৩৪ বছর শিক্ষকতার পরও বিদেশি, আসামে বাঙালির আত্মহত্যা
ভারতের আসাম রাজ্যে নাগরিক তালিকা থেকে বাদ পড়ার পর অবসরপ্রাপ্ত এক শিক্ষক আত্মহত্যা করেছেন। সব প্রমাণ হাতে থাকার পরও নাগরিক তালিকার চূড়ান্ত খসড়ায় তার নাম ওঠেনি।
এর পর বিদেশি হিসেবে সরকারের কাছ থেকে চিঠি পাওয়ার পরেই মানসিকভাবে তিনি ভেঙে পড়েন।
শেষ পর্যন্ত মনের সঙ্গে লড়াইয়ে হেরে গেলেন আসামের দরং জেলার খারুপেটিয়ার অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক তথা আইনজীবী নীরদবরণ দাস। সোমবার নিজের ঘরে গলায় দড়ি দিয়ে আত্মঘাতী হন নীরদ বাবু।
পুলিশ তার জামার পকেট থেকে এনআরসি সেবাকেন্দ্রের দেয়া নোটিশ ও সুইসাইড নোটটি উদ্ধার করেছে। মৃত্যুর জন্য পরিবারের কেউ দায়ী নয়— লিখে পাঁচ ব্যক্তিকে ১০ হাজার টাকার ধার শোধ করার জন্য ওই সুইসাইড নোটে স্ত্রীকে অনুরোধ করে গেছেন তিনি।
তার পরিবারের দাবি, ১৯৭১ সালের আগের সব প্রমাণপত্রই আছে। স্থানীয় শৈলবালা স্কুল থেকে ১৯৬৮ সালে প্রবেশিকা পরীক্ষা দিয়ে নীরদ বাবু গুয়াহাটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমএ পাস করার পরে নিজের স্কুলেই শিক্ষকতায় যোগ দেন।
৩৪ বছর পর ২০১২ সালে অবসর নিয়েছিলেন তিনি। তার পর থেকে মঙ্গলদৈ আদালতে আইনজীবী হিসেবে প্র্যাকটিস করছিলেন। কিন্তু নিজে উকিল হয়েও সবার প্রিয় নীরদ স্যার এনআরসির তালিকায় নাম তুলতে না পেরে ও বিদেশি হিসেবে নোটিশ পাওয়ায় অবসাদগ্রস্ত হয়ে পড়েছিলেন।
এদিন নীরদ বাবুর মৃতদেহ আটকে স্থানীয় মানুষ বিক্ষোভ দেখান। তাদের দাবি, বাঙালি বলেই তার নাম বাদ পড়েছে। সব প্রমাণপত্র থাকা সত্ত্বেও দরং জেলায় বহু বাঙালির নামই বাদ গেছে।
জেলা প্রশাসক অশোক বর্মণ ও এসপি টি শ্রীজিৎ ঘটনাস্থলে এসে পূর্ণ তদন্তের আশ্বাস দেন। প্রতিশ্রুতি দেন, নীরদ বাবুকে বিদেশি সাজানোয় এনআরসি কেন্দ্রের কেউ জড়িত থাকলে তার সাজা হবে।
প্রদেশ কংগ্রেস মুখপাত্র অভিজিৎ মজুমদার বলেন, বিজেপি সরকারের আমলেই এত জন বাঙালির নাম বাদ পড়েছে, যা দায় এড়াতে পারে না তারা।’
জেলাভিত্তিক কোন গোষ্ঠীর কতজনের নাম বাদ পড়েছে, তা নিয়ে শ্বেতপত্র প্রকাশের দাবি জানান তিনি।