logo
আপডেট : 20 April, 2024 23:11
সড়ক দুর্ঘটনায় বাংলাদেশের জিডিপিতে ক্ষতি ১.৫ শতাংশের বেশি: বিআরটিএ
ঢাকা অফিস

সড়ক দুর্ঘটনায় বাংলাদেশের জিডিপিতে ক্ষতি ১.৫ শতাংশের বেশি: বিআরটিএ

প্রতিবছরে সড়ক দুর্ঘটনায় ২৫ হাজার কোটি টাকার বেশি ক্ষতি হচ্ছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ)।

সংস্থাটির চেয়ারম্যান নূর মোহাম্মদ মজুমদার বলেছেন, বাংলাদেশের সড়ক দুর্ঘটনায় বছরে ২৫ হাজার কোটি টাকার বেশি ক্ষতি হয়, এটাকে যদি শতাংশে হিসাব করি, তবে তা মোট জিডিপির ১.৫ শতাংশের বেশি।

এটা তো শুধু আর্থিক হিসাবের কথা বললাম। একটা কর্মক্ষম ব্যক্তি যদি কোনো পরিবারের মারা যায়, তাহলে তো পুরো পরিবার ধ্বংস।

শনিবার (২০ এপ্রিল) দুপুরে মহাখালী বাস টার্মিনালে বিআরটিএর আয়োজনে ‘সড়ক নিরাপত্তামূলক আলোচনা সভায়’ কথা বলছিলেন তিনি।  

এ সময় সড়ক দুর্ঘটনা রোধে বিআরটিএর নেওয়া নানা উদ্যোগ তুলে ধরেন নূর মোহাম্মদ মজুমদার।  

ই ড্রাইভিং লাইসেন্সই মূল ড্রাইভিং লাইসেন্স
নানা সীমাবদ্ধতার কারণে হার্ডকপি ড্রাইভিং লাইসেন্স দিতে সমস্যা হচ্ছে জানিয়ে নূর মোহাম্মদ মজুমদার বলেন, “ই-ড্রাইভিং লাইসেন্স থাকলে হার্ড কপির জন্য কেউ মরিয়া যেন না হয়। এটা ওয়েল সার্কুলেটেড। ই ড্রাইভিং লাইসেন্সই মূল ড্রাইভিং লাইসেন্স। এটা মোবাইলে প্রদর্শন করে গাড়ি চালনা করা যাবে। কেউ যদি মনে করেন পুলিশ এটা মানছে না, ই ড্রাইভিং লাইসেন্স দেখানোর পরও পুলিশ আমার বিরুদ্ধে মামলা করেছে তাহলে নির্দিষ্ট করে সেই পুলিশের নাম ফোন নাম্বার লিখে আমাদেরকে জানালে আমরা কিন্তু পুলিশ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সেটা নিয়ে লিখব।  

“যদি কোনো পুলিশ সদস্য এটা না জানে সেটা আইনের লোক হিসেবে তার ব্যর্থতা। সেটার জন্য ওই পুলিশ সদস্য দায়ী থাকবে এবং তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। যাদের সমস্যা আছে তারিখ দেওয়া বন্ধ করে ওয়ান স্টপ সার্ভিস এর মতো করে সার্ভিস দেয়ার জন্য বিআরটিএ কর্মকর্তাদের আহবান করছি।

ডোপ টেস্ট সহজ করা হচ্ছে
গাড়ি চালকদের লাইসেন্স পেতে ডোপ টেস্ট প্রক্রিয়া আরও সহজ করা হচ্ছে জানিয়ে বিআরটিএ চেয়ারম্যান বলেন “আপনাদের প্রস্তাবে ডোপ টেস্ট ডিজিটাল করার প্রস্তাব এসেছে। ডোপ টেস্ট নিয়ে প্রথমে আমরা কিছু সমস্যা ফেস করেছিলাম। এখন এটা নাই বললেই চলে। আমরা কিন্তু স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সঙ্গে একাধিক মিটিং করে একটা অ্যাপস প্রস্তুত করেছি এটা এখনো চালু হয়নি। চালু হলে বারবার অফিসে যেতে হবে না। ”

অভিযান অব্যাহত থাকবে 
সড়ক দুর্ঘটনা রোধে সবাইকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে নূর মোহাম্মদ মজুমদার বলেন, চালকরা স্বেচ্ছায় একটা পিঁপড়াও মারতে চায় না। কিন্তু নানা পারিপার্শ্বিক কারণে দুর্ঘটনা ঘটে যায়। সড়কে যান চলাচল ব্যতীত ব্পাট কাঠি শুকানো, বা অন্য যে কোন কাজে ব্যবহার করা বেআইনি। এজন্য সবাইকে আরো বেশি সচেতন হতে হবে। জেলা উপজেলায় সড়ক পরিবহন সংশ্লিষ্ট কমিটিগুলোকে আরো বেশি সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে হবে।

তিনি বলেন, সড়ক দুর্ঘটনা রোধে আমাদের বিভিন্ন অ্যাওয়ারনেস প্রোগ্রাম চালু আছে। লিফলেট বিতরণ বিজ্ঞাপন প্রকাশসহ নানাভাবে আমরা প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছি। এছাড়া নানা ধরনের ট্রেনিং চালু আছে, সেটা আমরা বাড়ানোর চেষ্টা করছি। গতকাল শুক্রবারও সারা দেশের ৬৪টি জেলায় আমরা ওভারস্পিড নিয়ন্ত্রণে ৪০৫টি মামলায় ১০ লাখের বেশি টাকা জরিমানা করেছি। এই অভিযান প্রতিদিনই চলমান থাকবে।

এদিকে ফিটনেসবিহীন গাড়ি পেলেই ডাম্পিং করার হুঁশিয়ারি দিয়ে নূর মোহাম্মদ মজুমদার বলেন, গাড়ির রোড পারমিট অবশ্যই আপ টু ডেট থাকতে হবে। সেটার জন্য আমাদের যা যা করা দরকার আমরা বসে করব। কোনভাবেই সড়কে রুট পারমিট বিহীন ফিটনেস বিহীন গাড়ি নিয়ে নামা যাবে না। এক্ষেত্রে চালকদের যত ধরনের সহযোগিতা দরকার আপনারা আপনাদের নেতৃবৃন্দের মাধ্যমে আমাদের কাছে পেশ করবেন, আমরা সংবেদনশীলভাবে সর্বোচ্চ সহযোগিতা আপনাদেরকে করব। কিন্তু কেউ যদি ফিটনেসবিহীন গাড়ি নিয়ে সড়কে নামেন, তাহলে আমরা ধরতে পারলেই সোজা ডাম্পিং স্টেশনে পাঠিয়ে দেব। এখানে কিন্তু জরিমানা করা হবে না, জরিমানা করে খুব একটা লাভ হয়না। প্রয়োজনে আমরা সময় দেবো। ওই সময়ের মধ্যে যদি কাগজপত্র আপ টু ডেট করে না নেয়, ওই গাড়ি আমরা সিস্টেম থেকে ডিলিট করে দেবো।

টার্মিনালভিত্তিক ট্রেনিং ব্যবস্থা চালু হচ্ছে 
চালকদের টার্মিনলভিত্তিক ট্রেনিং দেওয়ার ব্যবস্থা হচ্ছে জানিয়ে বিআরটিএ চেয়ারম্যান বলেন, আপনারা ট্রেনিং এর কথা বলেছেন, পেশাদারদের ট্রেনিং ব্যবস্থা চালু আছে। আর ব্যাপক ট্রেনিং এর জন্য আমরা চিন্তা করেছি টার্মিনালভিত্তিক ট্রেনিং আমরা দেবো। আর এ ধরনের অ্যাওয়ারনেস প্রোগ্রামও আমরা ঘন ঘন করব। যাতে চালক, যাত্রী থেকে শুরু করে সকল স্টেকহোল্ডাররা আরও বেশি সচেতন ও দায়িত্বশীল হয়।

এর আগে চালক ও মালিকপক্ষের বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতা ও সমস্যার কথা তুলে ধরে বক্তব্য রাখেন ঢাকা জেলা বাস মিনিবাস সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের কার্যকরী সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা ওসমান আলী, মহাখালী বাস টার্মিনাল সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সভাপতি মো. আবুল কালাম।  

আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন ঢাকা জেলা বাস মিনিবাস সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা ছাদিকুর রহমান হিরু। মহাখালী বাস টার্মিনালের সাধারণ সম্পাদক আবদুল মালেক।  

অন্যান্যদের মধ্যে ট্রাফিক গুলশান বিভাগের উপ পুলিশ কমিশনার আবুল মোমেন, বিআরটিএর রোড সেইফটি বিভাগের পরিচালক , বিআরটিএর রোড সেইফটি বিভাগের পরিচালক শেখ মো. মাহবুব-ই-রব্বানী বক্তব্য রাখেন।