বিশেষ প্রতিনিধি:
তবে কি রাজনীতিতে নিষিদ্ধ হতে যাচ্ছেন সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ক্যাপিটল বিল্ডিংয়ে হামলার ঘটনায় ট্রাম্পকে দোষি সাব্যস্ত করেছে তদন্ত কমিটি। তার বিরুদ্ধে বিদ্রোহের প্ররোচনা, রাষ্ট্রের সাথে প্রতারণা, রাষ্ট্রীয় এবং কংগ্রেসের কাজে বাধা সৃষ্টির অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে উল্লেখ করে ফৌজদারি মামলার জন্য বিচার বিভাগের কাছে সুপারিশ করা হয়েছে।
তদন্ত প্রতিবেদনটি আমলে নিয়ে বিচার বিভাগ ঘটনার বিচার করার সিদ্ধান্ত নিলে যুক্তাষ্ট্রের ইতিহাসে এই প্রথম কোনো সাবেক প্রেসিডেন্টকে ফৌজদারি বিচারের মুখোমুখি হতে হবে।
যদি সত্যিই বিচারের মুখোমুখি হতে হয় তাহলে এ ঘটনার তদন্তে যে চারটি অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে তাতে ট্রাম্পের ১৫থেকে ২০বছর কারদণ্ড, আর্থিক জরিমানা এবং যে কোনো ধরণের রাষ্ট্রীয় পদে এমনকি প্রেসিডেন্ট পদে নির্বাচনের জন্য নিষিদ্ধ হতে পারেন।
২০২০ সালের ৩নভেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। সংবিধান অনুযায়ি ২০২১ সালের ২০জানুয়ারি ছিল ক্ষমতা হস্তান্তরের দিন। কিন্তু পরাজয় অস্বীকার করে নিজেকে বিজয়ী দাবি করে ট্রাম্প হোয়াইট হাউজ ছাড়তে অস্বীকার করেন। ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্সকে বিভিন্নভাবে চাপ দিতে থাকেন তাকে বিজয়ি ঘোষনার জন্য। কোনো কিছুতেই কাজ না হওয়ায় তার উগ্রপন্থী সমর্থকদের দিয়ে দেশের গণতন্ত্রের প্রতীক ক্যাপিটল ভবনে সশস্ত্র হামলা চালান ক্ষমতা হস্তান্তরের দু’সপ্তাহ আগে ৬জানুয়ারি।
হামলাকারীরা ক্যাপিটল ভবন কার্যত দখল করে অধিবেশন মুলতবি করতে বাধ্য করে। এসময় পুলিশ পাহারা দিয়ে আইনপ্রণেতাদের সরিয়ে নেওয়া হয় আন্ডারগ্রাউন্ড টানেলে। যৌথ অধিবেশনে সভাপতিত্ব করা ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্সকেও পাহারা দিয়ে অধিবেশন কক্ষ থেকে বের নেয় পুলিশ।
সহিংসতায় একজন পুলিশসহ চারজন নিহত হয়। এফবিআই দুটি সম্ভাব্য বিস্ফোরক ডিভাইস নিষ্ক্রিয় করে। পরিস্থিতি নিয়ন্তণে ওয়াশিংটনে কারফিউ জারি করা হয়। ১৫ দিনের জন্য জরুরি অবস্থা জারি করেন মেয়র।
ভোটে ব্যাপক কারচুপি করা হয়েছে বলে কোনো প্রমাণ ছাড়াই বারবার দাবি করে আসছিলেন ট্রাম্প। পরাজয় উল্টে দিতে তাকে সাহায্য করার জন্য সমর্থকদের আহ্বান জানিয়ে হোয়াইট হাউজের কাছে সমবেত কয়েক হাজার সমর্থকের উদ্দেশে ট্রাম্প বক্তব্য দেওয়ার পরপরই ক্যাপিটল ভবনে হামলা করে তার সমর্থকরা। উগ্রপন্থী ট্রাম্প সমর্থকরা কয়েক ঘন্টা অবরূদ্ধ করে রাখে ক্যাপিটল ভবন।
ঘটনার পর প্রধান দুটি রাজনৈতিক দলই সুষ্ঠ তদন্তের দাবি জানায়। কংগ্রেসের নিন্মকক্ষ প্রতিনিধি পরিষদ ১জুলাই কংগ্রেসম্যান বেনি টমসনকে প্রধান করে সাতজন ডেমোক্রাট ও দুইজন রিপাবলিকান কংগ্রেসম্যানের সমন্বয়ে এই কংগ্রেশনাল তদন্ত কমিটি গঠন করে। এরপর গত ১৮মাসে প্রায় এক হাজার জনের সাক্ষ্য গ্রহন এবং এক মিলিয়ন নথি পর্যালোচনা শেষে কমিটি সোমবার তদন্ত কমিটির সব সদস্যই বিচার বিভাগের কাছে ফৌজদারি মামলার পক্ষে ভোট দিয়েছেন। বুধবার চুড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হবে।
সোমবার সন্ধ্যায় তদন্ত কমিটির চেয়ারম্যান কংগ্রেসম্যান বেনি টমসন বলেন, আমরা নিরপেক্ষতার সাথে তদন্ত করেছি। যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে ট্রাম্পই একমাত্র প্রেসিডেন্ট যিনি সন্ত্রাসের মাধ্যমে ক্ষমতা হস্তান্তরে বাধাগ্রস্থ করেছেন। তার বিরুদ্ধে চারটি অপরাধ প্রমাণিত হয়েছে।
তবে যুক্তরাষ্ট্রের আইন বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, কংগ্রেশনাল কমিটির এই তদন্ত রিপোর্ট আমলে নিতে বিচার বিভাগ বাধ্য নয়। বিচার বিভাগ এটি আমলে নিতে পারে, বা এই তদন্ত রিপোর্টের সূত্র ধরে আবারো বিচার বিভিাগীয় তদন্তের নির্দেশ দিতে পারে অথবা এই তদন্ত রিপোর্ট ছুড়ে ফেলেও দিতে পারে। এটা সম্পূর্ণ বিচার বিভাগের এখতিয়ার।
তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, বিচার বিভাগ এটা আমলে না নিলেও এটা প্রমাণিত হয়েছে যে সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্দেশেই ৬জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের গণতন্ত্রের প্রতীক ক্যাপিটল ভবনে সশস্ত্র হামলা হয়েছে। তদন্তে তার বিরুদ্ধে ফেডারেল আইনের অপরাধের প্রমাণ পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় সে দোষি এবং ট্রাম্প একজন ক্রিমিনাল।