logo
আপডেট : 5 April, 2023 05:24
যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট বিতর্কিত ডোনাল্ড ট্রাম্প গ্রেপ্তার

যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট বিতর্কিত  ডোনাল্ড ট্রাম্প গ্রেপ্তার

তুহিন সানজিদ, নিউইয়র্ক:
আত্মসমর্পণের আগেই গ্রেফতার করা হয় যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে। বিচারকের সামনে উপস্থিত হয়ে শুনানী শেষে জামিন পাওয়ার আগে ৫৭মিনিট কেটেছে তার পুলিশ হেফাজতে। এই সময়টুকু চরম হতাশাজনক ছিল বলে জানিয়েছেন ট্রাম্পের আইনজীবীরা। আদালত কক্ষে বসা অবস্থায় ট্রাম্প খুব গম্ভীর ছিলেন। আইনজীবীদের সাথে মাঝে মাঝে কথা বলা ছাড়া বেশিরভাগ সময় বিচারকের দিকে তাকিয়ে ছিলেন। তার বিরুদ্ধে পর্ন তারকার মুখ বন্ধ করতে ঘুষ দেয়া ছাড়াও ব্যবসায়িক রেকর্ড জাল করা সহ ৩৪টি অভিযোগ আনা হয়। তবে তার বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগ সম্পর্কে তিনি দোষি নয় বলে বিচারকের কাছে দাবি করেন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসের সবচেয়ে বিতর্কিত এই সাবেক প্রেসিডেন্ট।
মঙ্গলবার বিশ্ব কাঁপানো এ ঘটনা ছিল নিউইয়র্কের ক্রিমিনাল কোর্টের। ইতিহাসের স্বাক্ষী হয়ে থাকলো ম্যানহাটনের ডাউনটাউনের ১০০ নম্বর সেন্টার স্ট্রিট ভবনটি। যুক্তরাষ্ট্রের ২৪৭ বছরের ইতিহাসে এই প্রথম কোনো সাবেক প্রেসিডেন্ট অপরাধী প্রমাণিত হয়ে গ্রেপ্তার হলেন। 
দুপুর ১টা ৩০মিনিটে ক্রিমিনাল কোর্ট ভবনে ম্যানহাটনের জেলা অ্যাটর্নি অ্যালভিন এল ব্র্যাগের অফিসে হাজির হলে আত্মসমর্পণ করার আগেই কোর্ট পুলিশ তাকে অফিসিয়ালি গ্রেফতার করে পুলিশ হেফাজতে নেয়া হয়। পরে তার ফিঙ্গারপ্রিন্ট ও গ্রেফতারকৃত আসামী হিসেবে ছবি তোলা হয়। 
এসময় সাবেক প্রেসিডেন্ট হিসেবে পাওয়া নিরাপত্তরক্ষী “সিক্রেট সার্ভিস” সদস্যদের থেকে তাকে আলাদা করে নেয়া হয়। 
এর আগে আদালতের সামনে অপেক্ষমান শতশত মিডিয়াকর্মিদের চোখ ফাকি দিয়ে প্রধান ফটক দিয়ে প্রবেশ না করে পুলিশ ও সিক্রেট সার্ভিস পরিবেষ্টিত ট্রাম্প ভিন্ন দরজা দিয়ে আদালত ভবনে প্রবেশ করেন। 

ম্যানহাটনের আদালতের সামনে নজিরবিহীন পুলিশী পাহার-ছবি- দি নিউইয়র্ক মেইল


জামিনে মুক্ত হয়ে বিকেল ৪টায় তিনি লাগোর্ডিয়া এয়ারপোর্ট থেকে ব্যাক্তিগত বিমানে করে ফ্লোরিডার উদ্দেশ্যে নিউইয়র্ক ত্যাগ করেন। 
শারীরিক সম্পর্ক নিয়ে মুখ না খুলতে সাবেক পর্ন তারকা স্টরমি ড্যানিয়েলস এর সাথে যৌন কেলেংকারির ঘটনা ধামাচাপা দিতে ২০১৬ সালে নির্বাচনের আগে তার মুখ বন্ধ করতে আইনজীবীর মাধ্যমে ট্রাম্প  ১ লাখ ৩০ হাজার ডলার অর্থ দিয়েছিলেন। 
স্টর্মির দাবি, ২০০৬ সালে তিনি এবং ট্রাম্প শারীরিক সম্পর্কে জড়িয়েছিলেন। এর পর ২০১৬ সালে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে তাঁর মুখ বন্ধ রাখতে ১ লক্ষ ৩০ হাজার আমেরিকান ডলার ঘুষ দিয়েছিলেন ট্রাম্প।
ঘুষ দেওয়ার মামলায় দোষি সাব্যাস্ত হয়েছে ট্রাম্প। গত সপ্তাহে গ্রান্ড জুরি সাবেক এই প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করলে আত্মসমর্পণ অথবা গ্রেফতার ছাড়া অন্য কোনো পথ খোলা ছিল না তার সামনে। ম্যানহাটনের জেলা অ্যাটর্নি অ্যালভিন এল ব্র্যাগ এই মামলার তদন্তের দায়িত্বে ছিলেন। তিনি ক্ষমতাসীন ডেমোক্রেট দলের সদস্য হওয়ায় ট্রাম্প ও তার দল রিপাবলিকান পার্টি এ মামলা এবং তদন্তকে রাজনৈতিক বলে দাবি করে আসছে।
 
মঙ্গলবার সকাল থেকেই আদালত ভবনের সামনে ছিল নজির বিহীন কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা। কয়েকশ পুলিশ সদস্য, এফবিআই এবং সিক্রেট সার্ভিসের সদস্যদের উপস্থিতি ছিল ইতিহাসের যেকোনো সময়ের চেয়ে অনেক বেশি। উপস্থিত ছিল কয়েকশ গণমাধ্যমকর্মী। সকাল থেকেই আদালত চত্তরের সামনে জড়ো হতে থাকে ট্রাম্প সমর্থক এবং ট্রাম্পকে গ্রেপ্তারের দাবিতে ক্ষমতাসীন দলের সমর্থকরা। দুই গ্রুপের বিক্ষোভ ছিল শান্তিপূর্ণ। 
এর আগে গতকাল সোমবার বিকেল ৩টা ২৮ মিনিটে ট্রাম্পকে বহনকারী তার ব্যাক্তিগত বিশেষ বিমানটি নিউইয়র্কের লাগোর্ডিয়া এয়ারপোর্টে পৌঁছায়। সেখান থেকে সরাসরি ম্যানহাটনের ফিফথ এভিনিউতে অবস্থিত বাসভবন ট্রাম্প টাওয়ারে যান। 
বিকেল ৪টা ১২ মিনিটে ট্রাম্প টাওয়ারে পৌঁছান তিনি। এ সময় কয়েকজন সমর্থক হাতে পতাকা নিয়ে ট্রাম্পকে স্বাগত জানান। তবে সেটা ট্রাম্পের চোখে পড়েনি। ভিড় এড়াতে তিনি মেইন গেট দিয়ে প্রবেশ না করে পাশের ৫৬ স্ট্রিটের গেট দিয়ে প্রবেশ করেন। এ সময় কয়েকশ পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থার সদস্য এবং উল্লেখযোগ্য সংখ্যক সিক্রেট সার্ভিসের সদস্যরা চারদিক থেকে ট্রাম্প টাওয়ার ঘিরে রাখে। এর আগে ট্রাম্পের জন্য এত বেশি নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। 
এর প্রায় তিন ঘণ্টা আগে ফ্লোরিডার পামবীচ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ট্রাম্পের বহনকারী বিমানটি নিউইয়র্কের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করে। 
এর আগে ট্রুথ সোশ্যাল নামে তার নিজস্ব সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ট্রাম্প লেখেন, ‘সোমবার দুপুর ১২টায় আমি মার-আ-ল্যাগো ত্যাগ করে নিউইয়র্কে ট্রাম্প টাওয়ারের উদ্দেশে রওনা করছি। বিশ্বাস করুন আর না করুন মঙ্গলবার সকালে আমি আদালতে যাব। যুক্তরাষ্ট্র এমন হওয়ার কথা ছিল না।’
শুরু থেকেই ডোনাল্ড ট্রাম্প তার বিরুদ্ধে দায়ের করা এই মামলাটি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে দাবি করে আসছেন। 
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন, ‘সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নিউইয়র্কের আদালতে আত্মসমর্পণের ঘটনায় আইনশৃংখলা পরিস্থিতি নিয়ে সরকার চিন্তিত নয়। নিউইয়র্ক পুলিশ বিভাগের যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবিলা করার ক্ষমতা আছে বলে বিশ্বাস করে।’ মিনেসোটার ফ্রিডলিতে একটি অনুষ্ঠানে যোগদানের সময় সংবাদ মাধ্যমকে তিনি এসব কথা বলেন। 

সরাসরি সম্প্রচারের আবেদন নাকচ
বিশ্বের স্বনামধন্য গণমাধ্যম সিএনএন-সহ কয়েকটি গণমাধ্যম ট্রাম্পের আত্মসমর্পণ এবং শুনানি আদালত কক্ষ থেকে সরাসরি সম্প্রচারের অনুমতি চেয়ে আবেদন করে। নিউইয়র্ক সুপ্রিম কোর্টের ভারপ্রাপ্ত বিচারক জুয়ান মার্চান জানান, সোমবার রাতে সিদ্ধান্ত জানাবেন। তবে সংবাদ মাধ্যমের এই আবেদনের বিরোধীতা করে ট্রাম্পের আইনজীবীরা অনুমতি না দেয়ার জন্য আদালতে লিখিত আবেদন জানান। মামলার সরাসরি সম্প্রচার বাইরে উদ্বেগ সৃষ্টি করবে বলে তারা বিচারককে জানান। পরে রাত ১০টার পর বিচারক মিডিয়ায় সরাসরি সম্প্রচারের আবেদন নাকচ করে দিয়ে শুধুমাত্র পাঁচজন ফটোগ্রাফারকে ছবি তোলার অনুমতি দেন।
মেয়রের হুশিয়ারি
এ দিকে, মঙ্গলবার সাবেক প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের আদালতে আত্মসমর্পণের ঘটনায় সমর্থকদের শান্ত থেকে প্রতিবাদ বিক্ষোভের আহ্বান জানিয়েছেন নিউইয়র্কের মেয়র এরিক এ্যাডামস। কোনো রকম সহিংস আচরণ করলে তার জন্য পুলিশ বিভাগ প্রস্তুত রয়েছে বলেও হুশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন তিনি। মেয়র জানিয়েছেন, আইন ভঙ্গ করলে যে কাউকে গ্রেপ্তার করা হবে।  

ট্রাম্পের সঙ্গে আইনজীবীদের সাক্ষাৎ
স্থানীয় সময় সোমবার সন্ধ্যায় আইনজীবীদের সঙ্গে আলোচনায় বসেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ, মামলার ভবিষ্যত এবং মঙ্গলবার কি ঘটতে পারে এসব বিষয় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয় আইনজীবীদের সঙ্গে। ট্রাম্পের ব্যাক্তিগত আইনজীবী সুজান নেচলেস, জো টাকোপিনা এবং টড ব্ল্যাঞ্চ এ সময় উপস্থিত ছিলেন। পরে ট্রাম্পের আইনজীবী এ্যাটর্নি আলিনা হাব্বা সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন, ‘সাবেক প্রেসিডেন্ট ভালো আছেন এবং ফুরফুরে মেজাজে আছেন। সত্যি বলতে কি, তিনি সবসময় যেমন থাকেন তেমেই আছেন