logo
আপডেট : 22 October, 2022 23:51
ঢাকায় ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব বেড়েছে
ঢাকা অফিস

ঢাকায় ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব বেড়েছে

ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীতে ঠাসা রাজধানীর হাসপাতালগুলো। সুস্থ হওয়ার তুলনায় আক্রান্ত হওয়া রোগীর সংখ্যা বেশি হওয়ায় প্রতি মুহূর্তেই চাপ বাড়ছে হাসপাতালে। অনেক হাসপাতালে শয্যার কয়েকগুণ রোগী। যা সামলাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে স্বাস্থ্যকর্মীদের। তবে সাধ্যমতো রোগীদের চিকিৎসা দেওয়ার চেষ্টা করছেন চিকিৎসকরা।

সরেজমিন রাজধানীর স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ ও মিটফোর্ড হাসপাতাল ঘুরে দেখা যায়, প্রতি ঘণ্টায় মিটফোর্ড হাসপাতালে নতুন রোগী আসছেন ৪ থেকে ৫ জন। ওয়ার্ডে সিট না থাকায় মেঝেতে রেখেই সেবা দেওয়া হচ্ছে রোগীদের। ডেঙ্গু রোগীদের জন্য হাসপাতালটিতে ৮০টি শয্যা নির্ধারিত থাকলেও ভর্তি তার দ্বিগুণ।  

জুরাইন এলাকা থেকে পাঁচ বছরের শিশু রাফিউল ইসলামকে নিয়ে হাসপাতালে এসেছেন মা রাহেলা খাতুন। শয্যা না পাওয়ায় শিশু ওয়ার্ডের বারান্দায় চিকিৎসা চলছে রাফিউলের। সন্তানের শারীরিক অবস্থা প্রসঙ্গে মা রাহেলা খাতুন বলেন, স্যালাইন চলছে, এর মধ্যেই কিছুক্ষণ পরপর সে বমি করছে। কোনো কিছুই খাচ্ছে না। রাফিউলের এমন অবস্থা দেখে ভাই ইমরান হোসেনেরও চোখেমুখে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার ছাপ। ইমরান জানান, গত তিন দিন ধরে মেঝেতে ছোট ভাইকে নিয়ে পড়ে আছি। মেঝেতে ঠাণ্ডা বেশি তাই জ্বরও কমছে না।

ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে কেরানীগঞ্জ থেকে এসেছেন সুমাইয়া আকতার, যাত্রাবাড়ী থেকে এসেছেন আব্দুর রাজ্জাক, গুলশান এলাকার ৫ বছরের শিশু আলামিন হোসেনকে নিয়ে হাসপাতালে রয়েছেন ভাই হাসান আহমেদ। তাদের মতো আরো কয়েকশ রোগী এখানে চিকিৎসাধীন। হাসপাতালের জরুরি বিভাগ থেকে জানা গেছে, রোগীদের অধিকাংশই কেরানীগঞ্জ, যাত্রাবাড়ী ও জুরাইনের বাসিন্দা। হাসপাতালের নতুন ভবনের ৬ষ্ঠ ও ৭তম তলায় ডেঙ্গু ইউনিট। 

জুরাইন এলাকা থেকে পাঁচ বছরের শিশু রাফিউল ইসলামকে নিয়ে হাসপাতালে এসেছেন মা রাহেলা খাতুন। শয্যা না পাওয়ায় শিশু ওয়ার্ডের বারান্দায় চিকিৎসা চলছে রাফিউলের। সন্তানের শারীরিক অবস্থা প্রসঙ্গে মা রাহেলা খাতুন বলেন, স্যালাইন চলছে, এর মধ্যেই কিছুক্ষণ পরপর সে বমি করছে। কোনো কিছুই খাচ্ছে না। রাফিউলের এমন অবস্থা দেখে ভাই ইমরান হোসেনেরও চোখেমুখে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার ছাপ। ইমরান জানান, গত তিন দিন ধরে মেঝেতে ছোট ভাইকে নিয়ে পড়ে আছি। মেঝেতে ঠাণ্ডা বেশি তাই জ্বরও কমছে না।

হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডের মেঝেতে শুয়ে কান্না করছে কেরানীগঞ্জ থেকে আসা আরাফাত নামের দুই বছর বয়সী আরেক শিশু। শারীরিক দুর্বলতার পাশাপাশি ব্যথায় কাতরাচ্ছিল শিশু আরাফাত। শিশুটির মা সুরভি বেগম জানান, দুই দিন ধরে এখানে ভর্তি আছি। শয্যা নেই তাই মাটিতে বাচ্চাকে নিয়ে শুয়ে আছি। জ্বর ১০০-এর নিচে নামছেই না। বাচ্চা কিছুই খায় না। শুধু কান্নাকাটি আর বমি করে। দুশ্চিন্তায় আছি, কিছু ভালো লাগছে না।

ডেঙ্গু কীভাবে হয়েছে জানতে চাইলে তার উত্তর, আমাদের এলাকায় এখন অনেক সময় বিদ্যুৎ থাকে না, যে কারণে গরম আর অন্ধকারে মশা বেশি কামড়াচ্ছে। হয়তো এজন্যই ডেঙ্গু হয়েছে।

শুধু রাফিউল আরাফাতের নয়, শিশু ওয়ার্ডে গিয়ে দেখা গেছে অসংখ্য শিশুই শয্যা না পেয়ে মেঝেতে চিকিৎসা সেবা নিচ্ছে। একই অবস্থা পুরুষ ওর্য়াডেও। ফলে চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে রোগী ও তাদের স্বজনদের। আবার অনেক রোগী শয্যা না পেয়ে অন্য হাসপাতালে চলে যেতে বাধ্য হচ্ছেন।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে, দেশে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছে মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, ২৩৭২ জন ডেঙ্গু রোগী এ বছর মুগদা মেডিকেলে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন। তাদের মধ্যে সুস্থ হয়ে হাসপাতাল ছেড়েছেন ২১৭৯ জন, বর্তমানে ভর্তি রয়েছেন ১৯৩ জন ডেঙ্গু রোগী। তবে এই হাসপাতালে এখন পর্যন্ত কোনো ডেঙ্গু রোগীর মৃত্যু হয়নি বলেও জানিয়েছে অধিদপ্তর।

চিকিৎসকরা যা বলছেন 
মিটফোর্ড হাসপাতালের শিশু ওর্য়াডে দ্বায়িত্বপ্রাপ্ত নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক চিকিৎসক বলেন, ডেঙ্গু নিয়ে এখানে যারা চিকিৎসা নিতে আসছে, তারা শুরুতে আসছে না। শুরুতে ডেঙ্গু হয়েছে কি না বুঝতে না পেরে, জ্বরের নানা চিকিৎসা নিয়ে থাকে। ফলে অবস্থা সিরিয়াস হয়ে যায়, এরপর তারা হাসপাতালে আসে। যে কারণে শারীরিক অবস্থা অনেক খারাপ থাকে।

তিনি বলেন, রোগী অনেক বেশি আসছে। আমাদের যে বেড আছে সেগুলো সব ভর্তি, খালি নেই। তাই বাধ্য হয়ে ফ্লোরে রাখা হয়েছে। 

এসব প্রসঙ্গে স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের (মিটফোর্ড হাসপাতাল) পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল কাজী মো. রশিদ-উন-নবী বলেন, বৈরি আবহাওয়ার কারণে ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়ছে। ফলে আমাদের হাসপাতালেও রোগীর চাপ বাড়ছে। যেহেতু রোগী বেশি তাই সবাইকে শয্যা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। তবে আমরা কাউকে ফিরিয়েও দিচ্ছি না। চেষ্টা করছি যথাসাধ্য সেবা দিতে। 

তিনি আরও বলেন, ডেঙ্গু নিয়ে আমাদের এখানে অনেকেই দেরি করে হাসপাতালে আসছেন। জ্বর বেশিদিন থাকায় তাদের প্লাটিলেট কম থাকে। তখন চিকিৎসা দেওয়া কঠিন হয়ে যায়। তাই জ্বর এলে ডেঙ্গুর পরীক্ষা করে চিকিৎসকের কাছে দ্রুত যাওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।

একদিনে রেকর্ড ৯২২ ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত
দেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে আরও ৯২২ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। যা এখন পর্যন্ত একদিনে সর্বোচ্চ। এ নিয়ে বর্তমানে দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হওয়া ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ৪০৪ জনে। এর আগে গত ১৮ অক্টোবর সর্বোচ্চ ৯০০ ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন।

গত ২৪ ঘণ্টায় সারাদেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে আরও ২ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে চলতি বছর এখন পর্যন্ত ডেঙ্গুতে ১১২ জনের মৃত্যু হয়েছে।

সম্প্রতি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এক জরিপে দেখা গেছে, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) ১৩টি ওয়ার্ড ডেঙ্গুতে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ। সেগুলো হলো- ১, ১১, ১৪, ১৬, ১৯, ২০, ২১, ২৪, ২৮, ৩৩, ৩৪, ৩৫, ৩৯ নং ওয়ার্ড। এদিকে জরিপে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনেরও (ডিএসসিসি) ১৪টি ওয়ার্ড ডেঙ্গুতে অধিক ঝুঁকিপূর্ণ বলে উঠে এসেছে। এলাকাগুলো হলো- ৭, ৮, ১১, ১২, ১৩, ১৪, ২৪, ৩৪, ৩৮, ৩৯, ৪১, ৪২, ৪৮, ৫১ নং ওয়ার্ড।