বিভিন্ন ক্যাম্প ও ডিটেনশন সেন্টারে অবস্থান করা বাংলাদেশিদের ফেরত পাঠানো (ডিপোর্ট) শুরু করেছে গ্রিস। এরই মধ্যে ১৯ বাংলাদেশিকে জোরপূর্বক ডিপোর্ট করা হয়েছে। এর মাধ্যমে দীর্ঘ পাঁচ বছর পর বাংলাদেশিদের ফেরত পাঠানো শুরু করেছে দেশটি।
গ্রিক অভিবাসন ও আশ্রয়মন্ত্রী নোটিস মিতারাচি ইআরটিআইকে জানিয়েছেন, গ্রিস ১০ হাজার ৬২৯ জন অভিবাসীকে নির্বাসন, স্বেচ্ছায় প্রত্যাবর্তন এবং স্থানান্তর করছে। কারণ দুই দেশের মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতা এখন বেশ ভালো আছে।
তিনি বলেন, সম্প্রতি বাংলাদেশের প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী গ্রিস সফর করেছেন এবং আমি আগামী ফেব্রুয়ারিতে ঢাকা সফরে যাওয়ার পরিকল্পনা করছি।
মিতারাচি বলেন, এই সহযোগিতা বাংলাদেশের নাগরিকদের মৌসুমি কাজে গ্রিসে আসার আইনি পথের সুযোগ তৈরি করবে। গ্রিস; ফ্রনটেক্স, ইউরোপীয় বর্ডার ও কোস্ট গার্ড এজেন্সির সাথে সহযোগিতা শুরু করেছে।
এখন পর্যন্ত ১৯ জন বাংলাদেশিকে ফ্রনটেক্সের সহযোগিতায় ডিপোর্ট করা হয়েছে। গ্রিসের আশ্রয় ও অভিবাসন মন্ত্রণালয় বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। বাংলাদেশিদের ডিপোর্টকালে দেশটির মন্ত্রী নোটিস মিতরাচি স্বয়ং এয়ারপোর্টে উপস্থিত ছিলেন।
গ্রিস প্রবাসীরা বলছেন, গত ১৯ ডিসেম্বর এথেন্সের মেনিদীর আমিগডালেজা ক্যাম্প থেকে ২৩ জন বাংলাদেশিকে ডিপোর্টের জন্য এথেন্সের এলেফথেরিয়োস ভেনিজেলোস বিমানবন্দরে নিয়ে যাওয়া হয়। তবে তাদের মধ্যে কতজনকে দেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে তা জানা নেই। এভাবে প্রতিনিয়ত গ্রিসের নানা ক্যাম্প থেকে স্বদেশে ফেরত পাঠানোর চেষ্টা করে আসছে দেশটির সরকার।
দেশটির বাংলাদেশি প্রবাসীরা বলছেন, গ্রিসের নয়া ডিমোক্রাতিয়ার সরকার রিফিউজি ও আশ্রয় প্রার্থীদের ওপর দমন-পীড়ন চালাচ্ছে। আন্তর্জাতিক ও ইউরোপিয়ান নীতিমালা ভঙ্গ করে রাতের আঁধারে তুরস্কে প্রতিদিন পুশব্যাক করা হচ্ছে। ছিনিয়ে নেয়া হয়েছে আবেদনকারীদের ব্যাংক কার্ড।
এ ব্যাপারে এখন পর্যন্ত গ্রিসের বাংলাদেশ দূতাবাস কোন ব্যাখ্যা দেয়নি।
এদিকে, নতুন আইনে আবেদন করতে পারছে না নবাগত অনুপ্রবেশকারীরা। সঠিকভাবে যাচাই-বাছাই না করে রিজেক্ট করে দেয়া হচ্ছে সকল আবেদন-আপিল। ক্যাম্পগুলোতে প্রচণ্ড শীতে চিকিৎসা, খাবার, কাপড় ও অর্থাভাবে মানবেতর জীবনযাপন করছে রিফিউজিরা। এতে দেশটির ক্যাম্প ও ডিটেনশন সেন্টারে অবস্থান করা হাজারো বাংলাদেশিকে দেশে ফেরত পাঠানোর আশঙ্কা করা হচ্ছে।
এ ব্যাপারে ২৮টি সংগঠন ও এনজিও, ইউরোপিয়ান ও আন্তর্জাতিক আইন ভঙ্গের দায়ে গ্রিসকে দায়ী করে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নে অভিযোগ দায়ের করে।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের কমিশনার ইলারা ইউহ্যানসান গ্রিসের এমন অমানবিক আচরণে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, ‘৭৫ দিন ধরে কিছু ক্যাম্পে ঠিকমত খাবার দেয়া হচ্ছে না। বিষয়গুলোর অনুসন্ধান ও তদন্ত দরকার। গ্রিস সরকারের কাছে ইতোমধ্যে কারণ জানতে চাওয়া হয়েছে।’
প্রসঙ্গত, চলতি ডিসেম্বরে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী গ্রিস সফর করেন। দেশটি সফর শেষে মন্ত্রী ইমরান আহমদ বলেছিলেন, বাংলাদেশ থেকে বিভিন্ন খাতে কর্মী নেবে গ্রিস। বৈধ পথে কর্মী নেয়ার বিষয়ে গ্রিসের আগ্রহ রয়েছে উল্লেখ করে তিনি জানিয়েছিলেন, এ বিষয়ে ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে দেশটির সঙ্গে সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) সই হওয়ার কথা রয়েছে। বৈধ পথে শ্রমিক পাঠানোর সহযোগিতা বৃদ্ধির জন্য তিনি দেশটির আগ্রহপত্রে স্বাক্ষর করেছেন।
গ্রিসে মেডিক্যাল টেকনিশিয়ান, কেয়ারগিভার, নার্স এবং কৃষি কাজের জন্য সিজনাল কর্মীর চাহিদা রয়েছে। ‘দেশটির শ্রমবাজার বাংলাদেশি শ্রমিকদের জন্য উন্মুক্ত হবে’ মন্ত্রীর এমন ঘোষণার মাস না ঘুরতেই প্রবাসীদের ফেরত পাঠানো শুরু করেছে গ্রিস।