logo
আপডেট : 22 April, 2024 00:11
যুক্তরাষ্ট্রে শুল্কমুক্ত সুবিধা নিতে শ্রম আইন আরো উন্নত করতে হবে
ঢাকা অফিস

যুক্তরাষ্ট্রে শুল্কমুক্ত সুবিধা নিতে শ্রম আইন আরো উন্নত করতে হবে

যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে শুল্কমুক্ত বাজার সুবিধা ও উন্নয়ন অর্থায়ন করপোরেশন (ডিএফসি) ফান্ডের অংশিদারত্ব নিতে হলে আমাদের শ্রম আইন আরো উন্নত করতে হবে বলে জানিয়েছেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষ।

রোববার (২১ এপ্রিল) বিকেলে সচিবালয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধির (ইউএসটিআর) সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের তিনি এ কথা জানান।

বাণিজ্য সচিব তপন কান্তি ঘোষ বলেন, আমরা আমেরিকার বাজারে সব সময় শুল্কমুক্ত, কোটামুক্ত বাজারের দাবি করে আসছি। কারণ বাংলাদেশের রপ্তানির সবচেয়ে বড় বাজার আমেরিকা। এর মধ্যে গার্মেন্টেস পণ্যের বাইরে অন্যান্য পণ্যগুলো যাতে রপ্তানি করতে পারি, রপ্তানি বহুমুখীকরণ নিয়েও আলোচনা হয়েছে। যেমন, চামড়াজাত পণ্য, সিরামিকস, ওষুধ ইত্যাদি।  

তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের উন্নয়ন অর্থায়ন করপোরেশন (ডিএফসি) বলে একটা বড় তহবিল আছে। সেখান থেকে বিভিন্ন উন্নয়ন কাজের জন্য সহযোগিতা পাওয়া যায়। সে বিষয়েও আলোচনা হয়েছে। যখন আমরা শুল্কমুক্ত, কোটামুক্ত সুবিধা চাই, ডিএফপি তহবিলের অংশীদারিত্ব চাই, তখন তাদের দিক থেকে বলা হয়, আমাদের শ্রম অধিকার আরও উন্নত করতে হবে। আমাদের কিছু আইনের উন্নয়ন হয়েছে। তবে বাস্তবায়ন আরো ভালো করতে হবে।

তপন কান্তি ঘোষ বলেন, টেকনোলজি ট্রান্সফারের বিষয়ে ডব্লিউটিওর আইন অনুযায়ী উন্নত দেশগুলো উন্নয়নশীল দেশগুলোর সক্ষমতা বাড়াতে সহায়তা করবে। কৃষিসহ সব ক্ষেত্রে তারা সহায়তা করবে সে বিষয়টি আমরা মনে করে দিয়েছি। এছাড়া তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগ থেকে ব্যক্তিগত তথ্য সংগ্রহ আইনের একটা খসড়া করা হয়েছে। সেখানে তারা বিভিন্ন সময়ে মতামত দিয়েছে। সে বিষয়ে তারা সন্তুষ্ট। তবে এই আইনসহ অন্য যে সব আইন, যেমন কপিরাইট, প্যাটেন্ট আইন এসব আইনের বাংলা তারা পায়। সেজন্য তারা আইন প্রণয়নের সময় তারা ইংরেজি সংস্করণ করতে বলেছে।

‘কৃষিখাত নিয়ে একটি বিষয়ে আলোচনা হয়েছে সেটা হলো, আমাদের পণ্য রপ্তানি করতে গেলে যে সার্টিফিকেশন লাগে, সে বিষয়ে আরো সহযোগিতা করতে চায়। এগুলোই মোটামুটি আমাদের আলোচনার এজেন্ডা ছিলো। দুই পক্ষই জোরালোভাবে দাবি তুলে ধরেছে,’ বলেন তপন কান্তি ঘোষ।

তিনি বলেন, জিএসপি সুবিধা পেতে শ্রম আইনের যে শর্তগুলো দিয়েছে, সেগুলোতো অনেক পূরণ হয়েছে।  

আর কোনো শর্ত দিয়েছে কি না বা শ্রম আইন সংশোধনের বিষয়ে নতুন কিছু বলেছে কি না জানতে চাইলে সিনিয়র এই সচিব বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধিদলের নেতা প্রথমেই বলেছেন আমরা যে শুল্কমুক্ত সুবিধা বা ডিএফসি ফান্ডে অংশিদারত্ব চাচ্ছি, এরজন্য আমাদের শ্রম আইন আরো উন্নত করতে হবে।  

‘আমরা যে আইনটা করতে যাচ্ছি, সেখানে আরও কয়েকটি বিষয় পুনর্গঠন করতে চাচ্ছি। এখন আইনে আছে, অন্তত ২০ ভাগ শ্রমিকের সম্মতিতে একটি ট্রেড ইউনিয়ন হতে পারে। সেটাকে আরও কমাতে বলেছেন। শ্রমে আইনে অপরাধ করলে মালিকদের বিরুদ্ধে যে শাস্তির বিধান বা জরিমানা আছে, সেটাকে আর বৃদ্ধি করতে হবে এবং কোনো ট্রেড ইউনিয়নের নিবন্ধন হয়ে যাওয়ার পর তাদের সদস্য সংখ্যা ২০ শতাংশের নিচে হলেও তা বাতিল করা যাবে না। এরকম ১১ দফার একটি দাবি তারা দিয়েছে,’ বলেন বাণিজ্য সচিব।  

শ্রমনীতির বিষয়ে কোনো ধরনের কথা হয়েছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, শ্রমনীতি নিয়ে কোনো আলোচনা হয়নি। আজকে শুধু টিকফা প্লাটফর্মের অধীনে যে এজেন্ডা নিয়ে আলোচনা হয়, সেগুলো নিয়েই আলোচনা হয়েছে। আমি আগেই বলেছি, আমাদের দিক থেকে শুল্কমুক্ত বাজার সুবিধা পাওয়া, পোশাকখাতের বাইরেও যাতে অন্যান্য পণ্য রপ্তানি করতে পারি, আমাদের ওষুধ কোম্পানিগুলো যাতে সহজে এফডিএ’র নিবন্ধন পায়, এসব বিষয়ে জোরালো আলোচনা হয়েছে।

শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার নিয়ে তাদের মূল বক্তব্যটা কি জানতে চাইলে তপন কান্তি ঘোষ বলেন, বাংলাদেশ স্বল্প উন্নত দেশ। ডব্লিউটিও-এর আইন অনুযায়ী আমাদের সুবিধা দেওয়ার কথা বলেছি। আরো বলেছি, সকল স্বল্প উন্নত দেশের যে জনসংখ্যা তার ১৮ ভাগ বাংলাদেশে বাস করে। সে হিসেবেও সুবিধাটা আমেরিকার দেওয়া উচিত।

বাংলাদেশকে শুল্কমুক্ত সুবিধা দিলে তৈরি পোশাক খাত সবচেয়ে বেশি লাভবান হবে বলে জানিয়ে সচিব বলেন, এই খাতে প্রত্যন্ত অঞ্চলের মেয়েরা বেশি কাজ করেন। তারা গরিব পরিবার থেকে এসে এখানে কাজ করেন। কাজেই দারিদ্র্য দূরীকরণের একটা বিষয় আছে। তাদের আয় বাড়বে। একটি আইনে আফ্রিকান দেশগুলোকে তারা শুল্কমুক্ত সুবিধা দেয়। আমরা বলেছি, আফ্রিকান গরিব আর এশীয় গরিবদের মধ্যে কেনো বৈষম্য হবে। এটা যুক্তিযুক্ত না।

‘আর এই তৈরি পোশাক খাতের একটা অংশ কটন আমরা যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি করে থাকি। অন্তত শেষ পর্যন্ত আমরা দাবি করেছি, যুক্তরাষ্ট্রের কটন থেকে যেই পোশাক তৈরি হবে, সেই অংশের ওপর যেন শুল্কমুক্ত সুবিধা দেওয়া হয়। উন্নয়নশীল দেশ হতে এখনো কয়েক বছর বাকি আছে আমাদের, যোগ করেন তিনি।

সচিব বলেন, মনে রাখতে হবে, আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে কেউ কাউকে দয়া করে না। আমাদের যোগ্যতা ও কঠোর পরিশ্রম দিয়ে পণ্য রফতানি করতে হয়। আর যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে আমরা কোনো অগ্রাধিকারমূলক সুবিধাও পাই না যে বলা যাবে আমরা কারও দয়ায় রফতানি করছি।