কাজ নিজের সৃষ্টি করা। তাই সব কাজই নিজের সন্তানের মতই মনে হয়। এটাকে আলাদা করা যায় না। মহামারি করোনা আসার পূর্বে কাজ করেছিলাম ‘প্রীতি স্মাইল’ আর ‘আনটোল্ড স্টরি’। এই দুটোতে আমি নিজে ছবি ড্রাইভিং ও পরিচালনা করেছি। বর্তমানে কোভিডের জন্য  শিশু শিল্পী থেকে শুরু করে কোনো অভিনেতা-অভিনেত্রী না পাওয়ায় ছবির কাজ নেই। করোনার মহামারিকালে  টুকটাক  লেখালেখি করে একটা মঞ্চ নাটক শেষ করেছি। এর আগে আমি প্রীতিলতাদের নিয়ে ‘প্রীতি কথা’ একটা বই বের করেছি ২০১৯সালে। 

তিনি বলেন, ‘সামাজিক যে অসংগতিগুলো আছে, সেগুলো আমার হৃদয়কে স্পর্শ করে। আমাদের সমাজে কিছু সমস্যা বলেন বা অসংগতি বলেন, আমাকে এই বিষয়গুলো সর্বদা একটা কষ্টের মধ্যে রাখে। যখন আমার সন্তান আর পথ শিশুদের মধ্যস্থ যে পার্থক্যগুলো দেখি, সেই জায়গাগুলো আমাকে বেশি নাড়া দেয়’।

রিমা দাস বলেন, এখন  কোভিড চলছে। তাই নিজে বেঁচে থাকাতাই প্রধান। এবং বেঁচে থাকার পাশাপাশি আনন্দ সহকারে বেঁচে থাকা তা হচ্ছে আরো জরুরি। কারণ মহামারিকালে আমাদের মনের কিছু রোগ বাসা বেঁধেছে। এই সমস্যা থেকে আগে বের হতে হবে। যে কাজে আনন্দ লাগে, সেই কাজের মাধ্যমে আমরা বেঁচে থেকে  নিজেদের পথ খোলা রাখতে হবে। তাই ভবিষ্যতের জন্য সব কাজ পরিকল্পনা সহকার প্রস্তুত রাখতে হবে।