
পাঁচ বছরের মধ্যে এই প্রথমবার ইউরোপাীয় ইউনিয়ন সফর করছেন চীনের প্রেসিডেন্ট শি চিনপিং। ২০১৯ সালে শি চিনপিং শেষ ইইউ সফর করেছেন। শি তার সফর শুরু করছেন ফ্রান্স থেকে। এরপর তিনি সার্বিয়া ও হাঙ্গেরি যাবেন।
প্যারিসে তিনি ইইউ-এর কঠোর নীতির মুখে পড়তে পারেন তবে সার্বিয়া ও হাঙ্গেরিতে পাবেন উষ্ণ অভ্যর্থনা। কারণ, এই দুই দেশ রাশিয়ার প্রতি নরম নীতি মেনে চলে।
ইউক্রেন নিয়ে আলোচনা চায় ফ্রান্স
সোমবার প্যারিসে শি চিনপিংয়ের সম্মানে একটি নৈশভোজের আয়োজন করেছেন ম্যাখোঁ। সেখানে ইউরোপীয় কমিশনের প্রধান উরসুলা ফন ডেয়ার লাইয়েনও থাকবেন।
ফরাসি প্রেসিডেন্টের অফিস থেকে জানানো হয়েছে, আলোচনা পুরোপুরি রাজনৈতিক হবে। রাশিয়া ও ইউক্রেন প্রসঙ্গ সেখানে গুরুত্ব পাবে।
২০২২ থেকে ইইউ রাশিয়ার বিরুদ্ধে কড়া নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। কিন্তু চীন রাশিয়ার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রেখেছে।
ফ্রান্সে নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত অবশ্য দাবি করেছেন, রাশিয়ার প্রতি চীন নিরপেক্ষ অবস্থান নিয়ে চলছে। ফ্রান্সের সরকারি সূত্র জানিয়েছে, রাশিয়া যাতে এই বিরোধ মেটানোর রাস্তায় আসে তার জন্য চীনকে চাপ দেবে ফ্রান্স। তবে এই চাপে কতটা কাজ হবে তা নিয়ে সংশয় আছে। কারণ, গত বছর ফ্রান্সের অনুরোধে শি চিনপিং ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে দেখা করতে রাজি হন, তারপরও কিছুই বদলায়নি।
প্যারিসের ক্যাথলিক ইনস্টিটিউটের গবেষক এমানুয়েল লিনকট ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন, ‘ম্যাখোঁর সঙ্গে শি চিনপিংয়ের বৈঠক গুরুত্বপূর্ণ।
কিন্তু মনে রাখতে হবে, এই মাসের শেষের দিকে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট চীন সফরে যাচ্ছেন। ফলে বেজিং তাদের অবস্থান থেকে সরবে বলে মনে হয় না।’ তার মতে, ‘আন্তর্জাতিক বিষয়ে শি চিনপিংয়ের অবস্থান বিন্দুমাত্র বদলের কোনো সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না।’
ইইউ-চাীন বাণিজ্য সম্পর্ক
শি চিনপিংয়ের সফরের সময় বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে আলোচনা হবে। বলা হচ্ছে, এয়ারবাস চীনকে বড় অর্ডার দিতে পারে। তবে ইইউ-এর বলে আসছে, তারা চীন থেকে অনেক বেশি জিনিস আমদানি করে, রপ্তানির পরিমাণ অনেক কম। গত বছর চীনের ইলেকট্রিক গাড়ি নিয়ে তদন্ত করার পর ইইউ জানিয়ছিল, বেজিং এই গাড়ির জন্য প্রচুর ভর্তুকি দিচ্ছে। ব্রাসেলস বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক ইসাবেলা ফেং মনে করেন, ইইউ-চীন বাণিজ্য খুব ধীরে ধীরে কমে আসবে।
ফ্রান্সের পর সার্বিয়ায়
ফ্রান্সের পর সার্বিয়ায় যাবেন শি। এই সময়টাও খুব তাৎপর্যপূর্ণ। ২৫ বছর আগে বেলগ্রেডে মার্কিন বোমা হামলা হয়েছিল চীনা দূতাবাসে। সেই সময় যুগোস্লাভিয়ায় বিরুদ্ধে ন্যাটোর সংঘাতের অংশ ছিল ওই আক্রমণ। পরে আমেরিকা ওই ঘটনার জন্য ক্ষমা চায়। নিহত চীনা নাগরিকদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণও দেয়। কিন্তু চীনের অনেকে নাগরিক এখনও মনে করেন, ইচ্ছাকৃতভাবেই তাদের দূতাবাসে বোমা ফেলা হয়েছিল। বেলগ্রেডের গবেষক স্তেফান ব্লাদিস্লাভিলজেভ বলেছেন, “চীনের কাছে এটা একটা ঐতিহাসিক মুহূর্ত। বড় পশ্চিমা শক্তি তাদের ক্ষতি করেছিল। তারা বলতে চাইছে, বিশ্ব ব্যবস্থার পুনর্গঠন জরুরি।”