রাশিয়ার যুক্ত করে নেওয়া ইউক্রেনের খেরসন অঞ্চলকে কেন্দ্র করে রক্তাক্ত যুদ্ধের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। দুই পক্ষেই লড়াইয়ের প্রস্তুতি চলছে। রুশ ও ইউক্রেনীয় উভয় পক্ষই জানে, ছাড় দেবে না কেউ। লড়াই হবে সর্বোচ্চটা দিয়েই।
খেরসনের পশ্চিমে পরিখা খুঁড়ছে ইউক্রেনীয় সেনাদের একটি ইউনিট। তাদের কমান্ডার ওলেহের ধারণা, শীতের আগেই কৌশলগত বন্দর শহরটি ছেড়ে পিছু হটতে হবে রাশিয়ার বাহিনীকে। কিন্তু এর আগে যে জোর লড়াই হবে, সে ব্যাপারে নিশ্চিত তিনি ও বাহিনীর অন্যরা। এ প্রসঙ্গে ওলেহ বলেন, ‘রুশরা লড়াই চালিয়ে যাবে। তারা নিজেদের সাধ্যমতো অবস্থান ধরে রাখার চেষ্টা করবে। ’
একই সুর শোনা গেছে রাশিয়ার দিক থেকেও। খেরসন অঞ্চলে রুশদের নিয়োগ দেওয়া উপপ্রধান কিরিল স্ত্রেমৌসভ গত বৃহস্পতিবার বলেছেন, রাশিয়ার সেনারা সহজে হাল ছাড়বে না এমনটাই প্রত্যাশা করছেন তিনি। কিরিল বলেন, ‘আমরা যদি খেরসন ছেড়ে দিই, তাহলে এটি হবে অনেক বড় একটি আঘাত। ’
চলতি বছরের ৩০ সেপ্টেম্বর আড়ম্বরপূর্ণ আনুষ্ঠানিকতার মধ্য দিয়ে ইউক্রেনের চারটি অঞ্চল নিজ ভূখণ্ডের সঙ্গে কাগজে-কলমে জুড়ে নিয়েছে রাশিয়া। খেরসন ওই চার অঞ্চলের একটি। এ ছাড়া বর্তমানে মস্কোর দখলে থাকা ইউক্রেনের একমাত্র প্রাদেশিক রাজধানী খেরসন। ফলে যুদ্ধে সব দিক থেকেই এর গুরুত্ব ব্যাপক। অঞ্চলটি হারালে তা রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের জন্য বড় একটি বিব্রতকর বিষয় হয়ে দাঁড়াবে বলেই মত বিশেষজ্ঞদের।
এ প্রসঙ্গে অবসরপ্রাপ্ত পশ্চিমা জ্যেষ্ঠ সামরিক কর্মকর্তা ফিলিপ ইংগ্রাম বলেন, ‘এটি অনেক বড় একটি আঘাত হবে। প্রাথমিকভাবে রাজনৈতিকভাবে এবং এর মূল্য তাঁকে (পুতিনকে) চুকাতে হবে সামরিকভাবে। আর কোনোভাবে ইউক্রেনীয়রা দিনিপ্রোর পূর্ব পাশে আক্রমণের জায়গা করে নিতে পারলে রুশদের জন্য পরিস্থিতি হয়ে উঠবে আরো প্রতিকূল। ’
সামরিক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দিনিপ্রোর পশ্চিম তীরের নিয়ন্ত্রণের মধ্য দিয়ে পূর্ব পাশে আক্রমণের জায়গা দখলের একটি সুযোগ এসেছে ইউক্রেনীয় বাহিনীর হাতে। এটি তাদের ক্রিমিয়া অভিমুখে যেতে সহায়তা করতে পারবে।
বস্তুত খেরসনের যুদ্ধ রাশিয়ার জন্য সম্মান রক্ষার প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে। কারণ ক্রিমিয়াতেই এখন তাদের কৃষ্ণ সাগর রণতরি বহরের অবস্থান। অন্যদিকে ইউক্রেন যে কয়টি লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে, সেগুলোর মধ্যে ক্রিমিয়া উপদ্বীপটি পুনর্দখল অন্যতম। ২০১৪ সালে এটি রাশিয়া নিজের সঙ্গে যুক্ত করে নেয়।