ভারতে প্রতি ৫৫ মিনিটে একজন শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করে!
ভারতে প্রতি ৫৫ মিনিটে একজন ছাত্র বা ছাত্রী আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়। এমন তথ্য দিয়ে খবর প্রকাশ করেছে বিবিসি।
সম্প্রতি দিল্লিতে নবম শ্রেণির একছাত্রী পরীক্ষায় ফেল করায় আত্মহত্যা করেছে। ওই ছাত্রীর বাবা-মা অভিযোগ করেন, দুই শিক্ষক ইচ্ছে করে তাকে ফেল করাচ্ছেন বলে ছাত্রীটি নিজেই বাবা-মাকে বলেছিলেন।
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বাড়ি ফেরার পর ওই ছাত্রীর বাবা-মা প্রথমে দরজা বন্ধ দেখতে পান। দরজা ভেঙে ভেতরে ঢুকে দেখতে পান, মেয়ে গলায় দড়ি দিয়ে ঝুলছে।
এ নিয়ে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানায়, ওই ছাত্রীর পুনরায় পরীক্ষা নেয়ার কথা ছিল। কিন্তু হাসপাতালে নেয়া হলেও তাকে বাঁচানো যায়নি। শুধু এই ছাত্রী নয়, ভারতে প্রতি ৫৫ মিনিটে একজন ছাত্র বা ছাত্রী আত্মহত্যার পথ বেছে নিচ্ছে।
কলকাতার একটি নামি স্কুলের সপ্তম শ্রেণিতে পড়ে রঞ্জিতা নন্দীর ছেলে। রঞ্জিতা বলেন, তিনি না চাইলেও স্কুল আর সামাজিক চাপের কাছে অনেক সময়েই মাথা নত করতে হয় অভিভাবকদের।
তিনি আরও বলেন, আমার ছেলে যে স্কুলে পড়ে, সেখানে প্রত্যেকটা শিক্ষার্থীকে নম্বর নিয়ে ভীষণ চাপ দেয়, সামান্য খারাপ করলেই বাবা মাকে ডেকেও কথা শোনানো হয়। আর বাড়ি ফিরে আমরা বাবা-মায়েরা সেই চাপটাই আবার বাচ্চাদের ওপরে চাপিয়ে দিই। আরও পড়, আরও পড় বলতে থাকি।
অন্য আরেকটি স্কুলের ক্লাস নাইনে পড়ে ইন্দ্রানী ঘোষের মেয়ে।
তিনি বলেন, এখন সমাজটাই এমন পর্যায়ে পৌঁছে গেছে যে ভালো চাকরি, ভালো বেতন- এগুলোই বাচ্চাদের বা তাদের বাবা-মায়েদের লক্ষ্য হয়ে উঠছে। তাই ওই লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য বাচ্চারা সবসময়েই একটি চাপের মধ্যে থাকে। আবার বাবা-মায়েরাও নিজেদের অসম্পূর্ণ স্বপ্নগুলো সন্তানদের মধ্য দিয়ে পূরণ করতে চায়। যেটি আমরা করতে পারিনি, সেটি যেন ওরা করে দেখায়। সব মিলিয়ে বাচ্চাগুলোর জন্য একটি ভয়ঙ্কর অবস্থা তৈরি করা হচ্ছে।
ভারতের সরকারি তথ্যানুযায়ী, ২০১৪ থেকে ২০১৬ পর্যন্ত এ তিন বছরে ২৬ হাজার শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছে।২০১৬ সালে ১৩০০ ছাত্রছাত্রী মহারাষ্ট্রে আর পশ্চিমবঙ্গে ১১০০ ছাত্রছাত্রী নিজেদের জীবন শেষ করে দিয়েছে।
পরীক্ষায় ফেল করা ছাড়া পড়াশোনায় খারাপ করা, অপছন্দের কোনো বিষয় পড়তে বাধ্য করা- এমনকি পড়াশোনায় খারাপ ফল হতে পারে। এই ভয় থেকেও অনেক ছাত্রছাত্রীই আত্মহত্যা করছে।
শিশুমন বিশেষজ্ঞ সময়িতা ব্যানার্জি বলেন, তাদের এটি বোঝানোর মতো কেউ নেই যে একবার পরীক্ষায় খারাপ ফল করা মানেই জীবনের শেষ নয়।