আবারও নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল আনছে ভারত
ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার নাগরিকত্ব আইনে পরিবর্তন আনার জন্য আবারও একটি বিল দেশটির পার্লামেন্টে পেশ করছে।
সোমবার (১৮ নভেম্ব) থেকে শুরু শীতকালীন অধিবেশনের কর্মসূচিতেই বিতর্কিত এই বিলের উল্লেখ করা হয়েছে।
বিলটি আগেও একবার পেশ করা হয়েছিল। কিন্তু আসামসহ উত্তরপূর্বাঞ্চল জুড়ে ব্যাপক বিক্ষোভ হওয়ায় তখন সেটি পাশ করানো যায়নি। ইতোমধ্যেই লোকসভার মেয়াদও শেষ হয়ে যাওয়ায় নতুন করে বিল পেশ করতে হচ্ছে সরকারকে।
এই বিল পাশ হলে নাগরিকত্ব আইনে পরিবর্তন এনে বাংলাদেশ, পাকিস্তান আর আফগানিস্তানের হিন্দু-বৌদ্ধ, শিখ, খ্রিষ্টান এবং জৈন যারা কথিত ধর্মীয় নির্যাতনের কারণে ২০১৪ সাল পর্যন্ত ভারতে চলে এসেছেন তারা নাগরিকত্বের আবেদন করতে পারবেন।
ওই বিলের বিরুদ্ধে আসাম আর উত্তরপূর্বাঞ্চল জুড়ে ব্যাপক বিক্ষোভ হয়েছিল। প্রতিবাদে নেমেছিল অসমীয়া জাতীয়তাবাদী সংগঠনগুলোর সঙ্গেই উত্তরপূর্বের বেশ কয়েকটি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীরাও। এবারও বিল পেশ করা হবে এমন খবর প্রকাশ হতেই আসামের নানা জায়গায় বিক্ষোভ হচ্ছে।
নাগরিকত্ব বিলের বিরুদ্ধে যেসব সংগঠন পথে নেমেছে তার মধ্যে অন্যতম কৃষক মুক্তি সংগ্রাম সমিতি। সংগঠনটির কেন্দ্রীয় প্রচার সচিব রাতুল হোসেইন বলেন, ভারতীয় সংবিধানের মূল আধার হচ্ছে ধর্মনিরপেক্ষতা। কিন্তু এই বিলে সেটাকেই ধ্বংস করে দিয়ে হিন্দু রাষ্ট্রের দিকে নিয়ে যাওয়ার প্রচেষ্টা হচ্ছে। এদেশের নাগরিকত্ব পেতে হলে ধর্ম কোনও ভিত্তি হতে পারে না, আর এই বিলে সেটাই করা হচ্ছে।
জাতীয় নাগরিক পঞ্জীর চূড়ান্ত তালিকা এনআরসিতে যে ১৯ লাখ মানুষের নাম বাদ পড়েছে, তাদের মধ্যে মুসলমান ছাড়া অন্যদের নাগরিকত্ব দেওয়ার জন্যই এই বিল আনা হচ্ছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
আসামের অনেক বাংলাভাষী হিন্দুর নাম এনআরসি থেকে বাদ পড়েছে। তারা বলেছেন, নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল পাস হয়ে গেলেই যে তাদের সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে এমনটাই বিজেপির নেতারা তাদের বলেছেন।
বিলটির বিরুদ্ধে প্রতিবাদের মূল কারণ ছিল নাগরিকত্ব আইনে পরিবর্তন আনা হলে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের আগে বাংলাদেশ থেকে ভারতে আসা ব্যক্তিদের নাগরিকত্ব দেওয়ার যে শর্ত আসাম চুক্তিতে আছে, সেটা লঙ্ঘিত হবে।
বিজেপির রাজ্য সভাপতি রঞ্জিত দাশ বলেন, যেভাবে ৩৭০ অনুচ্ছেদ বাতিলের বিল পাস হয়েছে লোকসভা আর রাজ্যসভায়, সেভাবেই নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলও পাস হয়ে যাবে বলেই তাদের আশা।
আগের বারের প্রতিবাদের কথা মাথায় রেখে এবার আগে ভাগেই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ উত্তর-পূর্বের অন্যান্য রাজ্যে মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে আলোচনা করেছেন বলেও জানিয়েছেন তিনি।