পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) প্রধান বনজ কুমার মজুমদারসহ ছয় কর্মকর্তার বিরুদ্ধে সাবেক এসপি বাবুল আক্তারের মামলার আবেদন খারিজ করে দিয়েছেন আদালত।
রোববার (২৫ সেপ্টেম্বর) দুপুরে চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ ড. বেগম জেবুননেছার আদালত এ আদেশ দিয়েছেন।
মহানগর পিপি বীর মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট মো. ফখরুদ্দিন চৌধুরী বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, বাবুল আক্তারের পক্ষে হেফাজতে নির্যাতনের বিরুদ্ধে মামলার জন্য যে আবেদন করা হয়েছিল তা মহানগর দায়রা জজ খারিজ করে দিয়েছেন।
চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ আদালতের সরকারি কৌঁসুলি মো. ফখরুদ্দিন চৌধুরী বলেন, আদালত তার আদেশে বলেছেন পরিদর্শক দিয়ে এসপির মতো পদের লোককে মারধর ও নির্যাতন করা অস্বাভাবিক। বাবুল আক্তার অনেকবার আদালত এসেছেন, জামিন চেয়েছেন, কিন্তু এই একবছর চার মাসে তিনি কোথাও আদালতে নির্যাতনের কথা বলেননি। আদালত মনে করেছেন, মিতু হত্যার মামলার আসামি হিসেবে মামলাকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য তিনি নতুন ভাবে এই আবেদন দিয়েছেন। তাই আদালত মামলাটি খারিজ করে দিয়েছেন।
বাবুল আক্তারের আইনজীবী গোলাম মাওলা মুরাদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, নির্যাতন এবং হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ) আইন ২০১৩-এর ১৫ (১) ধারা এবং সংশ্লিষ্ট আইনের ৫ (২) ধারায় যে মামলার আবেদন করা হয়েছিল তা আদালত খারিজ করে দিয়েছেন। আমরা এই বিষয়ে উচ্চ আদালতে যাবো।
এর আগে বাবুল আক্তারের আইনজীবী গোলাম মাওলা মুরাদ বলেছিলেন, মামলায় নির্যাতন এবং হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ) আইন ২০১৩-এর ১৫ (১) ধারা এবং সংশ্লিষ্ট আইনের ৫ (২) ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে।
মামলায় আসামি করা হয়েছে পিবিআই প্রধান বনজ কুমার মজুমদার, সংস্থাটির চট্টগ্রাম জেলা ইউনিটের এসপি নাজমুল হাসান, চট্টগ্রাম মেট্রো ইউনিটের এসপি নাঈমা সুলতানা, পিবিআইয়ের সাবেক পরিদর্শক সন্তোষ কুমার চাকমা ও এ কে এম মহিউদ্দিন সেলিম এবং সংস্থাটির চট্টগ্রাম জেলা ইউনিটের পুলিশ পরিদর্শক কাজী এনায়েত কবিরকে।
মামলার আবেদনে বলা হয়েছিল, ২০২১ সালের ১০ মে থেকে ১৭ মে পর্যন্ত মামলার বাদী বাবুল আক্তারকে পিবিআই জেলা অফিস ও মেট্রো রুমে আটকে রাখা হয়। এসময় আসামিরা বাদীকে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি না দিলে বিপদ আছে বলে হুমকি দেয়। এছাড়া পরিবারের বিপদ আছে বলেও শাসায়। ওই বছরের ১২ মে তারিখে তাকে রিমান্ডে নেওয়া হয়। এসময় হ্যান্ডকাপ পরিয়ে এবং চোখ বেঁধে জিজ্ঞাসাবাদের নামে স্বীকারোক্তি দিতে রাজি করানোর জন্য বাবুল আক্তারের সঙ্গে নিষ্ঠুর, অমানবিক ও লাঞ্ছনাকর আচরণ করা হয় বলে মামলার আবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
আবেদনে আরও বলা হয়েছে, রিমান্ডে থাকাকালে তদন্ত কর্মকর্তাসহ অন্যরা বাদীকে গালিগালাজ ও অশ্লীল শব্দ ব্যবহার করেন। এভাবে ১৭ তারিখ পর্যন্ত স্বীকারোক্তি আদায়ের উদ্দেশে সারাক্ষণ চোখ বেঁধে, হ্যান্ডকাপ পরিয়ে, না ঘুমাতে দিয়ে, গোসল করতে না দিয়ে, পরিবারের কারো সঙ্গে যোগাযোগ করতে না দিয়ে নিষ্ঠুর, অমানবিক ও লাঞ্ছনাকর আচরণ করে তাকে শারীরিক ও মানসিক কষ্ট দিয়ে নির্যাতন করা হয়।
এর আগে ১৩ সেপ্টেম্বর মাহমুদা খানম মিতু হত্যা মামলায় তার স্বামী সাবেক পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারসহ সাত জনের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট জমা দিয়েছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। আগামী ১০ অক্টোবর মামলাটির ধার্য তারিখ রয়েছে।
উল্লেখ্য, ২০১৬ সালের ৫ জুন সকালে চট্টগ্রাম নগরের নিজাম রোডে ছেলেকে স্কুলবাসে তুলে দিতে যাওয়ার পথে দুর্বৃত্তদের গুলি ও ছুরিকাঘাতে খুন হন মাহমুদা খানম (মিতু)। এ ঘটনা দেশজুড়ে ব্যাপক আলোচিত হয়। ঘটনার সময় মিতুর স্বামী পুলিশ সুপার বাবুল আক্তার অবস্থান করছিলেন ঢাকায়। ঘটনার পর চট্টগ্রামে ফিরে বাবুল আক্তার পাঁচলাইশ থানায় অজ্ঞাতনামাদের আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
জঙ্গিবিরোধী কার্যক্রমের জন্য স্ত্রীকে হত্যা করা হয়ে থাকতে পারে বলে মামলায় অভিযোগ করেন তিনি। তবে দিন যত গড়িয়েছে মামলার গতিপথও পাল্টেছে। একপর্যায়ে সন্দেহের কেন্দ্রবিন্দুতে আসে বাবুল আক্তারের নাম। তদন্তে তার বিরুদ্ধেই হত্যার সঙ্গে জড়িত থাকার সংশ্লিষ্টতা পাওয়ার পর জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাকে হেফাজতে নেয় পিবিআই।
পরে গত বছরের ১২ মে বাবুল আক্তারসহ আট জনকে আসামি করে নতুন করে মামলা দায়ের করা হয়। এ মামলায় বাবুল আক্তারকে পাঁচ দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে পিবিআই। রিমান্ড শেষে প্রথমে আদালতে জবানবন্দি দেওয়ার কথা থাকলেও পরে জবানবন্দি দেননি বাবুল। পরে তাকে চট্টগ্রাম কারাগারে পাঠানো হয়।
চলতি বছরের ২৫ জানুয়ারি মিতু হত্যার ঘটনায় তার বাবা মোশাররফ হোসেনের দায়ের করা মামলার চূড়ান্ত প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করে পিবিআই। সংস্থাটি জানায়, একই ঘটনায় বাবুল আক্তারের দায়ের করা মামলার তদন্ত এগিয়ে নিতে মিতুর বাবার মামলাটির চূড়ান্ত প্রতিবেদনের মাধ্যমে নিষ্পত্তি করা হচ্ছে। একই ঘটনায় দুটি মামলা চলতে পারে না। সম্প্রতি আদালত এটিকে ত্রুটিপূর্ণ উল্লেখ করেন। তাই আদালতের পর্যবেক্ষণ মেনে ও বিধিবিধান অনুসারে মিতুর বাবার দায়ের করা মামলাটির চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়েছে। আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী, বাবুলের করা মামলাটির অধিকতর তদন্ত শেষ করে বাবুলসহ ৭ জনকে আসামি করো ১৩ সেপ্টেম্বর আদালতে
অভিযোগপত্র জমা দেওয়া হয়েছে।