৮৬ বছর পর বিপ্লবী প্রীতিলতার স্নাতক সার্টিফিকেট হস্তান্তর করলো কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়
বিশেষ প্রতিনিধি: ৮৬ বছর পর ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের প্রথম শহীদ বিপ্লবী প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার এর স্নাতক সার্টিফিকেট হস্তান্তর করলো কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়। বৃহষ্পতিবার বিশ্বাদ্যালয়ের ভাইস চ্যাঞ্চেলর প্রফেসর ড. সোনালী বন্দোপধ্যায় বাংলাদেশ ডেপুটি হাইকমিশনের কর্মকর্তাদের কাছে বাংলার মহীয়সী এই নারী বিপ্লবীর সার্টিফিকেট হস্তান্তর করেন।
ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনের অন্যতম এই নারী মুক্তিযোদ্ধা ১৯৩২ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডিস্টিংশন নিয়ে স্নাতক পাশ করেন। পরীক্ষা দিয়েই বিপ্লবী মাষ্টারদা সূর্য সেনের নেতৃত্বে ব্রিটিশ বিরোধী সশস্ত্র আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়েন। ওই বছর ৬ ফেব্রুয়ারী ছিল সমাবর্তন। কিন্তু তার আগেই শহীদ হন এই অগ্নিকন্যা। পরবর্তীতে তার সনদ আর কেউ নিতে আসেনি।
বাংলার স্বাধীনতার অগ্নিকন্যা প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদারের ডাকনাম রাণী। ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের সময় তার ছদ্মনাম ছিল “ফুলতার”। তিনিই বাংলার প্রথম বিপ্লবী নারী শহীদ ব্যক্তিত্ব। লাজুক স্বভাবের এই বীরকন্যার জন্ম ১৯১১ সালের ৫ মে চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলার ধলঘাট গ্রামে। বাবা জগবন্ধু ওয়াদ্দেদার ছিলেন চট্টগ্রাম পৌরসভা অফিসের হেড কেরানী। মাতা প্রতিভা ওয়াদ্দেদার ছিলেন গৃহিণী। পরিবারের ৬ ভাই-বোনের মধ্যে প্রীতিলতা দ্বিতীয়।
মাত্র ২১ বছর বয়সে স্বাধীনতার জন্য আত্মদান করে সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকারের দৃষ্টান্ত রেখে গেছেন প্রীতিলতা।
২০১২ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তনে বীরকন্যা প্রতিলতা ওয়াদ্দেদারের সার্টিফিকেট প্রদানের জন্য সিদ্ধান্ত নেয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। সম্প্রতি কলকাতার বাংলাদেশ উপ-হাইকমিশনের প্রথম সচিব (প্রেস) ড. মোফাখখারুল ইকবাল এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যাঞ্চেলর এর সাথে যোগাযোগ করেন। তখন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সার্টিফিকেট বাংলাদেশ সরকারের কাছে হস্তান্তর করতে আগ্রহ প্রকাশ করেন। বৃহষ্পতিবার কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যাঞ্চেলরের কাছ থেকে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে বাংলার বীরকন্যার স্নাতক সার্টিফিকেট ও মার্কশীট গ্রহন করেন ডেপুটি হাইকমিশনের হেড অফ চ্যান্সেরি জামাল হোসেন ও প্রথম সচিব (প্রেস) ড. মোফাখখারুল ইকবাল।
এসময় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যাঞ্চেলর প্রফেসর ড. সোনালী বন্দোপধ্যায় বলেন, অনেক বছর পর হলেও মহীয়সী এই নারী বিপ্লবীর বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্টিফিকেট হস্তান্তর করতে পেরে ভালো লাগছে। এই ইতিহাসের স্বাক্ষী হতে পেরে নিজেকে ধন্য মনে করছি।
ডেপুটি হাইকমিশনের প্রথম সচিব (প্রেস) ড. মোফাখখারুল ইকবাল টেলিফোনে নিউ ইয়র্ক মেইলকে বলেন, প্রীতিলতা আমাদের অহংকার আর সাহসের প্রতীক। ১৯৩২ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রামের পাহাড়তলীর যে ইউরোপীয়ান ক্লাব আক্রমনের অপারেশনে তিনি নেতৃত্ব দিয়েছিলেন সেই ক্লাবে লেখা ছিল “ভারতীয় ও কুকুর প্রবেশ নিষেধ”। পুরুষের বেশে সেদিন তিনি এই অপারেশনে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। যুদ্ধে জয়লাভ করে ফেরার পথে তিনি গুলিবিদ্ধ হন। কিন্তু ব্রিটিশদের হাতে ধরা দেননি তিনি। তার আগেই পটাশিয়াম সায়নাইট খেয়ে জীবন দেন বিপ্লবী এই অগ্নিকন্যা। তার এই সার্টিফিকেট আমাদের কাছে মূল্যবান সম্পদ। মহান এই বীর কন্যার স্নাতক পরীক্ষার সার্টিফিকেট গ্রহন করতে পেরে আমরা গর্বিত। ইতিহাসের স্বাক্ষী হতে পেরে ভালো লাগছে। চট্টগ্রামে প্রীতিলতা ট্রাস্টের কাছে সরকারের পক্ষ থেকে এই সার্টিফিকেট হস্তান্তর করা হবে।