ভার্চুয়াল পাঠে বিন্দু বিন্দু জল | আনোয়ারা আজাদ
মনোযোগ দিয়ে লেখাটা তিনবার পড়েও নতুন কোনো ক্লু খুঁজে পেল না টিয়া। কী যে একটা ভ্যানতারা সমস্যায় পড়েছে সে।
পৃথিবীতে এখন হাজারটা সমস্যা, পত্রিকার পাতাগুলো নানারকম সমস্যা নিয়ে চমৎকার আয়োজন, আর সে অযথাই এই ঝামেলায় পড়ে মাথা জ্যাম করে সিগনালে বসে আছে।
এই যে থাইল্যান্ডে খুদে ফুটবলাররা গুহার ভেতরে আটকা পড়েছিল বারো দিন ধরে, থাইল্যান্ডবাসীসহ সারা দুনিয়ার মানুষও তো কিছুটা টেনশন ফিল করেছিল, নাকি? এ তো আর রোহিঙ্গা সমস্যা নয়! অভিবাসী সমস্যা নয়! বছরের পর বছর ঝুলে থাকবে!
গুহায় আটকে পড়া, মানে একটা থ্রিল। মারা যাবে, কী বেঁচে যাবে! খবরের পার্থক্য এখানেই। খবরের মধ্যে উত্তেজক টনিক না থাকলে মানুষ পাত্তাই দেয় না! প্রতিদিন সমস্যাগুলো এক-এক রকম ডাইমেনশন নিয়ে হাজির হয়। আর বহুমাত্রিক ডাইমেনশন নিয়েই আমাদের জীবন।
কোনোটা অক্টোপাসের মতো জড়িয়ে ধরে আবার কোনোটা শুধু খানিকটা গুঁতো মেরে জাগিয়ে দিয়ে চলে যায়। ওই পর্যন্তই। পাকিস্তানের ইলেকশন নিয়ে তেমনটা মাথাব্যথা ছিল না কারও, হলপ করে বলতে পারবে টিয়া। পাকিস্তান এমনিতেই ‘গন কেস’।
ট্রাম্পকে নিয়ে মানুষ সামান্য টেনশনে ছিল, হাজার হলেও বিশ্ব মাতব্বর কিন্তু পাকিস্তানকে নিয়ে? ফুঃ! ইমরান খানের মতো কারেক্টারের নেতাই ওদের দরকার। যেমন দেশ তেমন নেতা! পাকা খেলোয়াড়, মাঠ থেকে বিদায় নিয়ে এখন গদিতে বসে খেলা দেখতে আগ্রহী! মার ছক্কা!
প্রথমে খুব আহ্লাদ করে সুপ্রভাত, শুভরাত্রি ইত্যাদি জানিয়ে প্রতিদিন টেকস্ট পাঠাতেন ভদ্রলোক। উত্তর দেয়নি টিয়া। কেন দেবে? প্রোফাইলসহ কোথাও কোনো ছবি নেই। সাত আটদিন যাওয়ার পর কয়েকবার মনে হয়েছে আনফ্রেন্ড করে দেয়। বদ মানুষে ভরে গেছে ভার্চুয়াল দুনিয়া!
গেটের দারোয়ানও শিক্ষককে রিকু পাঠাতে সাহস পায়! এখানে উঁচু নিচুর বিষয় নয়, বিষয় হল ওজনের। মানুষকে নিজের ওজন বুঝে এগোতে হয়। কোন ফিকিরে যে মানুষ এ জগতে ঘোরে এখন কেউ ধরতেই পারে না।
একেবারে কাছের বন্ধুদের এরকম শুভেচ্ছা দেয়া-নেয়ার বিষয় আলাদা কিন্তু প্রোফাইলে নিজের ছবি কিংবা অন্য কোথাও একটা ঝলকানিও নেই, এমন মানুষের কাছ থেকে এসব শুভেচ্ছার কদমফুল খুব সুখের লাগে না। তার পরও এসব আদিখ্যেতা বেশ চলে এখন।
মন না চাইলেও স্টিকার খুঁজে খুঁজে রিপ্লাই দিতে হয়। শুভেচ্ছাই তো! ‘বাদল দিনের প্রথম কদমফুল’ লিখে, ফুলের ছবি এগিয়ে দিল! যাহ্ বাবা, এ আবার কোন ধরনের কদমফুল গো?
তো, কিছুদিন এরকম শুভেচ্ছা জানানোর পর শুরু হল নানারকম চমৎকার সব পেইন্টিং পাঠানো। পেইন্টিং দেখে খানিকটা নড়ে বসে টিয়া। পেইন্টিংগুলো কার জানতে চাইলে এড়িয়ে গিয়ে জগজিৎ সিংয়ের কিছু গানের লিংক পাঠিয়ে দিলেন তিনি, সঙ্গে চমৎকার কয়েকটি বাক্য। বাক্য দেখার পর সন্দেহ হল টিয়ার।
এত গেটের দারোয়ান টাইপ কেউ নয়। যথেষ্ট শিক্ষিত এবং অবশ্যই বয়স্ক। কম বয়স্করা সম্ভবত জগজিৎ সিংয়ের গান শোনে না। তাহলে লুকোচুরি কেন? বয়স্ক বলেই কি আত্মপ্রকাশে দ্বিধা? বহু বয়স্ক মানুষের আইডি আছে ফেবুতে। সমানে লিখছেন, শেয়ার করছেন, বন্ধু হচ্ছেন।
শেষে পুরো প্রোফাইল ঘেঁটে ত্যানাত্যানা করে টিয়া। বেশ কিছু গবেষণামূলক লেখা সঙ্গে বিভিন্ন জায়গার অরাজকতা নিয়ে কিছু শেয়ার। ওরেব্বাস, সাম্প্রদায়িকতা নিয়েও দু-একটা লেখা ও ছবি আছে।
সেগুলো পড়ে উগ্রবাদিতার কোনো গন্ধ পাওয়া না গেলেও ফ্রেন্ড লিস্টের বেশিরভাগই পশ্চিমবঙ্গের ও তিনি বাংলাদেশে বাস করেন বলে জানা গেল। শুধু সুরতটাই বোঝা গেল না!
পুরনো সম্পর্কের কেউ পরীক্ষা করছে কিংবা বদলা নিচ্ছে কিনা ভাবনাটা মৌমাছির মতো ঘুনঘুন করে ঘুরলেও আইডিটা আনফ্রেন্ড করতে পারছে না টিয়া। অবশ্য পারছে না বললে ভুল হবে; আসলে করছে না। কারণ সে ধরতে চাইছে। আনফ্রেন্ড করে দিলে তো চোর ধরা যাবে না! লেখা পড়ে মনে হয়েছে যথেষ্ট পড়ুয়া তো বটেই, দুনিয়াদারির খোঁজ-টোজও ভালোই রাখেন। ইচ্ছায় কিংবা অনিচ্ছায় হোক, তার সঙ্গে ফেবুতে জুড়ে গেছে টিয়া। তবে লেখাগুলো পড়ে ভদ্রলোকের প্রতি এক ধরনের শ্রদ্ধা হালকা করে হলেও তৈরি হচ্ছে টের পাচ্ছে সে। যদিও প্রোফাইলে বা অ্যালবামে নিজের ও পরিবারের কোনো ছবি না দিয়ে লুকোচুরি খেলছেন তিনি তারপরও তার লেখাগুলোয় মুগ্ধ হচ্ছে টিয়া। তবে সহজে গলে যাওয়া মোমবাত্তি টাইপের মেয়ে নয় সে; এটুকু কনফিডেন্স আছে বলেই ঘুঘুটাকে ধরতে চাইছে!
‘মোববাত্তি টাইপ’ শব্দটা টোকা দিতেই সেই ভদ্রলোকের কথা মাথায় আসে টিয়ার, যার সঙ্গে প্রায় চার বছর আগে পুরো একবছর ই-মেইলে যোগাযোগ ছিল তার? উফ, কী দুর্দান্ত লেখা সব। সামান্য সব বিষয় নিয়ে অসাধারণ লেখা। ভালো লেখার প্রতি যে তার এমন আগ্রহ আছে, সে নিজেও বোঝেনি। সামনা সামনি পরিচয় নয়, প্রোফাইল দেখে পরিচয়, ছবিসহ। তখন কেবল ফেবুকের জগতে প্রবেশ করছে বাংলাদেশ। সেই সময়ে। ফেবুকে পরিচয় হলেও মেইলেই কথা হতো তাদের। কোনোদিন দুটো করেও মেইল পাঠিয়েছেন ভদ্রলোক। একসময় প্রচুর কবিতা লিখতেন কিন্তু এখন আর লিখেন না বলে জানিয়েছিলেন। অভিমান করে, না এমনি এমনি, সে কথাও জানিয়েছিলেন কিনা ঠিক মনে নেই। টিয়ার এসব লেখালেখির ধাত নেই। পড়ারও ধাত নেই। আসলে সময়ই পায় না। তার ডাক্তারি পড়া নিয়ে এত ব্যস্ত থাকতে হতো যে এসব পড়া হতো না। পশ্চিম বঙ্গের দু-একজন সাহিত্যিকের কিছু লেখা পড়া থাকলেও বাংলাদেশের কোনো কবির নাম সে বলতে পারত না। এই ভদ্রলোক, নাম ধরা যাক শামিম রহমানের সঙ্গে ভার্চুয়াল পরিচয় হওয়ার পর কিছু কবির নাম সে জানতে পারে। শামিম ছিলেন পশ্চিম বঙ্গের কবি। তার মেইলগুলোর গদ্যে এত চমক থাকত যে অপেক্ষা করতে হতো টিয়াকে। কলকাতার প্রকৃতি কোনদিন কেমন তার বর্ণনায় মুগ্ধ হয়ে যেত টিয়া। কত সহজ ভাষায় এসব লেখা যায়, তার লেখা থেকেই জানতে পেরেছে সে। গল্পের ছলে কত কী যে লিখতেন। ওখানকার কবি সাহিত্যিকদের অজানা অনেক তথ্যও তার সঙ্গে শেয়ার করতেন শামিম। এক ভদ্রলোকের পোকামাকড় খাওয়ার গল্প লিখেছিলেন, মনে আছে। এসব পড়তে পড়তে অনেকটাই ঘোরের ভেতর থাকত টিয়া।
শামিম তার পরিবার সম্পর্কেও অনেক কিছু লিখতেন। টিয়াও তার পরিবার সম্পর্কে লিখত।
এখানে প্রেম-ট্রেমের কোনো গন্ধ কিংবা জটিলতা ছিল না। মনের আনন্দেই এসব শেয়ার করত তারা। কলকাতায় খুব বৃষ্টির একদিন তিনি লিখে ফেললেন, এমন দিনে তারে বলা যায়, এমন ঘন ঘোর বরষায়..., কেমন লাগে গানটা? টিয়া জানায়- ধুস, এসব মন উদাস করা গান শুনতে চাই না। আর একদিন তিনি লিখলেন- হঠাৎ কলকাতা থেকে শান্তিনিকেতনে পালিয়ে এলাম। চারদিকে প্রবল বৃষ্টি। দোতলার ঘরের জানলা দিয়ে দেখছি আক্ষরিক অর্থে ‘পাতায় পাতায় বিন্দু বিন্দু ঝরে জল’... বিকেল বেলায় শালবীথি ও আম্রকুঞ্জের মাথায় ঘন কালো মেঘ, গাছের পাতা চুইয়ে নেমে আসা বৃষ্টি... শুধু বৃষ্টির স্বাদ গায়ে মাখার জন্যই এখানে আসা। কলকাতায় কি আর রাস্তার বদ্ধ জমা জলে বর্ষার আসল মজা পাওয়া যায়! হাহাহা।
হঠাৎ সেই হাহাহা করা মানুষটা আগাম কোনো সতর্কবার্তা না জানিয়ে একদিন গায়েব হয়ে গেলেন। আর কোনোদিন যোগাযোগ করলেন না। অনেকবার জানতে চেয়েছে টিয়া, কিন্তু কোনোদিন সাড়া দেননি শামিম। এমনকি তার আইডিটাও একেবারে গায়েব হয়ে গেল। একটা ওয়েবসাইট ছিল সেটাও গায়েব। এরকম অদ্ভুত একটা ঘটনার জন্য প্রস্তুত ছিল না টিয়া। খারাপ কিছু হল কিনা মাথায় আসাতে অন্যদের দিয়ে খোঁজ নিয়েছিল টিয়া, না, সেরকম কিছু হয়নি। বেঁচে আছেন। এখনও টিয়া এর কোনো কারণ উদ্ধার করতে পারেনি। স্ত্রীর ভয়ে? কথাটা মনে হলেও মানতে চায়নি সে। তিনিই বেশি আগ্রহী ছিলেন টিয়ার সম্পর্কে জানতে, বাংলাদেশ সম্পর্কে জানতে। বাংলাদেশ সম্পর্কে সীমাহীন আগ্রহ ছিল তার। তবে কেন জানি কখনই আসতে চাওয়ার আগ্রহ দেখাননি। বললেই বলতেন, বাবা, যে হারে আপনাদের দেশে মুক্তমনাদের খুন করে, তাতে না আবার ধরা খাই। বলা তো যায় না, কোন লেখায় কখন কী লিখে ফেলেছি! হাহাহা। এমনিতে প্রচুর ঘুরতেন। ছুটির সময়গুলোয় যেসব জায়গায় যেতেন, ছবি পাঠাতেন। নিজের নয়, প্রকৃতির।
লুকোছাপা করার অভ্যাস কোনোকালেই ছিলনা টিয়ার। সে তৃতীয় দিনেই বলেছিল, তার এখন দ্বিতীয় সংসার। প্রথম সংসার ভাঙা কাচের মতো ছিল অনেকদিন। গ্লু-টল্লু দিয়েও জোড়া লাগানো যাচ্ছিল না, অতঃপর বিদায়। এখন খারাপ চলছে না। এ রকমই সব কথাবার্তা লেখালেখি চলত। তাতে এই ব্রম্মাণ্ডে কারও কোনো ক্ষতি হওয়ার বিন্দুমাত্র সম্ভাবনা দেখা দেয়নি।
বিষয়টা মাথা থেকে পুরোপুরি যেতে সময় লেগেছিল টিয়ার। শামিম রহমান কোন ধাতুর তৈরি তার জানা ছিল না বলেই মেনে নিতে পারছিল না সে। পৃথিবীতে যতগুলো ধাতু আছে সবগুলোই যে মানুষের শরীরেও আছে তা জানা থাকলেও মনের ব্যাপারটায় বোধহয় সম্পূর্ণ জানা নেই টিয়ার। সে কারণে এ জগৎটার ওপর বিরক্ত হয়ে হাল ছেড়ে দিয়েছিল সে। সংসার ও পেশাতেই মনোনিবেশ করেছিল।
কাজের ফাঁকে ফাঁকে একটু আধটু ঢু দিলেও ভার্চুয়াল জগতের জঞ্জালে আর জড়াতে চায়নি টিয়া। কিন্তু সে না চাইলে কী হবে, প্রকৃতিতে অবচেতনভাবে কিছু ঘটনা ঘটে যায়। যা কোনোভাবেই বোধহয় রোধ করা যায় না। সেভাবেই এ নতুন আইডিটার সঙ্গে আবার জড়িয়ে গেল সে। জগজিতের গানের লিংকটা যেদিন পাঠালেন সেদিনই নস্টালজিয়ায় আক্রান্ত হয়ে নতুন এ উপদ্রবটাকে একটু কড়া গলায় এসব পাঠানো বন্ধ করতে বলে টিয়া। রিপ্লাই দিয়ে যে কথাগুলো তিনি লিখলেন সন্দেহ তখনই গেড়ে বসল। ঠিক এরকম নরম অথচ দৃঢ় ভাষায় শামীমও লিখতেন। পড়ে মনটা নরম হয়ে গেল। এতটা কড়া করে লেখা ঠিক হয়নি বলে মনে হল তার। বয়সে অনেক বড় বলেই জানিয়েছেন। এই জায়গাটায় যেভাবে লিখেছেন ঠিক একই ভাষা শামীমও ব্যবহার করতেন। তবে কী শামীম রহমান তার সঙ্গে যোগাযোগ করতে চাইছেন কিন্তু অদৃশ্য কারণে যেটার জন্য দূরে সরে গিয়েছিলেন, এখন লজ্জা পাচ্ছেন! নাকি টিয়াকে পরীক্ষা করছেন?
আরও দুজন মানুষের কথা ভাবে টিয়া। ফেবুকে তাদের লেখার সঙ্গে পরিচিত সে, মাঝে মাঝে ইনবক্সেও হাই-হ্যালো হয়, কিছুটা অহঙ্কারি কিছিমের। একটু বেশিই। তারাও হতে পারে কিনা ভাবে টিয়া। ক্লু পাওয়ার জন্য তাদের ওয়ালে গিয়েও অনুসন্ধান করেছে সে। দু-এক জায়গায় মিল পেলেও মন থেকে শেষ পর্যন্ত বাদ দিতে হয়েছে। তার আগে কৌশলে নতুন এ রহস্য মানুষটিকে দু-একটা প্রশ্ন করে বুঝেছে যে, না, ওই দু’জনের কেউ নয়। তবে টিয়া কৌশলের আশ্রয় নিলেও ওপাশ থেকে উত্তর এসেছে, বেশ ভালো ডিটেক্টিভ হতে পারবেন! তাতেও চুপসে যায়নি টিয়া। নতুন উদ্যমে কাজের ফাঁকে ফাঁকে ডিটেক্টিভ হওয়ার বাসনা পোষণ করে চলেছে। কে ভদ্রলোক? কেন নিজের পরিচয় লুকিয়ে টেক্সট পাঠাচ্ছেন। অনলি টাইম পাস?
আজ ছুটির দিনে বাসায় একা ছিল বলে ইচ্ছা করে ব্রেক দিয়ে দিয়ে অনেকক্ষণ চ্যাটিং করেছে মানুষটার সঙ্গে। এর মাঝেই সে রান্না করে, ওয়াশিং মেশিনে কাপড় ধুয়ে, মাথায় ব্রাউন কালারের রং দিয়েছে। এরপর ছুটা কাজের মেয়েটার সঙ্গে বকবক করে করে নেয়ে ধেয়ে খাওয়াদাওয়া কমপ্লিট করেছে। সন্ধ্যার পর টুকটাক দু-একটা কাজ সেরে আবার নেটে বসে সে। যেন একটা নেশার মধ্যে প্রবেশ করা। কত সহজে পৃথিবীর একপ্রান্ত থেকে আর এক প্রান্তের মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ হয়ে যাওয়া!
সন্ধ্যাতেও ওপারের সবুজ বাতি দেখে একটু খোঁচানোর জন্য দুটি কথা লিখে সেন্ড করে টিয়া। আসলে ঠিক খোঁচানো নয়, ওই যে মাঠে খেলতে নেমে গেছে, তার তো একটা সুরাহা হতে হবে, নয়কি! বিশ্বকাপ খেলা দেখা নিয়ে কী সব কাণ্ডই না ঘটে যাচ্ছে পৃথিবীতে। কোথায় সাত সমুদ্দুর তেরো নদীর পারে খেলা হচ্ছে, আর এদিকে দেখ ছাগলের তিন নম্বর বাচ্চাদের ফালাফালি!
আর এত একেবারে সরাসরি মাঠে নামা! শেষ না দেখে নিষ্কৃতি আছে?
সিগারেট খান কিনা প্রশ্ন ছুড়ে অপেক্ষা না করেই দ্বিতীয় প্রশ্ন করে টিয়া- আজ বাসায় কী রান্না হল? এ প্রশ্নের উত্তর থেকে মানুষটি সম্পর্কে আংশিক নিশ্চিত হওয়া গেল রান্নার মেন্যু জেনে। তিন পদ রান্নার এই একটি পদ সবাই করে না। কেউ কেউ করে। তারপরও সিগারেটে অভ্যস্ত না শুনে শামিম রহমানকে পুরোপুরি মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলতে সুবিধা হল। শামিম জানিয়েছিলেন তিনি চেইন স্মোকার। সিগারেটের বিষয়টা ঝেড়ে ফেলে একটু মজা করে দুটো লাইন লিখলে তার উত্তর এলো পাঁচ লাইনে। যা পড়ে খানিকক্ষণ চুপ করে রইল টিয়া। রান্নাবান্না শেষ করে এখন øানে যাবেন তিনি!
আর্ট কালচারে অভ্যসত, পড়ুয়া একজন বয়স্ক মানুষের দিন যাপন যেমনটা হওয়ার কথা তেমনটা না হয়ে রান্নাবান্নার কথা পড়ে বেশ কিছুটা বিব্রত টিয়া। বিদেশে থাকলে এমনটা স্বাভাবিক কিন্তু তিনি দেশেই থাকেন বলে জানিয়েছেন আগেই। শেষ পর্যন্ত— প্রশ্নটা করা উচিত কিনা কয়েকবার ভেবেও পাঠিয়ে দিয়ে যে উত্তরটা এলো তাতে স্তব্ধ হয়ে বসে রইল টিয়া, অনেকক্ষণ।
ভদ্রলোকের স্ত্রী আজ দশ বছর মানসিকভাবে অসুস্থ, কিছুই করতে পারেন না। তাদের কোনো সন্তানও নেই। চাকরি ছেড়ে অসুস্থ স্ত্রীকে নিয়ে লোকচক্ষুর আড়ালে বলতে গেলে এখন অনেক দূরে বসবাস করেন অঞ্জন রায়। সংসারে যা কিছু করার সব তাকেই একা করতে হয়। তার ফাঁকে ফাঁকে টিয়ার সঙ্গে টেক্সট দেয়া নেয়া করে খানিকটা আনন্দ পেতে চান!
হ্যাঁ, এ নামেই তার আইডি। যদিও আসল নামটি তিনি আড়ালেই রেখেছেন নিশ্চিত টিয়া। তবে স্ত্রীর বিষয়টা নিশ্চিত না। ভার্চুয়াল জগতটায় ঠিক কতখানি সত্য আর কতখানি মিথ্যার ওপর দাঁড়িয়ে চেনা জানা চলছে, এখনও পুরোপুরি জানে না টিয়া! তার স্ত্রী নয়, নিজেকে আড়াল করে এভাবে যিনি আইডি খুলেছেন, তিনিই মানসিকভাবে সুস্থ না অসুস্থ, দ্বিধায় ভোগে টিয়া।