ঢাকায় জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারী মিয়া সেপ্পো বলেছেন, বাংলাদেশ চাইলে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সহায়তা দিতে প্রস্তুত জাতিসংঘ। কোনো দেশ না চাইলে জাতিসংঘ সহায়তা দিতে পারে না।
রোববার ফরেন সার্ভিস একাডেমি মিলনায়তনে ডিপ্লোম্যাটিক করেসপনডেন্টস অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ (ডিকাব) আয়োজিত ‘ডিকাব টক’ অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন। সংগঠনটির সভাপতি পান্থ রহমানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন সাধারণ সম্পাদক একেএম মঈনউদ্দিন।
জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারী অনুষ্ঠানে জাতিসংঘের ৭৬তম সাধারণ পরিষদের অধিবেশন, জলবায়ু সংকট, রোহিঙ্গা সংকট, জাতিসংঘ সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট কো-অপারেশন ফ্রেমওয়ার্কসহ বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলেন। তিনি বলেন, ডিজিটাল স্পেসের ওপর নিয়ন্ত্রণ আরোপের ক্ষেত্রে অবশ্যই সতর্ক ভারসাম্য রাখতে হবে। কেননা নিয়ন্ত্রণ আরোপের ফলে যেন মতপ্রকাশের অধিকার খর্ব না হয়।
রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে সম্পৃক্তির লক্ষ্যে বিশ্বব্যাংকের বিতর্কিত নীতি সম্পর্কে প্রতিক্রিয়া চাইলে সেপ্পো বলেন, জাতিসংঘ উদ্বাস্তু সংস্থা ইউএনএইচসিআর বিশ্বব্যাংকের অংশ। বিশ্বব্যাংকের গ্লোবাল পলিসি তাই জাতিসংঘের পলিসির সঙ্গে মিলে যায়। তবে মাঠ পর্যায়ে নীতির বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচন করতে পারে।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘কোনো দেশের সরকার সহায়তা না চাইলে জাতিসংঘ নির্বাচনী ব্যবস্থায় কোনো সহায়তা দিতে পারে না। বাংলাদেশ যদি অনুরোধ করে তবে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও সহায়তা দিতে জাতিসংঘ প্রস্তুত।’
সেপ্পো বলেন, গণতন্ত্রের স্বার্থে আমরা সুশীল সমাজের জন্য স্পেস প্রত্যাশা করি। গুমের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক কনভেনশন রয়েছে। বাংলাদেশ এই কনভেনশন রেটিফাই করুক এটাই প্রত্যাশা। মানবাধিকার পরিস্থিতি বিশেষ করে নারীর বিরুদ্ধে সহিংসতা, বৈষম্য নিয়ে আমরা উদ্বিগ্ন। এটা অবশ্যই বৈশ্বিক উদ্বেগ।
তিনি বলেন, মিয়ানমার নিয়ে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে যে কোনো আলোচনায় রোহিঙ্গা ইস্যু অন্তর্ভুক্ত থাকা উচিত। রোহিঙ্গা সংকট সমাধানের দুটি দিক আছে। একটি রাজনৈতিক, অপরটি মানবিক। জাতিসংঘের তরফে এসব দেখাশোনার ভিন্ন ভিন্ন এজেন্সি রয়েছে।
মিয়া সেপ্পো আরও বলেন, জাতিসংঘ শিগগিরই ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের সঙ্গে কার্যক্রম শুরু করবে। বাংলাদেশের বিভিন্ন এনজিও ইতোমধ্যে ওই চরে তাদের কার্যক্রম শুরু করে দিয়েছে। ইউএনএইচসিআরের সঙ্গে বাংলাদেশের এ বিষয়ে একটি সমঝোতা স্মারক সই হবে। তারপরই ভাসানচরে জাতিসংঘের উদ্বাস্তু সংস্থা যুক্ত হবে। তবে ঐতিহাসিক ভিন্নতার কারণে কক্সবাজার ও ভাসানচরে জাতিসংঘের ভূমিকা হবে ভিন্ন।
জাতিসংঘ প্রতিনিধি বলেন, বাংলাদেশের নিজস্ব চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও আমাদের সময়ের ট্র্যাজেডি রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে বাংলাদেশ তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। গত ২৫ আগস্ট রোহিঙ্গা ঢলের চার বছর পূর্তির দিনটিকে অনেকে গণহত্যার স্মরণ দিবস হিসাবে পালন করেছেন। রোহিঙ্গা সংগঠনগুলো ২০১৭ সালের আগস্টে সংঘটিত ঘটনাকে গণহত্যা হিসাবে অভিহিত করে তা স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে।
তিনি বলেন, বিশ্বের এক ক্রান্তিলগ্নে এবার নেতাদের উপস্থিতিতে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। কোভিড-১৯ মহামারির কারণে ২০২০ সালে ভার্চুয়াল অধিবেশন হয়েছিল। তিনি মহামারি মোকাবিলায় সম্মিলিত প্রচেষ্টা গ্রহণের জন্য বিশেষ আহ্বান জানান। এবারের অধিবেশন চলাকালে (২৩ সেপ্টেম্বর) ফুড সিস্টেম সামিট অনুষ্ঠিত হবে। মহামারি থেকে পুনরুদ্ধারের ক্ষেত্রে সম্মেলনের বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। বাংলাদেশের জন্য এই সম্মেলন অত্যন্ত জরুরি।
এবারের অধিবেশনে জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয় গুরুত্ব পাবে বলে উল্লেখ করে তিনি বলেন, বাংলাদেশের উপক‚লবর্তী অঞ্চলে জলবায়ু সংকটে ক্ষতি হচ্ছে। সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির কারণে ২০৫০ সাল নাগাদ বাংলাদেশের ১৭ শতাংশ ভূখণ্ড তলিয়ে যেতে পারে। এতে করে দুই কোটি মানুষ গৃহহারা হতে পারে।