চলে গেলেন উপ-মহাদেশের কিংবদন্তী রাজনীতিবিদ প্রণব মুখোপাধ্যায়
মেইল ডেস্ক: চলে গেলেন উপ-মহাদেশের কিংবদন্তী রাজনীতিবিদ ভারতের সাবেক রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়। করোনায় আক্রান্ত হয়ে দিল্লীর সেনা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন তিনি। সোমবার সন্ধ্যা সোয়া ৬টার দিকে তিনি মারা যান। তার বয়স হয়েছিল ৮৪ বছর।
প্রণব মুখোপাধ্যায়ের মৃত্যুর মধ্য দিয়ে ভারতীয় রাজনীতির এক বিরাট অধ্যায়ের অবসান হল৷ উপ-মহাদেশের রাজনীতিতে অপূরণীয় শূন্যতা তৈরি হলো।
প্রণব মুখোপাধ্যায়ের ছেলে অভিজিৎ মুখোপাধ্যায় এক টুইটে লিখেছেন, ভারি হৃদয় নিয়ে আপনাদের জানাচ্ছি, আমার বাবা প্রণব মুখোপাধ্যায় আরআর হাসপাতালের ডাক্তারদের সব চেষ্টা এবং ভারতজুড়ে মানুষের প্রার্থনা ও দোয়া সত্ত্বেও এইমাত্র মারা গেছেন।
প্রবীণ এই রাজনীতিবিদের মৃত্যুতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এক টুইটে লিছেন, 'ভারতরত্ন প্রণব মুখোপাধ্যায়ের প্রয়াণে ভারত আজ শোকগ্রস্থ।'
প্রণবের পদধূলি নেওয়ার একটি ছবি টুইটে শেয়ার করে মোদী লিখেছেন, 'দেশের উন্নয়নের ধারায় তিনি অবিস্মরণীয় ছাপ রেখে গেছেন। একজন অসাধারণ পণ্ডিত, এক গৌরবময় রাষ্ট্রনায়ক, রাজনীতির সব মহল ও সমাজের সব শ্রেণির মানুষের শ্রদ্ধা পেয়েছেন তিনি।'
ভারতের সাবেক রাষ্ট্রপতি, উপমহাদেশের বরেণ্য রাজনীতিক, বাংলাদেশের অকৃত্রিম বন্ধু প্রণব মুখার্জি- এর মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শোকে মুহ্যমান ও স্মৃতিকাতর শেখ হাসিনা প্রণব মুখার্জির সাথে বঙ্গবন্ধু পরিবার ও শেখ হাসিনার নিজের বহু স্মৃতি প্রধানমন্ত্রী স্মরণ করেন।
এক শোকবার্তায় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে একজন রাজনীতিবিদ ও আমাদের পরম সুহৃদ হিসেবে প্রণব মুখার্জির অনন্য অবদান কখনও বিস্মৃত হবার নয়। আমি সবসময় মুক্তিযুদ্ধে তাঁর অসামান্য অবদান শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করি।
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ১৯৭৫ এর ১৫ আগস্টে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার পর ভারতে নির্বাসিত থাকাকালীন প্রণব মুখার্জি আমাদের সবসময় সহযোগিতা করেছেন। এমন দুঃসময়ে তিনি আমার পরিবারের খোঁজখবর রাখতেন এবং যেকোন প্রয়োজনে আমার ছোট বোন শেখ রেহানা ও আমাদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন। দেশের ফেরার পরও প্রণব মুখার্জির সহযোগিতা এবং উৎসাহ দিয়েছেন। তিনি আমাদের অভিভাবক ও পারিবারিক বন্ধু। যেকোন সংকটে তিনি সাহস যুগিয়েছেন।
শেখ হাসিনা বলেন, প্রণব মুখার্জির মৃত্যুতে ভারত হারালো একজন বিজ্ঞ ও দেশপ্রেমিক নেতাকে আর বাংলাদেশ হারালো একজন আপনজনকে। তিনি উপমহাদেশের রাজনীতিতে এক উজ্জ্বল নক্ষত্র হয়ে বেঁচে থাকবেন। প্রধানমন্ত্রী তাঁর বিদেহী আত্মার শান্তি কামনা করেন এবং তাঁর শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।
এর আগে আজ দুপুরেই দিল্লির সামরিক হাসপাতালের এক বুলেটিনে জানানো হয়, প্রণব মুখোপাধ্যায়ের শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়েছে।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, আগের চেয়ে প্রণব মুখোপাধ্যায়ের শারীরিক অবস্থা আরও খারাপের দিকে। তার ফুসফুসের সংক্রমণ আরও বেড়ে গেছে। বর্তমানে সেপটিক শকে রয়েছেন তিনি। এই মুহূর্তে একটি বিশেষজ্ঞ দলের তত্ত্বাবধানে তার চিকিৎসা চলছে।
হাসপাতাল সূত্র জানায়, রোববার থেকে তার শারীরিক অবস্থা খারাপ হতে শুরু করেছে। তার ফুসফুসের সংক্রমণ আরও ছড়িয়ে পড়েছে। তাকে গভীর কোমায় ভেন্টিলেশন সাপোর্টে রাখা হয়েছে।
গত ৯ আগস্ট রাতে দিল্লির বাসভবনে পড়ে গিয়ে মাথায় আঘাত পান প্রণব মুখোপাধ্যায়। পরদিন চিকিৎসকের পরামর্শে দিল্লির আর্মি হসপিটাল রিসার্চ অ্যান্ড রেফারেলে ভর্তি করা হয় তাকে। জরুরি ভিত্তিতে অস্ত্রোপচার করা হয় তার।
অস্ত্রোপচারের প্রস্তুতি পর্বে প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যপরীক্ষা করতে গিয়ে প্রণব মুখোপাধ্যায়ের দেহে করোনাভাইরাসের অস্তিত্ব ধরা পড়ে। অস্ত্রোপচারের পর অবস্থার অবনতি হলে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের নিয়ে তৈরি মেডিকেল বোর্ডের অধীনে তাকে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে ভেন্টিলেশনে রাখা হয়।
প্রণব মুখোপাধ্যায় ২০১২ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত ভারতের রাষ্ট্রপতি ছিলেন। গত বছর তিনি ভারতের সর্বোচ্চ বেসামরিক খেতাব 'ভারতরত্ন' উপাধিতে ভূষিত হন।