প্রতিবাদে রাজপথে মমতা: মরে গেলেও এনআরসি চালু করতে দেব না
শুভজিৎ পুততুন্ড, কলকাতা থেকে: জাতীয় নাগরিক পঞ্জি (এনআরসি)-এর প্রতিবাদ জানিয়ে পথে নামলেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যনার্জি। বৃহস্পতিবার দুপুরে উত্তর কলকাতার সিঁথির মোড় থেকে শ্যামবাজার পর্যন্ত প্রতিবাদ মিছিলে পা মেলালেন মমতা। সাথে ছিলেন রাজ্যের পুর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম, যুব কল্যাণ মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস, সংসদ সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়, পরিষদীয় মন্ত্রী তাপস রায়, রাজ্যসভার সাংসদ শান্তনু সেন, সাবেক সাংসদ দীনেশ ত্রিবেদী, বিধায়ক শশী পাঁজা, নয়না ব্যানার্জি সহ কাউন্সিলর, দলের অসংখ্য কর্মী-সমর্থকরা।
উত্তর কলকাতা তৃণমূল জয় হিন্দ বাহিনীর উদ্যোগে দুপুর আড়াইটে নাগাদ মিছিল শুরু হয়। এরপর প্রায় সাড়ে কিলোমিটার পথ পেরিয়ে রবীন্দ্রভারতীয়, চিড়িয়ামোড়, চুনীবাবুর বাজার, পাইকপাড়া, টালা ব্রিজ, বাগবাজার মোড় হয়ে বিকাল চারটা নাগাদ মিছিল পৌঁছয় শ্যামবাজার পর্যন্ত।
মঞ্চে উঠে বিজেপির বিরুদ্ধে দেশ ভাগ করার অভিযোগ এনে মুখ্যমন্ত্রী বলেন "বাংলার সংস্কৃতি নষ্ট করার চক্রান্ত চলছে, কিন্তু বাংলার সংস্কৃতিই দেশের সংস্কৃতি।" কেন্দ্রকে হুঁশিয়ারি দিয়ে তার মন্তব্য "আরেকটা দেশ ভাগ করার চেষ্টা করবেন না, আরেকটা ভারত ভাগ করার চেষ্টা করবেন না। মহারাষ্ট্রে গিয়ে হিন্দিভাষীদের যদি বলা হয় দেশ ছাড়ো, তবে তারা কোথায় যাবে? বাংলায় যদি বলা হয় বিহারী লোক এখান থেকে চলে যাও, উত্তরপ্রদেশে গিয়ে যদি বলা হয় এখান থেকে বাঙালিরা চলে যাও বা দিল্লি থেকে বাংলা ভাষায় কথা বললেই বাংলাদেশি বলে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে দূর করা হয় সেটা মান হবে না। যারা এটা করবেন তারা মনে রাখবেন আগুন নিয়ে খেলবেন না। আমরা সবাই দেশকে রক্ষা করার জন্য তৈরি আছি।"
আসামে এন.আর.সির নামে ১৯ লাখ মানুষের নাম বাদ গেছে। তারমধ্যে ১২ লক্ষ হিন্দু আছে, ১ লক্ষ গোর্খা আছে, মুসলিম আছে, বৌদ্ধ আছে।"
তার অভিমত "স্বাধীনতার ৭৩ বছর পরেও আমাদের স্বাধীনতার প্রমাণ দিতে হবে? এখানে এসে ওরা (বিজেপি) বলছে দুই কোটি মানুষের নাম বাদ দেবে, আমি বলছি দুটো লোকের গায়ে একবার হাত দিয়ে দেখো? এত সস্তা নয়। লাখ লাখ পুলিস দিয়ে আসামের মানুষের মুখ বন্ধ করা যাবে কিন্তু বাংলার মানুষের মুখ বন্ধ করা যাবে না।" তিনি আরো বলেন "
তার আরও মন্তব্য "আসামে যাদের নাম বাদ গেছে, তাদের জন্য কারাগার তৈরি করছে। তাদের সবাইকে কারাগারে রেখে দেবে কিন্তু বাংলায় আমি যতদিন বেঁচে থাকব, তোমার ক্ষমতা থাকলে তুমি এনআরসি করে দেখাও। আমি আমি মরে গেলেও আমার দল করতে দেবে না। তাছাড়া আমি চারটে প্রজন্ম তৈরি করে দিয়ে গেছি, তাই কাজটা সহজ নয়।"
বিজেপিকে উদেশ্য করে তার স্পষ্ট বার্তা "হিন্দু, মুসলিম, শিখ, ক্রিস্টান-ধর্মের ভিত্তিতে, ভাষার ভিত্তিতে, বর্ণের ভিত্তিতে বা জাতীর ভিত্তিতে এন.আর.সি মানবো না।"
দেশ জুড়ে অর্থনৈতিক সঙ্কটের অভিযোগ তুলে মমতা বলেন এই সঙ্কট ঢাকতেই এই ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন "এশিয়ায় ভারতের জিডিপি সবচেয়ে কম ৫ শতাংশ। বাংলাদেশ, পাকিস্তান এর পরেও ভারতের স্থান।"
মমতার মিছিলকে কেন্দ্র করে কোন রকম অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে মিছিলের যাত্রাপথে আঁটোশাটো নিরাপত্তা ব্যবস্থা করা হয়েছিল।
এনআরসির প্রতিবাদ জানিয়ে সম্প্রতি রাজ্য বিধানসভায় বেসরকারি প্রস্তাবও পাাশ করানো হয়েছে। বাম ও কংগ্রেস প্রস্তাবকে সমর্থন করলেও বিজেপি তার বিরোধিতা করে ওয়াকআউট করে। এই ইস্যুতে তার দল গত ৭ সেপ্টেম্বর থেকে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে মিটিং-মিছিল শুরু করলেও তৃণমূল প্রধানের পথে নামাটা অনেক বেশি তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছেন অনেকেই।
গত ৩১ আগষ্ট অসমে প্রকাশিত হয়েছে জাতীয় নাগরিক পঞ্জি (এনআরসি) চূড়ান্ত তালিকা। তালিকায় অন্তর্ভুক্তি হয়েছে ৩ কোটি নাম। তালিকা থেকে বাদ পড়েছে ১৯ লাখ বাসিন্দার নাম। এই বিষয়টি নিয়ে রাজনৈতিক মতপাথ্যর্ক থাকলেও অসমের মতো বাংলাতেও এনআরসি চালুর দাবিতে তৎপরতা শুরু হয়েছে বিজেপি শিবিরে। গত লোকসভার ভোটে নির্বাচনী প্রচারণায় এসে বাংলায় এনআরসি চালু করা হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন দলের কেন্দ্রীয় সভাপতি অমিত শাহ। যদিও বাংলায় কোনভাবেই তা চালু করতে দেওয়া হবে না বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছিল তৃণমূল।