logo
আপডেট : 14 October, 2024 00:35
‘বিপর্যয়কর’ আঞ্চলিক সংঘাতের শঙ্কা, সতর্ক করলো জাতিসংঘ
মেইল রিপোর্ট

‘বিপর্যয়কর’ আঞ্চলিক সংঘাতের শঙ্কা, সতর্ক করলো জাতিসংঘ

হিজবুল্লাহ ও হামাসের সঙ্গে ইসরায়েলি বাহিনীর দুই ফ্রন্টে লড়াইয়ের প্রেক্ষাপটে এ অঞ্চলে একটি ‘বিপর্যয়কর’ সংঘাত শুরু হতে পারে বলে সতর্কবাণী উচ্চারণ করেছে লেবাননে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষীরা। 

ইহুদি দিনপঞ্জির সবচেয়ে পবিত্র দিন ইয়োম কিপোরে এই সংঘাতের আশঙ্কা করা হচ্ছে বলে শনিবার এএফপি জানিয়েছে।  

এদিকে দক্ষিণ লেবাননে পাঁচজন ব্লু হেলমেট আহত হওয়ার ঘটনায় ইসরায়েল তীব্র কূটনৈতিক প্রতিক্রিয়ার সম্মুখীন হয়েছে। বৈরুত থেকে এএফপি লেবাননের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বরাত দিয়ে জানিয়েছে, লেবাননের রাজধানী বৈরুতের কাছে অবস্থিত দুটি গ্রামে ইসরায়েলি বিমান হামলায় ৯ জন নিহত হয়েছে।

ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী ও হিজবুল্লাহর মধ্যে চলমান যুদ্ধে ২৩ সেপ্টেম্বর থেকে এ পর্যন্ত ১২শ’ জনেরও বেশি মানুষ নিহত এবং ১০ লাখেরও বেশি মানুষ তাদের বাড়ি-ঘর ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হওয়ার প্রেক্ষাপটে ইসরায়েল এর আগে দক্ষিণ লেবাননের বাসিন্দাদের বাড়ি ফিরে না যেতে সতর্ক করেছিল।

ইসরায়েল বলছিল, ‘আপনারা নিজেদের সুরক্ষার স্বার্থে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত আপনাদের বাড়িতে ফিরে যাবেন না। দক্ষিণে যাবেন না; কেউ দক্ষিণে গেলে সে জীবন ঝুঁকিতে পড়তে পারে।’

হিজবুল্লাহ শনিবার বলেছে, তারা সীমান্তের ওপারে উত্তর ইসরায়েলে ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে। এরপর সেখানে বিমান হামলার সাইরেন বেজে ওঠে। সামরিক বাহিনী বলেছে, তারা একটি প্রজেক্টাইল বাধাগ্রস্ত করেছে। 

ইউএনআইএফআইএল-এর মুখপাত্র আন্দ্রেয়া টেনেন্টি এক সাক্ষাৎকারে জানান, দক্ষিণ লেবাননে হিজবুল্লাহর বিরুদ্ধে ইসরায়েলি উত্তেজনা শিগগির নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে। এটি ‘সবার জন্য বিপর্যয়কর’ প্রভাবসহ একটি আঞ্চলিক সংঘাতে পরিণত হতে পারে।’

জাতিসংঘ বাহিনী বলেছে, দক্ষিণ লেবাননে মাত্র দুই দিনের মধ্যে যুদ্ধে পাঁচজন শান্তিরক্ষী আহত হয়েছে এবং টেনেন্টি বলেছেন, সেখানে তার ফাঁড়িগুলোর ‘অনেক ক্ষতি’ হয়েছে।

শনিবার ছিল ইসরায়েলে ইয়োম কিপোর উপলক্ষে ছুটির দিন। এদিন ইহুদিরা উপবাস ও প্রার্থনায় ব্যস্ত ছিল। গণপরিবহন বন্ধ ছিল। ইসরায়েলের আশেপাশে দোকানপাট ও বাজার ছিল বন্ধ।

ছুটির পরে ইরানের বিরুদ্ধে ইসরায়েলের প্রত্যাশিত বদলা নেওয়ার দিকে আবার মনোযোগ ফেরার সম্ভাবনা রয়েছে। ইরান ১ অক্টোবর ইসরায়েলে প্রায় ২০০টি ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে।

ইসরায়েল গত বছরের ৭ অক্টোবর ইরান-সমর্থিত হামাসের কাছ থেকে সবচেয়ে মারাত্মক হামলার শিকার হওয়ার পরপরই গাজায় আঘাত করা শুরু করে এবং ৩০ সেপ্টেম্বর লেবাননে হিজবুল্লাহর বিরুদ্ধে হামলা শুরু করে। 

শুক্রবার লেবাননে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা অবস্থানে আঘাত করার নির্দেশ দেওয়ার পর ইসরায়েল জাতিসংঘ, তার পশ্চিমা মিত্র ও অন্যদের কাছ থেকে তীব্র সমালোচনার মুখে পড়ে।

ইউএনআইএফআইএল শুক্রবার জানিয়েছে, দুই দিনের মধ্যে এই ধরনের দ্বিতীয় ঘটনায় দুজন শ্রীলঙ্কার শান্তিরক্ষী আহত হয়েছেন।

ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী বলেছে, তাদের সৈন্যরা নাকুরায় ইউএনআইএফআইএল ঘাঁটি থেকে প্রায় ৫০ মিটার দূরে ‘একটি তাৎক্ষণিক হুমকির’ জবাব দিয়েছে এবং ‘পুঙ্খানুপুঙ্খ পর্যালোচনা’ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।

আইরিশ সামরিক বাহিনীর চিফ অফ স্টাফ শন ক্ল্যান্সি বলেছেন, এটি 'একটি দুর্ঘটনাজনিত কাজ নয়'। আর ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ বলেছেন, তিনি বিশ্বাস করেন যে শান্তিরক্ষীদের 'ইচ্ছাকৃতভাবে লক্ষ্যবস্তু' করা হয়েছে।

উভয় দেশই ইউএনআইএফআইএল-এর প্রধন সৈন্য প্রেরণকারী। যাদের শান্তিরক্ষীরা ইসরাইল-হিজবুল্লাহ যুদ্ধে সামনের সারিতে রয়েছে।

যুদ্ধ অবসানের জন্য আলোচনার প্রচেষ্টা এখন পর্যন্ত সফল হয়নি। তবে লেবাননের প্রধানমন্ত্রী নাজিব মিকাতি বলেছেন যে তার সরকার জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদকে একটি 'পূর্ণ ও অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির' আহ্বান জানিয়ে একটি নতুন প্রস্তাব পাস করার আহ্বান জানাবে।

লেবাননের সেনাবাহিনী জানিয়েছে, শুক্রবার দক্ষিণ লেবাননে তাদের একটি অবস্থানে ইসরাইলি হামলায় দুই সেনা নিহত হয়েছে।

ইরানের মিত্র হিজবুল্লাহর প্রতি সমর্থন প্রদর্শনের নিদর্শন হিসেবে ইরানের পার্লামেন্টের স্পিকার মোহাম্মদ বাগের গালিবাফ এ সপ্তাহের শুরুতে শনিবার একটি মারাত্মক ইসরাইলি হামলার স্থান পরিদর্শন করেন।

হিজবুল্লাহর ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র জানিয়েছে, হামলাটি হিজবুল্লাহর নিরাপত্তা প্রধান ওয়াফিক সাফাকে লক্ষ্য করে করা হয়েছিল। তবে হিজবুল্লাহ বা ইসরাইল কেউই

 তিনি লক্ষ্যবস্তু ছিলেন বলে নিশ্চিত করেনি।

ইসরাইল ইরানের দ্বিতীয়বারের মতো সরাসরি আক্রমণের কড়া জবাব দেওয়ার প্রতিজ্ঞা করার পরে 

গালিবাফের লেবানন সফর স্পষ্টত তেহরানের বশ্যতা না মানার সংকেত।

ইসরাইলের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্ট প্রতিজ্ঞা করেছেন যে প্রতিক্রিয়া হবে "মারাত্মক, সুনির্দিষ্ট ও আকস্মিক।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র একটি 'আনুপাতিক' প্রতিক্রিয়ার জন্য চাপ দিচ্ছে যা এই অঞ্চলকে একটি বৃহত্তর যুদ্ধের দিকে ঠেলে দেবে না। প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ইসরাইলকে ইরানের পারমাণবিক স্থাপনা বা বিদ্যুৎ অবকাঠামোতে আঘাত করা এড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন।