আজ ১১ অক্টোবর, ‘বিগ বি’ খ্যাতবলিউডের শাহেনশাহ অমিতাভ বচ্চনের জন্মদিন। এদিন ৮০ বছর পূর্ণ করে ৮১–তে পা দিয়েছেন এই মেগাস্টার।
১৯৪২ সালের এই দিনে জন্মগ্রহণ করা অমিতাভ বচ্চনের প্রথম জীবন চাকরির সুবাদে কলকাতায় কেটেছে। সে সময় ৩০০ টাকার পেয়িং গেস্ট হিসেবে চৌরঙ্গী, টালিগঞ্জ, বালিগঞ্জ, আলিপুর, রাসেল স্ট্রিটে বসবাস করেছেন। এরপর ছোট ভাইয়ের উৎসাহে সিনেমায় সুযোগ পাওয়া যায় কিনা সেই লক্ষ্যে বাক্সপেটরা গুছিয়ে হাজির হন মুম্বাইতে।
কিন্তু প্রথাগত হিন্দি নায়কের চেয়ে অনেক লম্বা ও গলার স্বর ভারিক্কি হওয়ায় সেখানে সুযোগ মিলছিল না। তাই অর্থাভাবে মেরিন ড্রাইভের বেঞ্চেও রাত কাটাতে হয়েছে তাকে। এরপর মৃণাল সেনের ‘ভুবন সোম’ ছবিতে ধারাবর্ণনা দিয়ে শুরু হয় সিনেমার ক্যারিয়ার।
১৯৭১ সালে হৃষিকেশ মুখোপাধ্যায়ের আনন্দ ছবিতে অভিনয়ের সুযোগ পান। প্রথম ছবিই হিট হয়, তিনি পান সেরা পার্শ্ব অভিনেতা হিসেবে ফিল্মফেয়ার পুরস্কার। সেই থেকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি অমিতাভ বচ্চনকে। এর দুই বছর পর ১৯৭৩ সালে বিয়ে করেন কলকাতার মেয়ে অভিনেত্রী জয়া ভাদুড়িকে।
দীর্ঘ ৫৩ বছরের ফিল্মি ক্যারিয়ারে ১৯০টিরও বেশি ছবিতে অভিনয় করেছেন। উপহার দিয়েছেন অসংখ্য হিট ছবি। কর্মজীবনের শুরুতে কলকাতায় অবস্থান করা ও বাঙালি মেয়েকে বিয়ের সুবাদে নিজেকে সব সময় ‘আধা বাঙালি’ বলে দাবি করেন তিনি। তার অন্যতম প্রিয় শহর কলকাতা। সুপারহিট ‘দো আনজানে’ ছাড়াও ইয়ারানা’, ‘বারসাত কি এক রাত’, ‘দ্য লাস্ট লিয়ার’, ‘পিকু’, ‘তিন’ সহ বেশ কয়েকটি ছবির শুটিং করেছেনে এই শহরে।
অমিতাভ বচ্চন তার কর্মজীবনে অসংখ্য পুরস্কার পেয়েছেন। এরমধ্যে রয়েছে ৪টি শ্রেষ্ঠ অভিনেতা বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার এবং ১৫টি ফিল্মফেয়ার পুরস্কারসহ একাধিক গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক পুরস্কার। ফিল্মফেয়ারে অভিনয়ের জন্য প্রদত্ত পুরস্কারের বিভাগে তিনি সর্বাধিক মনোনয়ন পাওয়ার রেকর্ড করেছেন। অভিনয় ছাড়াও তাকে নেপথ্য গায়ক, চলচ্চিত্র প্রযোজক, টেলিভিশন সঞ্চালক হিসেবেও দেখা গেছে। তিনি গেম শো ফ্র্যাঞ্চাইজ হু ওয়ান্টস টু বি আ মিলিয়নিয়ার-এর ভারতীয় সংস্করণ কৌন বনেগা ক্রোড়পতি অনুষ্ঠানের কয়েকটি মৌসুমের সঞ্চালনা করেন। ১৯৮০-এর দশকে তিনি রাজনীতিতে জড়ান এবং ১৯৮৪ থেকে ১৯৮৭ পর্যন্ত ভারতীয় সংসদে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি ছিলেন।
শিল্পকলায় অসামান্য অবদানের জন্য ১৯৮৪ সালে ভারত সরকার তাকে দেশের চতুর্থ সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা পদ্মশ্রী, ২০০১ সালে তৃতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা পদ্মভূষণ, এবং ২০১৫ সালে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা পদ্মবিভূষণে ভূষিত করে। বিশ্ব চলচ্চিত্রে অনন্য কর্মজীবনের স্বীকৃতি হিসেবে ২০০৭ সালে ফ্রান্স সরকার তাকে সে দেশের সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা লেজিওঁ দনরের নাইট উপাধিতে ভূষিত করে।
ভারতের উত্তর প্রদেশের এলাহাবাদের এক হিন্দু-শিখ পরিবারে অমিতাভ বচ্চনের জন্ম। তার বাবা হরিবংশ রায় বচ্চন একজন নামকরা হিন্দি কবি ছিলেন। তার মা তেজি বচ্চন ফৈসলাবাদের (এখন পাকিস্তানে) এক শিখ-পঞ্জাবী। ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের অবিস্মরণীয় শব্দ ইনকিলাব জিন্দাবাদের অণুপ্রেরণায় অমিতাভ বচ্চনের প্রথম নাম রাখা হয়েছিল ইনকিলাব। পরে তার নাম বদলে রাখা হয় অমিতাভ, যার অর্থ ‘যে আলো নির্বাপিত হয় না। ’
যদিও অমিতাভদের পদবী ছিল শ্রীবাস্তব, কিন্তু তার বাবা নিজের লেখা প্রকাশের সময় ছদ্ম-পদবী বচ্চন ব্যবহার করায় সেই পদবীটিই তিনি সব জায়গায় ব্যবহার করতে শুরু করেন। এই পদবী নিয়েই অমিতাভ প্রথম ছবির জগতে আত্মপ্রকাশ করেন এবং তার পরিবারের সবাই বাইরের জগতে এই একই পদবী ব্যবহার করেন। হরিবংশ রাই বচ্চনের দুই ছেলের মধ্যে অমিতাভ বড়। তার ছোট ছেলের নাম অজিতাভ রাই।
তারকা অভিনয় দম্পতি অভিতাভ বচ্চন-জয়া ভাদুড়ি দুই সন্তানের জনক-জননী। তারা হলেন- শ্বেতা নন্দা এবং অভিষেক বচ্চন। বাবার মতো অতটা তারকা খ্যাতি না পেলেও অভিষেকও বলিউড অভিনেতা। আর তার স্ত্রী ঐশ্বর্য রাই তো বিশ্ব সুন্দরী ও বলিউডের অন্যতম সেরা অভিনেত্রী।