logo
আপডেট : 8 October, 2022 00:55
উলফা নেতা অনুপ চেটিয়ার মেয়েকে বিয়ে করলেন বাংলাদেশি যুবক
ঢাকা অফিস

উলফা নেতা অনুপ চেটিয়ার মেয়েকে বিয়ে করলেন বাংলাদেশি যুবক

একবিংশ শতাব্দীর শুরুর দিকে ভারত থেকে ঢাকায় পড়তে আসেন বন্যা বড়ুয়া। এ সময় তিনি তার সহপাঠী অনির্বাণ চৌধুরীর প্রেমে পড়েছিলেন। দু’জনই তখন রাজধানী ঢাকার মাস্টারমাইন্ড ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের শিক্ষার্থী ছিলেন। বন্যার বাবা গোলাপ বড়ুয়া ওরফে অনুপ চেটিয়া নিষিদ্ধ ভারতীয় বিদ্রোহী গোষ্ঠী ইউনাইটেড লিবারেশন ফ্রন্ট অব আসামের (উলফা) অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা। তিনি ওই সময় বাংলাদেশের একটি কারাগারে বন্দী ছিলেন।

মূলত ১৯৯৭ সালে বিচ্ছিন্নতাবাদী বিদ্রোহী গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে ভারতীয় সেনাবাহিনীর অভিযান থেকে বাঁচতে চেটিয়া বাংলাদেশে লুকিয়ে ছিলেন। এ অভিযোগে তাকে জেলে পাঠানো হয়েছিল। তার বিরুদ্ধে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা রাখার অভিযোগও আনা হয়েছিল। উলফার সাধারণ সম্পাদককে অবশ্য ভারত সরকারের সাথে শান্তি আলোচনায় অংশগ্রহণের জন্য ২০১৫ সালে ভারতে ফেরত পাঠানো হয়েছিল। 

এর সাত বছর পর ২০২২ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর ভারতের পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য আসামের ডিব্রুগড় শহরের কাছে অনুপ চেটিয়ার আদি গ্রাম জেরাইগাঁওয়ে বন্যা ও অনির্বাণ বিয়েবন্ধনে আবদ্ধ হন। বিয়ের পর তাদের আরেকটি জমকালো সংবর্ধনা অনুষ্ঠান হবে ১৫ নভেম্বর অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্ন শহরে। অনির্বাণ এখন সেখানে কর্মরত আছেন।

চেটিয়া সম্প্রতি একটি ভারতীয় সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন, ‘আমি তখন জেলে থাকার কারণে তাদের সম্পর্কের কথা জানতাম না। কিন্তু আমাদের বিপ্লবে তারা যে ধরনের সাহায্য করেছিল, তার জন্য বাংলাদেশের মানুষের প্রতি আমার শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা রয়েছে।’

শুক্রবার ভারতীয় পত্রিকা ডেকান হেরাল্ডসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে এ খবর প্রকাশ হয়েছে। এর আগে গতকাল বৃহস্পতিবার আসামের সংবাদপত্র অসমীয়া প্রতিদিন তাদের বিয়ে খবর জানায়।

অসমীয়া প্রতিদিনের খবরে অনুপ চেটিয়ার বরাতে জানানো হয়, বাংলাদেশের কুমিল্লার ছেলে অনির্বান চৌধুরী (৩০) বর্তমানে অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্নে বসবাস করছেন। আগামী ২৫ নভেম্বর  মেলবোর্নের ইসকন মন্দিরে বরপক্ষের আয়োজনে সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।

ডেকান হেরাল্ড জানায়, বরের বাসা ঢাকার অভিজাত আবাসিক এলাকা ধানমন্ডিতে। অনুপ চেটিয়া যখন বাংলাদেশের জেলে বন্দি ছিলেন তখন তার মেয়ে বন্যা বড়ুয়া পড়াশোনা করতেন ঢাকার মাস্টারমাইন্ড ইন্টারন্যাশনাল স্কুলে। সেখানেই সহপাঠী অনির্বান চৌধুরীর সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি হয়। তখন ইউনাইটেড লিবারেশন ফ্রন্ট অব আসামের (উলফা) বিদ্রোহ একেবারে চরম পর্যায়ে। বন্যা-অনির্বানের প্রেম চলতে থাকে সাত বছর ধরে।

ভারতের আসামের গণমাধ্যম অসমীয়া প্রতিদিনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে অনুপ চেটিয়া বলেন, ‘ঢাকার ধানমন্ডির মাস্টার মাইন্ড ইন্টারন্যাশনাল স্কুলে পড়ার সময় তাদের দু’জনের পরিচয় হয়। এরপর তাদের মধ্যে একটা সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এ কারণে আমরা বিয়েতে মত দিয়েছি।

অনুপ চেটিয়ার মেয়ের বিয়ের খবরটি শুক্রবার আসামের গণমাধ্যমগুলোত গুরুত্বের সঙ্গে ছাপানো হয়। দ্য আসাম ট্রিবিউন-এ এ সংক্রান্ত সংবাদের শিরোনাম ছিল, ‘উলফা লিডার অনুপ চেটিয়াস ডটার ম্যারিজ বাংলাদেশি-অস্ট্রৈলিয়ান ল্যাড’।  

উলফার প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক অনুপ চেটিয়া ওরফে গোলাপ বড়ুয়া ১৯৯৭ সালের ২১ ডিসেম্বর ঢাকার আদাবর এলাকার একটি বাসা থেকে গ্রেপ্তার করে বাংলাদেশের গোয়েন্দা পুলিশ। এরপর তার বিরুদ্ধে অবৈধভাবে বাংলাদেশে অবস্থান এবং অবৈধভাবে বিদেশি মুদ্রা ও একটি স্যাটেলাইট ফোন রাখার অভিযোগে তিনটি মামলা হয়। বাংলাদেশের আদালত তিনটি মামলায় তাকে যথাক্রমে তিন, চার ও সাত বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেন। একসঙ্গে তিন মামলার সাজা কার্যকর হওয়ায় সাত বছর পরই ২০০৪ সালে তার সাজার মেয়াদ শেষ হয়। কিন্তু তারপর থেকে তিনি কারাগারে আটক ছিলেন।