নীরব অসহযোগ আন্দোলন কাশ্মীরে
কাশ্মীরের বিশেষ রাজ্যের মর্যাদা কেড়ে নেওয়ার এক মাস পেরিয়ে গেলেও যে কোনো পরিস্থিতি সামাল দিতে সেখানে বিপুল সংখ্যক সেনা মোতায়েন করে রেখেছে ভারত।
তবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক দাবি করে টেলিফোন, মোবাইল নেটওয়ার্ক ও ইন্টারনেট সেবার ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা আংশিক প্রত্যাহার করেছে কেন্দ্রীয় সরকার।
জম্মু ও কাশ্মীরের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, উপত্যকার ৯০ শতাংশ এলাকা থেকে দিনের বেলা নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়। স্কুলগুলো খুলে দেওয়া হয়েছে এবং টেলিফোন পরিষেবা পুনরায় চালু হয়েছে।
প্রশ্ন উঠেছে আদতেই কি কাশ্মীরের পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়েছে?
কাশ্মীরের পরিস্থিতি এখনো স্বাভাবিক হয় নি। উপত্যকার শিক্ষার্থী, দোকানদার এবং সরকারি ও বেসরকারি কর্মীরা রাজ্যজুড়ে অসহযোগ কর্মসূচি পালন করছেন।
শ্রীনগরের পুরাতন এলাকার এক দোকানদার বলেন, ‘আমাদের পরিচিতি বিপন্ন এবং এর সুরক্ষা আমাদের অগ্রাধিকার। তাদেরকে এটা ফিরিয়ে দিতে বলুন এবং আমরা আমাদের ব্যবসা পুনরায় চালু করব।’
বিশেষ রাজ্যের মর্যাদা বাতিলের আগে কাশ্মীরে হরতাল ও বিক্ষোভের মতো রাজনৈতিক কর্মসূচি ঘোষণা করতো বিচ্ছিন্নতাবাদী দলগুলো। এবার অবশ্য কাশ্মীরের স্বাধীনতার পক্ষে হোক কিংবা পাকিস্তানের সঙ্গে যোগ দেওয়ার পক্ষে হোক- সব মতের বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতাসহ প্রাক্তন তিন মুখ্যমন্ত্রী ও নাগরিক সমাজের নেতাদের কারাগারে আটক রেখেছে ভারত সরকার।
৫ আগস্টের পর কাশ্মীরজুড়ে বিলি করা পোস্টারগুলোতে স্থানীয়দের নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী কেনার সুবিধার্থে দোকানদারদের কেবল ভোর ও সন্ধ্যায় তাদের দোকান খোলা রাখতে বলা হয়েছে। শ্রীনগরের বাণিজ্যিক এলাকার অধিকাংশ দোকানই বন্ধ রাখা হয়েছে।
নিরাপত্তা বাহিনী দোকানীদের স্বাভাবিক সূচি অনুযায়ী দোকান খোলা রাখতে বললেও অধিকাংশ ব্যবসায়ী তা প্রত্যাখ্যান করেছেন।
মোহাম্মদ আয়ুব নামে শ্রীনগরের এক দোকানদার বলেন, ‘আমরা বিকেলে লোকদের জন্য দোকান খোলা রাখছি। তবে সেনারা আমাদেরকে হয় সারাদিন খোলা রাখতে নতুবা একেবারে বন্ধ রাখতে বলছে।’
রোহিত কানসাল নামে রাজ্য সরকারের এক মুখপাত্র দাবি করেন, জাতীয়তাবাদ বিরোধী শক্তি দোকানদারদের তাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খুলতে দিচ্ছে না। ‘নিরাপত্তা বাহিনী বিষয়টি নোট রেখেছে’, বলেন তিনি।
স্কুল ও সরকারি দপ্তরগুলোতেও উপস্থিতির হার নগন্য। নিরাপত্তার অভাব দাবি করে স্কুলগুলোতে শিক্ষার্থীদের পাঠাচ্ছেন না অভিভাবকরা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা জানান, পশ্চিম শ্রীনগরে সরকারের আবাসন ও নগর উন্নয়নের দপ্তরের ৩০০ কর্মীর মধ্যে স্রেফ ৩০ জন হাজির থাকেন।
তিনি বলেন, ‘যাদের বাড়ি কাছাকাছি কেবল তারা আসেন, অন্যরা সপ্তাহে একবার আসেন।’
শ্রীনগরের ঐতিহাসিক ডাল লেক পরিষ্কারের কাজে নিয়োজিত সরকারি কর্মচারীরা কর্মস্থলে অনুপস্থিত কয়েক সপ্তাহ। এর ফলে লেকের পানির ওপর শ্যাওলার স্তর পড়ে গেছে। কর্মচারীদের অনুপস্থিতির কারণে বেহলা অবস্থা ডাক বিভাগেও। কাশ্মীরে ইতোমধ্যে অনলাইনে খুচরা পণ্য বিক্রি প্রতিষ্ঠান অ্যামাজন তাদের কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছে বলে জানিয়েছে।