শিরোনাম
অর্ন্তবর্তী সরকারের প্রধান চ্যালেঞ্জ রাষ্ট্র সংস্কার ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা মার্কিন প্রতিনিধি পরিষদের নিয়ন্ত্রণ যাচ্ছে রিপাবলিকানদের হাতে টেস্ট ও টি-টোয়েন্টি থেকে অবসরের ঘোষণা সাকিবের জার্মানিতে ইরানের সব কনস্যুলেট বন্ধ ঘোষণা কাশ্মীরে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের হামলায় ভারতীয় সেনা নিহত সরকারের সমালোচনামূলক গান, ইরানি র‍্যাপারের মৃত্যুদণ্ড ২০ সেপ্টেম্বর থেকে বন্ধ হয়ে যাবে যাদের জিমেইল টিকটক নিষিদ্ধ হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২০টির বেশি অঙ্গরাজ্যে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেলেন হান কাং বিশ্বসেরার স্বীকৃতি পেল ইস্তাম্বুল বিমানবন্দর শ্রীলঙ্কায় আগাম ভোটে বড় জয় পেল বামপন্থী প্রেসিডেন্ট অনূঢ়ার জোট নিভে গেল বাতিঘর..... গুগল-অ্যাপলকে পেছনে ফেলে সবচেয়ে দামি ব্র্যান্ড অ্যামাজন পড়াশোনা শেষে ব্রিটেনে থাকতে পারবেন বিদেশি শিক্ষার্থীরা
Update : 10 March, 2018 14:14

নারীকে হতাশার গন্ডি থেকে বের করে আনতে হবে : সমরেশ মজুমদার

নারীকে হতাশার গন্ডি থেকে বের করে আনতে হবে : সমরেশ মজুমদার
সমরেশ মজুমদার -ছবি সংগৃহিত

বাংলা সাহিত্যের কিংবদন্তি লেখক সমরেশ মজুমদার বলেছেন, নারীকে হতাশার গন্ডি থেকে বের করে শক্তিশালী করে গড়ে তুলতে হবে। তাহলে সমাজ থেকে অপশক্তি দুর হবে। তিনি বলেন, মা একজন নারী। মা আমাদের পৃথিবীর আলো দেখান। মা চিনিয়ে দেন বলেই আমরা বাবাকে চিনতে পারি। আমরা যখন কোনো ব্যাথা পাই তখন ”উফ মা” বলে উঠি। তবে কেন আমরা আমাদের লেখায় নারীদের হতাশার গন্ডি থেকে বের করে জয়ের মুকুট পরাবো না। আমার উপন্যাসের কালবেলার ”মাধবীলতা” , সাতকাহণের ”দীপাবলী” নারী শক্তিরই প্রকাশ। এসব লেখায় নারীদের সংগ্রাম ও তাদের জয়ের কাহিনী তুলে ধরেছি। দীপাবলী চরিত্রটি এক কথায় মেয়েদের সংগ্রামের ইতিহাস এবং বাঙালি মেয়েদের পায়ের তলায় শক্ত মাটি তৈরির কাহিনী। জীবনের পচাত্তর বসন্ত পার করে ছিয়াত্তরে পদার্পনের প্রাক্কালে “ নিউইয়র্ক মেইল ”এর সাথে একান্ত আলাপচারিতায় তিনি এসব কথা বলেন।

কালো অক্ষরের বন্ধনিতে উজ্জ্বল সমরেশ মজুমদার ৫৩ বছর ধরে একাধারে লিখে চলেছেন। বাংলা সাহিত্যে স্বর্ণাক্ষরে লেখা তাঁর নাম। চরিত্র ভাঙ্গাগড়ার অসম সাহসি এই যোদ্ধার জন্ম ১৯৪২ সালের ১০ মার্চ পশ্চিমবঙ্গের জলপাইগুড়িতে। সেখানকার ডুয়ার্সের চা বাগানে কেটেছে তাঁর শৈশবজীবন।   

প্রথম উপন্যাস ‘দৌড়’ লিখেই তিনি প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছেন যে, তাঁর গল্প বলার ভঙ্গি ও আঙ্গিক গতানুগতিক ধারার বাইরে একটু অন্যরকম। একঘেঁয়েমি থেকে মুক্ত। তাই সাহিত্যের পাঠকদের হৃদয়ে তিনি জায়গা দখল করে নেন অনায়সে। সাহিত্যকর্মের স্বীকৃতিস্বরূপ পুরস্কার ও সম্মাননা পেয়েছেন অনেক। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো আনন্দ পুরস্কার (১৯৮২), সাহিত্য আকাদেমি পুরস্কার (১৯৮৪)। কলকাতার স্কটিশ চার্চ কলেজ থেকে বাংলায় অনার্স এবং কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমএ পাস করেন তিনি।  

জনপ্রিয় এই লেখক বলেন, দুই বাংলায়ই আমার লেখা মানুষের কাছে প্রিয় হয়ে উঠেছে। আমাকে আর আমার লেখা সবাই ভালোবাসে। দেশ দুটো হলেও ভাষা তো একই। বাংলাদেশের অনেক স্মৃতি আছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, বাংলাদেশের বরেণ্য লেখক হুমায়ুন আহমেদের সাথে একবার বাংলাদেশে গিয়ে সমরেশ মজুমদারকে চুপি চুপি ঘুরে বেড়াতে হয়েছিল। কারণে তখনকার সরকার আমাকে বাংলাদেশ বিরোধী ভাবতো।
সমরেশ মজুমদার বলেন, অনেক আগের কথা-বিএনপি সরকারের শাসনামলে একবার বাংলাদেশে গিয়েছিলাম। যাওয়ার পর শুনি আমাকে নাকি বাংলাদেশে ঢুকতে দেয়া হবে না। আমি নাকি বাংলাদেশ বিরোধী। এসময় আমার পরম বন্ধু হুমায়ুন আহমেদ আমাকে তার নুহাস পল্লীর বাসায় নিয়ে যান। সেখানে আমি চারদিন কাটাই। এরপর হুমায়ুন আমাকে রাতের অন্ধকারে চুপি চুপি ঢাকা শহরের অনেক জায়গায় ঘুরিয়েছে। সবসময় ভয়ে ভয়ে থাকতাম যদি পুলিশে ধরে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কিছু হয়নি। তবে সেই যাওয়াটা ছিল চোরের মতো। আমার মনে হয়েছিল কেন এইভাবে বাংলাদেশে যাব। তবে এখন আর এমন হয় না। প্রচুর সমাদর পাই বাংলাদেশে গেলে। তিনি বলেন, আমি কৃতজ্ঞ বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর কাছে। 

বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর সাথে একটি মজার স্মৃতি আছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ঢাকার একটি অনুষ্ঠানে যাবার আমন্ত্রণ পাই। সেই অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও ছিলেন। আমাকে দেখতে পেয়ে তিনি বারবার সামনের সারিতে আসার জন্য ইশারা করছিলেন। তবে আমি যাচ্ছিলাম না। কিন্তু শেষমেষ যেতে হলো। তিনি আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন- কেমন আছেন ? প্রধানমন্ত্রী জানতে চাইলেন আর উত্তরে আমি বললাম-”আপনি দেখতে আরো সুন্দরী হয়ে যাচ্ছেন। উনি হেসে উঠলেন। কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে পড়েছিলেন। তবে মন্ত্রী আর সরকারি আমলাদের অভিব্যক্তি ছিল চোখে পড়ার মতো। 

এক প্রশ্নের জবাবে বাংলা সাহিত্যের এই উজ্বল নক্ষত্র বলেন, নিজের লেখার মধ্যে পছন্দের চরিত্রের কথা বলা খুবই কঠিন। কারণ বাবা-মার কাছে তার সব সন্তানই সমান। তবে প্রিয় চরিত্রের কথা বলতে গেলে অবশ্যই বলবো জয়িতার কথা। ”গর্ভধারিনীর” জয়িতার কথা। আর উপন্যাসের কথা বলতে গেলে অবশ্যয় বলবো উত্তরাধিকার আর কিছুটা কালবেলার কথা। ”এখনও সময় আছে” আমার এই প্রেমের উপন্যাসটি কেউ পড়েনি। কিš‘ এটা আমার প্রিয় উপন্যাস। এই উপন্যাসের প্রধান চরিত্র একজন সফলতম লেখক আর তার প্রেমিক সত্বার প্রতিফলন। বোঝা যায় এতে একটি প্রতিকী ব্যাপার আছে। 

তিনি বলেন, আমি কখনও ভাবিনি যে লেখক হব। তখন আমার বয়স ২২। আমি তখন খুব গরীব। থিয়েটার ভালোবাসতাম। ঠিক মতো খাই না। খুব কষ্টে জীবন চলে। তখন আমি একটা গল্প লিখে আনন্দবাজার প্রকাশনায় পাঠালাম। তাদের পত্রিকায় গল্পটা ছাপা হলো। ওরা আমার ঠিকানায় ১৫ টাকা পাঠালো। কিš‘ সেই টাকাটা বন্ধুরা সবাই মিলে হোটেলে বসে কফি-বাকুরা খেলাম। টাকা শেষ, পকেট খালি পেটে ক্ষুধা। বন্ধুরা উৎসাহ দিয়ে বলল- আবার গল্প লেখ, টাকা পাবি। আমরা সবাই মিলে আবার চা খাব। আমি আবার লেখা শুরু করলাম। তারপর থেকে চলছে লেখার সংগ্রাম। 
জীবনের পচাত্তরটি বসন্ত পার করে চির তরুণ এই লেখক বলেন, আমার চারপাশে পরিচিত মুখের সংখ্যা দিন দিন কমে যাচ্ছে তবে আমি আছি, ভালোই আছি।

 

 
 
 
 

উপরে