”ভারত ছাড়ো” নোটিশ পাওয়া সেই বাংলাদেশি ছাত্রীর পক্ষে লড়বেন বিশ্বভারতীর শিক্ষকেরা: আইনজীবী নিয়োগ
প্রিয়া সরদার, কলকাতা থেকে: ফেসবুকে আন্দোলনের ছবি পোস্ট করার অপরাধে “ভারত ছাড়ো” নোটিশ পাওয়া সেই বাংলাদেশী ছাত্রী আফসারা মিমের পাশে দাঁড়িয়েছে তার বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। সরকারের সিদ্ধান্তের বিপক্ষে আইনজীবী নিয়োগ করা হয়েছে।
এনআরসি ও সিএএ নিয়ে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গনে বিক্ষোভ হলে তারই একটি ছবি সম্প্রতি ফেসবুকে পোস্ট করে বাংলাদেশের ছাত্রী আফসারা আনিকা মিম। ছবি পোস্ট করার পর তা ভাইরাল হয়ে যায়। সরকার বিরোধী কর্মকান্ডের সাথে সে জড়িত বলে অনেকেই রব তোলেন। এরপর গত বুধবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিদেশি নিবন্ধকের অঞ্চলিক কার্যালয় থেকে আফসারা একটি নোটিশ পায়, যাতে বলা হয়েছে "ভারত ছাড়ো"। ১৫ দিন সময় দেওয়া হয়েছে আফসারাকে। শুধু তাই নয় নোটিসে উল্লেখ করা হয়েছে যে, বাংলাদেশি পাসপোর্টধারী স্টুডেন্ট ভিসা নিয়ে ভারতে পড়তে এসে সরকার বিরোধী কর্মকান্ডে জড়িত হয়ে ভিসার শর্ত লঙ্ঘন করছে। এরই প্রতিবাদে আইনি প্রতিকার খুঁজে বের করতে বৃহস্পতিবার বিশ্বভারতীর কয়েকজন অধ্যাপকদের একটি সম্মিলিত দল কলকাতার নামজাদা আইনজীবীদের দ্বারস্থ হন আফসারাকে আইনি পথে সব ধরণের সাহায্য করতে।
হাইকোর্টের অন্যতম আইনজীবী শামিম আহমেদ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে জানান, আফসারাকে দেওয়া নোটিসকে আইনগতভাবে চ্যালেঞ্জ করার সুযোগ রয়েছে। কারণ তাতে ‘সরকারবিরোধী কর্মকাণ্ডে’ তার জড়িত থাকার কোনো প্রমাণ নেই। “ওই আদেশ ও তার ফেইসবুক পোস্ট আমি ভালভাবে খতিয়ে দেখেছি।আদেশে এমন কোনো নির্দিষ্ট কর্মকাণ্ডের কথা উল্লেখ নেই যা দিয়ে প্রমাণিত হয় ওই ছাত্রী সরকারের বিরুদ্ধে কিছু করেছেন। মন্তব্য করা তার অধিকার এবং এর জন্য কেন্দ্র থেকে তাকে দেশ ছাড়তে বলা খুবই অস্পষ্ট একটা কারণ। এমনকি ওই নোটিস দেওয়ার আগে তাকে নিজের বক্তব্য উপস্থাপনের সুযোগ দেওয়া হয়নি।”
অন্যদিকে বিশ্ব বিদ্যালয়ের অর্থনীতির ছাত্র স্বপ্নীল মুখার্জী জানায়, “বিশ্বভারতী এমন একটা জায়গা যেখানে বিভিন্ন দেশ থেকে শিক্ষার্থীরা পড়তে আসে এবং আমাদের বন্ধু হয়ে যান। এদের বেশিরভাগই বাংলাদেশের। আমি নিশ্চিত করে বলতে পারি, ওই ছাত্রী মোটেই কোনো প্রতিবাদে অংশ নেননি। আমরা তার সাথে আছি।”
পাশাপাশি আফসারার ভারত ছাড়ার নোটিসে বিশ্ববিদ্যালয়ের এভিপির নেতা অপূর্ব শারদ বলেছেন, তার বিরুদ্ধে তদন্ত ও পদক্ষেপের দাবি জানিয়ে তারাই গত ২৩ জানুয়ারি ভিসি বিদ্যুৎ চক্রবর্তীর কাছে লিখিত দাবি জানিয়েছিলেন। ওই চিঠির একটি অনুলিপি তারা দিল্লিতে প্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রীর কার্যালয়েও পাঠিয়েছেন। “ভিসির কাছে লেখা চিঠিতে আমরা ওই মেয়ের সিএএবিরোধী ভূমিকার কথা তুলে ধরেছিলাম।
বিশ্ববিদ্যালয়ের এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে বেশ তীব্র প্রতিক্রিয়া শুরু হয়ে গেছে ওপর মহলে। পরিশেষ পাওয়া খবরে জানা গেছে আইনজীবী আফসারাকে আইনি সহায়তা দেবেন বলে জানিয়েছেন। সিএএ বিরোধী বিক্ষোভে যেসব শিক্ষার্থীরা অংশ নিয়েছিলেন তারাও নিশ্চিত করেছেন যে আফসারা এধরনের কোনো কর্মকান্ডের সাথে যুক্ত নয়।