শিরোনাম
অর্ন্তবর্তী সরকারের প্রধান চ্যালেঞ্জ রাষ্ট্র সংস্কার ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা মার্কিন প্রতিনিধি পরিষদের নিয়ন্ত্রণ যাচ্ছে রিপাবলিকানদের হাতে টেস্ট ও টি-টোয়েন্টি থেকে অবসরের ঘোষণা সাকিবের জার্মানিতে ইরানের সব কনস্যুলেট বন্ধ ঘোষণা কাশ্মীরে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের হামলায় ভারতীয় সেনা নিহত সরকারের সমালোচনামূলক গান, ইরানি র‍্যাপারের মৃত্যুদণ্ড ২০ সেপ্টেম্বর থেকে বন্ধ হয়ে যাবে যাদের জিমেইল টিকটক নিষিদ্ধ হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২০টির বেশি অঙ্গরাজ্যে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেলেন হান কাং বিশ্বসেরার স্বীকৃতি পেল ইস্তাম্বুল বিমানবন্দর শ্রীলঙ্কায় আগাম ভোটে বড় জয় পেল বামপন্থী প্রেসিডেন্ট অনূঢ়ার জোট নিভে গেল বাতিঘর..... গুগল-অ্যাপলকে পেছনে ফেলে সবচেয়ে দামি ব্র্যান্ড অ্যামাজন পড়াশোনা শেষে ব্রিটেনে থাকতে পারবেন বিদেশি শিক্ষার্থীরা
Update : 17 April, 2018 02:31

‘বড় বাজেট বাস্তবায়নে প্রশাসনিক সংস্কার প্রয়োজন’

‘বড় বাজেট বাস্তবায়নে প্রশাসনিক সংস্কার প্রয়োজন’
ড. এ বি মির্জা আজিজুল ইসলাম
শায়েখ হাসান :

জুনে ঘোষণা করা হবে আগামী ২০১৮-১৯ অর্থবছরের বাজেট। এরই মধ্যে এই বাজেট তৈরির কাজ শুরু হয়ে গেছে। প্রতিদিনই অনুষ্ঠিত হচ্ছে কোনো না কোনো প্রাক-বাজেট আলোচনা। গত ৮ মার্চ শুরু হয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরের প্রাক বাজেট আলোচনা। এপ্রিলের প্রথমদিন থেকে আলোচনা শুরু করেছে জাতীয় রাজস্ব ভবন (এনবিআর)। ‘আগামী অর্থবছরের বাজেট কেমন প্রয়োজন’ এ বিষয়ে  ‘নিউইয়র্ক মেইল’ এর সাথে কথা বলেছেন বাংলাদেশের প্রখ্যাত অর্থনীতিবিদ ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ড. এ বি মির্জা আজিজুল ইসলাম। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আমাদের প্রতিবেদক শায়েখ হাসান

 

নিউইয়র্ক মেইল: স্যার, এক কথায় যদি বলেন, কেমন বাংলাদেশের জন্য কেমন বাজেট প্রয়োজন?

ড. মির্জা আজিজুল ইসলাম: অবশ্যই ব্যবসা, বিনিয়োগ, শিল্প ও পুঁজিবাজার-বান্ধব বাজেট হওয়া প্রয়োজন।

‘একটি দেশের উন্নয়ন করতে হলে অবশ্যই ব্যবসা, বিনিয়োগ, শিল্প ও পুঁজিবাজার-বান্ধব বাজেট হওয়া প্রয়োজন। বাজেট শুধু করলেই হবে না। সামগ্রিক বিষয়ের দিকে বাজেট প্রণেতাদের নজর রাখতে হবে। এমন বাজেট কাম্য নয়, যে বাজেট দেশের অর্থনীতিতে বিরূপ প্রভাব ফেলবে। আমরা এখনো উন্নয়নের পথে হাঁটছি, উন্নত দেশ হতে পারিনি। আমাদের জাতীয় বাজেটে জনগণের চিন্তা-ভাবনা, ব্যবসায়ীদের আকাঙ্ক্ষার সাথে সরকারের পরিকল্পনাও ফুটে উঠতে হবে।’

 

নিউইয়র্ক মেইল: বিভিন্ন সময়ে বাজেটের আকার ও লক্ষ্যমাত্রা কমানোর বিষয়ে বলা হয়। এ বিষয়ে অভিমত কি?

ড. মির্জা আজিজুল ইসলাম: আসন্ন অর্থবছরের বাজেটের সম্ভাব্য আকার হতে পারে সাড়ে চার লাখ কোটি টাকা। বাজেটের এ আকারকে অবশ্যই উচ্চাভিলাষী বলা যায়। তিন বছর আগেও দেশের বাজেটের আকার ছিল আড়াই লাখ কোটি টাকার মতো। তখনো আমরা দেখেছি রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় অনেক কম আদায় হয়েছে। এরফলে দেশের অবকাঠামো উন্নয়ন ব্যহত নয়। আর এগিয়ে আসে না নতুন বিনিয়োগকারীরা। এবারো এখন পর্যন্ত তেমনই অবস্থা। গত বছরের বাজেটের বিভিন্ন দিক বাস্তবায়িত না হলেও এবার আরেকটি বিশাল বাজেটের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরে রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় কম আদায় হয়েছে। বৈদেশিক মুদ্রায় সহজ শর্তে ঋণ ও আর্থিক সাহায্যের পরিমাণ অনেক কমে যাওয়াসহ ব্যাংকিং খাত থেকে সরকারের ঋণ নেওয়ার পরিমাণ বেড়ে গেছে। এসময়ে এ বিষয়গুলোর সমাধান না করে সাড়ে চার লাখ কোটি টাকার উচ্চবিলাসী লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ মোটেও গ্রহণযোগ্য নয়। বাংলাদেশের অর্থনীতির প্রবৃদ্ধির আলোকে বাজেটে লক্ষ্যমাত্রা আরও কমানো উচিত।

 

নিউইয়র্ক মেইল: আসন্ন অর্থবছরের বাজেটের আকার কেমন হওয়া উচিত?

ড. মির্জা আজিজুল ইসলাম: শুধু আসন্ন নয়, সব সময়ই বাজেটের আকার বাস্তবসম্মত হওয়া উচিত। বাজেটের আকার বড় হওয়া কোনো ক্রেডিটের বিষয় নয়। বাংলাদেশের বাস্তবতায় সাড়ে ৪ লাখ কোটি টাকার বেশি বাজেট বাস্তবায়ন যোগ্য নয়। তাই এ বাজেট উচ্চবিলাসী না করে লক্ষ্যমাত্রা থেকে ২০ হাজার কোটি টাকা কমানো দরকার। আরেকটি বিষয় হচ্ছে, বাজেটের আকারের থেকে বাজেট বাস্তবায়নটিই সবচেয়ে জরুরী। একদিকে আমাদের বাজেটের আকার বাড়ছে, অন্যদিকে বাস্তবায়নের মাত্রা আনুপাতিক হারে প্রত্যেক বছর কমছে। ২০১১-১২ অর্থবছরে বাজেটের ৯৩ শতাংশ বাস্তবায়ন হয়েছিল। ২০১৫- ১৬ অর্থবছরে তা ৭৮ শতাংশে এসেছিল। ২০১৬-১৭-এর চিত্র একই ছিল।  চলতি অর্থবছরে এ হার আরও কমবে। এর থেকে বেরিয়ে আসতে হলে প্রশাসনিক দক্ষতা নিশ্চিত করতে হবে। এর জন্য প্রশাসনিক সংস্কার প্রয়োজন। প্রশাসনিক সংস্কার ছাড়াও বাজেট বাস্তবায়নে কর্মকর্তাদের প্রণোদনার ব্যবস্থা ব্যবস্থা করতে হবে। অবকাঠামো খাতে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশীপ (পিপিপি) যথেষ্ট সফলতা পেয়েছে। প্রতিবেশি দেশ ভারতেও পিপিপি বেশ জনপ্রিয়। কিন্তু আমাদের দেশে এ খাতে অগ্রগতি সন্তোষজনক নয়। প্রত্যেক বছর পিপিপিতে বরাদ্দ রাখা হলেও তা খরচ হয় না। প্রধানমন্ত্রী সরাসরি তত্ত্বাবধান করলেও এ খাতের অগ্রগতি সন্তোষজনক নয়।

 

নিউইয়র্ক মেইল: সাম্প্রতিক সময়ে ব্যাংকের তারল্য সঙ্কট, সুদের হার বিষয়গুলো আলোচনা আসছে। এসব বিষয়ে আপনার অভিমত কি?

ড. মির্জা আজিজুল ইসলাম: কোনো কোনো প্রতিষ্ঠান আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে। আরও কিছু ব্যাংক সমস্যায় আছে। অতিতারল্য কমে গেছে। আর ব্যাংকগুলো এখন তাদের আমানত বাড়াতে সুদের হার বাড়াচ্ছে। এটি নিয়ে অযথা আতঙ্ক সৃষ্টি হচ্ছে। এখন বললেই কিন্তু ব্যাংকগুলো সুদের হার কমাচ্ছে না কিংবা যদি বলি কমাতে পারছে না?

সুদের হার কমাতে প্রয়োজন ঋণের ব্যবহার পর্যবেক্ষণ করে ব্যবস্থা গ্রহণ করা। যদি অপ্রয়োজনীয় কাজের জন্য ঋণ নেয়া হয়, তাহলে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নিলে ঋণের চাহিদা কমার সাথে ব্যাংকগুলোও সুদের হার কমাবে।

প্রধানমন্ত্রী সুদের হার কমিয়ে এক অংকে নামানোর যে কথা বলেছেন তা শুধু মুখে বললেই হবে না। বেসরকারি খাতে ঋণের যে প্রবাহ তার প্রবৃদ্ধি প্রতি মাসেই বাড়ছে যেমন- নভেম্বর, ডিসেম্বর, জানুয়ারি, ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত যে পরিসংখ্যান দেখা যাচ্ছে তাতে প্রবৃদ্ধি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। সুদের হার বৃদ্ধি পাওয়া সত্ত্বেও কিন্তু লোকজন ঋণ নিচ্ছে, কাজেই ব্যাংক মালিকরা অতিরিক্ত লাভের জন্য ঋণের হার বেশি করছে। তাদের ঋণ দেওয়ার মাত্রাও কমছে না বরং বেড়েই চলেছে। অর্থনীতির নিজস্ব গতিবিধি রয়েছে। সুদ হলো একটা প্রাইজ, এই প্রাইজটা ডিমান্ড সাপ্লাইয়ের উপর নির্ভর করে। চাহিদা যেহেতু বেশি আছে তাই সুদের হার বাড়িয়েও ঋণ দিতে সমস্যা হচ্ছে না। বরং ঋণের প্রবৃদ্ধি বেড়েই যাচ্ছে। সুতরাং তারাতো প্রধানমন্ত্রীর মুখের কথা শুনবে না।

বেসরকারি খাতে যাওয়া ঋণ কোন কাজে ব্যবহার হচ্ছে তা খতিয়ে দেখতে হবে। যদি উৎপাদন শুরু করতে ব্যবহার করা না হয়, তাহলে অর্থ পাচারের জন্য নাকি নির্বাচনকে সামনে রেখে আগেভাগেই ঋণ নেওয়া হচ্ছে তাও দেখতে হবে। তা না হলে যতদিন পর্যন্ত উচ্চহারে তারা ঋণ দিতে পাড়ছে ততদিন পর্যন্ত তারা ঋণের হার কমাবে না। সেটা যদি হয় তাহলে অর্থনীতির জন্য খুব একটা সুফল বয়ে আসবে না। এখন ঋণের চাহিদা যদি কমানো যায় তাহলে ব্যাংকগুলোও সুদের হার কমাবে।

 

নিউইয়র্ক মেইল: আপনার মূল্যবান সময়ের জন্য ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।

ড. মির্জা আজিজুল ইসলাম: ধন্যবাদ।

 

ড. এ. বি. মির্জ্জা মোঃ আজিজুল ইসলাম বাংলাদেশের একজন প্রখ্যাত অর্থনীতিবিদ এবং শেয়ারবাজার বিশেষজ্ঞ। তিনি ২০০৭-০৮ সালের নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় অর্থ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করেন। তিনি প্রাচ্যের অক্সফোর্ড খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষক ছিলেন।

তিনি ১৯৬২ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন। পরবর্তীতে ১৯৬৪ সালে পাকিস্তান সিভিল সার্ভিসে ‘সিএসপি’ কর্মকর্তা হিসাবে নিয়োগ লাভ করেন এবং ১৯৮২ সালে জাতিসংঘে যোগ দেন। পরবর্তীতে তিনি বাংলাদেশের শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা ‘সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন’ (এসইসি)-এর চেয়ারম্যান হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। বর্তমানে তিনি পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর মধ্যে সবচেয়ে ভালো ৩০টি কোম্পানি খুঁজে বের করার জন্য নিয়োগপ্রাপ্ত ১৫ সদস্যের জুরি বোর্ডের আহ্বায়ক হিসাবে দায়িত্ব পালন করছেন।

তিনি নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা থাকাকালীন সময় ২০০৮ সালে পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় প্রত্যক্ষ অবদান রাখেন। তিনি  ১৯৪১ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি তারিখ তত্কালীন ব্রিটিশ ভারতের পাবনার সুজানগরে জন্মগ্রহণ করেন।

 

 

নিউইয়র্ক মেইল/বাংলাদেশ/১৭ এপ্রিল ২০১৮/এসএইচ/এইচএম

উপরে