৭২ বছর পর স্ত্রীর দেখা, বলা হলো না অনেক কথা..........
মুখোমুখি বসে দু’জন। এক বৃদ্ধা। এক বৃদ্ধ। বৃদ্ধের হাত স্পর্শ করে রেখেছে বৃদ্ধার মাথা। কেবল এইটুকু দেখে বোঝা সম্ভব নয়, এই ছবির আড়ালে রয়ে গিয়েছে দশকের পর দশক পেরনো এক আশ্চর্য কাহিনি। এমন কাহিনি, যা হার মানায় গল্পকথাকেও। ওই বৃদ্ধ-বৃদ্ধা স্বামী-স্ত্রী। অথচ তাঁদের দেখা হলো ৭২ বছর বাদে! ১৯৪৬ থেকে ২০১৮— জীবন ঠিক মিলিয়ে দিল দু’জনকে।
এক সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যাচ্ছে, ছবির দু’জন মানুষের নাম ইকে নারায়ণ নাম্বিয়ার ও সারদা। ১৯৪৬ সালে দু’জনের বিয়ে হয়। দাম্পত্য ভাল করে শুরু হতে না হতেই বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়া। অবশেষে আবার দেখা। দু’জনেই আজ লোলচর্মসার। নারায়ণ ৯০। সারদা ৮৫।
বিয়ের সময় নারায়ণ ১৮ আর সারদা ১৩। কেরলের বাসিন্দা নারায়ণ ও তাঁর বাবা থালিয়ান রমণ নাম্বিয়ার যোগ দিয়েছিলেন সামন্ততন্ত্রের বিরুদ্ধে গড়ে ওঠা এক কৃষক অভ্যুত্থানের পুরোভাগে। কাভুম্বাই কৃষক আন্দোলন নামে সেই আন্দোলন ইতিহাসে ঠাঁই করে নিয়েছে। সেই সময়ে ইংরেজ আমল। সামন্ততান্ত্রিক প্রভুদের সঙ্গে অশুভ আঁতাত বিদেশি শাসকের। কারাকাট্টিডাম নয়নার নামের এক অত্যাচারী শোষনকারীর বাড়ির কাছে পাহাড়ে উঠে পড়েন নারায়ণ ও তাঁর বাবা-সহ ৫০০ কৃষক। কিন্তু আন্দোলন ব্যর্থ হয়ে যায় মালাবার স্পেশাল পুলিশের চালানো গুলির আঘাতে। শেষ পর্যন্ত পাঁচ জন মারা যান। তবে নারায়ণ আহত হলেও প্রাণে বাঁচেন। শরীরে ষোলোটি বুলেট বিঁধে গেলেও রক্ষা পান তিনি। জেলে বন্দি থাকেন আট বছর। তাঁর বাবা যদিও জেলেই গুলি খেয়ে মারা যান।
এদিকে তাঁর বাড়িতে নিয়মিত অত্যাচার চালাচ্ছিল পুলিশ। বাড়িতে আগুনও লাগিয়ে দেওয়া হয়। পুত্রবধূকে বাপের বাড়িতে ফেরত পাঠিয়ে দেন নারায়ণের মা ও অন্যান্য আত্মীয়রা। সারদার বিয়ে হয়ে যায় অন্যত্র।
আট বছর বাদে ছাড়া পেয়ে ফিরে এসে নারায়ণও নতুন করে সংসার পাতেন। এর পরে জীবনানন্দের কবিতার মতো ‘জীবন গিয়েছে চলে আমাদের কুড়ি কুড়ি, বছরের পার’। নারায়ণের ভাগ্নি সান্থা কাভুমবায়ী (যিনি উপন্যাসও লিখেছেন নারায়ণের জীবন নিয়ে) ও সারদার ছেলে ভর্গভনের মধ্যে যোগাযোগ হয়। তাঁরা ঠিক করেন, সারদা ও নারায়ণের মধ্যে আবার দেখা হবে।
তাই হলো শেষমেশ। ভর্গভনের বাড়িতে দেখা হয় দু’জনের। কথাও হয়। যদিও সারদার চোখ নামানো থাকে মাটিরই দিকে। সেখান দিয়ে চলে যেতে থাকে পুরনো দিনের ঘটনার সারি। তবে নিশ্চুপ পুরোপুরি ছিলেন না তিনি। আলতো স্বরে জানিয়ে দেন, প্রথম শ্বশুরবাড়ির স্মৃতি এখনও অটুট তাঁর স্মৃতিতে। মনে পড়ে, কত আদরযত্নে তাঁকে রেখেছিলেন শ্বশুরবাড়ির লোক।
কথা শেষে নারায়ণ হাত রাখেন সারদার মাথায়। বলেন, ‘‘আমি চললাম।’’ লাজুক সারদার দু’চোখে তখনও যেন নববধূর ব্রীড়া। অশীতিপর মহিলার চোখ তখনও নামানো মাটির দিকে। বলা কথার পাশে রয়ে গেল কতই না বলা কথা।
বাহাত্তর বছরের জমানো কথা কি এক দেখায় ফুরোতে পারে ?
সূত্র: এবেলা