গফুর সাহেবের করোনা ভাইরাস যন্ত্রনা কিংবা একরাশ কপোট্রনিক হতাশা!
॥ডেল এইচ খান॥
সদ্য ইতালি ফেরত গফুর সাহেব করোনা ভাইরাসের যন্ত্রনায় যারপরনাই ত্যাক্ত!
এই মুহুর্তে তিনি ঢাকার রমরমা এক কফি শপে বসে ধুমায়িত কফির মগ সামনে রেখে নিজের মুঠোফোনে ইতালির খবরাখবর ব্রাউজ করছেন। তিনি ব্যবসায়ী মানুষ; এই ঝামেলা মিটলে দ্রুতই ইতালিতে নিজের ব্যবসায় ফিরতে চান। গতকাল ফ্লাইট থেকে নামবার পরপরই অনেক কসরত করে কোয়ারেন্টাইনের ঝামেলা এড়িয়ে সোজা বাসায় এসে উঠেছেন তিনি। বাংলাদেশের এইসব ন্যাকামো দেখলে তার হাসিই পায়। এয়ারপোর্টের স্ক্যানার নষ্ট, করোনা কিট নেই, কোয়ারেন্টাইন সেন্টার নাকি আদতে হাজি ক্যাম্প, সেও জনবসতি ভরা উত্তরার মাঝখানে! তবে ইতালিতে গৃহবন্দী থাকবার চেয়ে অবশ্য দেশেই ভালো। ওখানে বাইরে পেলেই নাকি ফাইন করে দিচ্ছে দুমাদুম! সামান্য হাচি কাশি অবশ্য তারও আছে, তবে ঢাকায় বিন্দাস ঘুরে বেড়ানো যাচ্ছে, আড্ডা দেয়া যাচ্ছে। কে কার খবর রাখে এদেশে! বন্ধু মাজেদ ওয়াশরুম থেকে ফিরে আসতেই গফুর সাহেবের ভাবনার জাল ছিড়ে যায়।
‘জ্ঞান বিজ্ঞানের এই চরম উৎকর্ষের যুগে সামান্য একটা ভাইরাসের যন্ত্রনায় আমরা সবাই কেমন কাহিল হয়ে গেলাম দ্যাখ…’
‘জ্ঞান বিজ্ঞান আর কী এমন এগিয়েছে?’ কফির কাপে ছোট্ট চুমুক দিয়ে মাজেদের উদ্দেশ্যে বলে উঠেন গফুর সাহেব। তার এই বন্ধুটিকে জ্ঞান দিতে তার ভালই লাগে। ‘একবার এক দেশের লোকজন জ্ঞান-বিজ্ঞানে এমন ডেভেলপ করল যে আল্লাহ পাক জিব্রাইল (আঃ)কে পাঠাইসিলেন ওদের টেস্ট নিতে!’
‘বলিস কী!’
‘হুম, বানিয়ে বলতেসি না। কোরানেও নাকি এই ঘটনার কথা বলা আছে।’
‘আচ্ছা! তারপর?’
‘তারপর জিব্রাইল (আঃ) সেই দেশে গিয়ে দেখে এক কৃষক জমিতে আগাছা নিড়াচ্ছে। উনি তাকে জিজ্ঞেস করলেন, আপনারা নাকি ভাই জ্ঞান-বিজ্ঞানে অনেক উন্নতি করেছেন? বলেন তো দেখি জিব্রাইল ফেরেস্তা এখন কোথায় আছেন?’
‘তারপর?’
‘প্রথমে তো সেই লোক এভোয়েড করতে চাইল। পরে ফেরেস্তার চাপাচাপিতে কী সব গননা করে বললেন, আমার গননায় যদি ভুল না হয়ে থাকে তো আমার সামনে দাঁড়ানো আপনিই ফেরেস্তা জিব্রাইল (আঃ)!’
‘বলিস কী?’
‘হ্যা, ঠিক তাই। আমরা এখনও অনেক পিছিয়ে আছি, বন্ধু!’
এই মুহুর্তে কফি শপের ফ্রি ওয়াই ফাই ব্যবহার করে গফুর সাহেব নিজের ঘাড় ডলতে ডলতে করোনা ভাইরাসে লক্ষণগুলোতে আরেকবার চোখ বুলালেন; তার বেশ শরীর খারাপ লাগছে, মন বলছে মোবাইল স্ক্রিনে ভেসে থাকা আইইডিসিআর এর নাম্বারে এখুনি তার ফোন দেয়া উচিত। কিন্তু মজিদ কি ভাববে ভেবে তিনি সেই চিন্তাটা বাতিল করে দিলেন।
মরতে তো একদিন হবেই, তাইনা?
পুনশ্চ:
গফুর সাহেব গত পরশু দিন ফ্লাইটে উঠবার আগে ইতালি থেকে শেষবার ফেসবুকে ঢুকেছিলেন নোটিফিকেশন চেক করতে, ঢাকায় বিমান থেকে নেমেই আবার নোটিফিকেশন চেক করেছেন। তার রোম থেকে ঢাকা আগমনের খবর অনেকে না জানলেও ‘গুগুল’ জানে। দেশে পা দিয়েই তিনি সিম বদলে দেশি সিম ভরেছেন নিজের দামী স্মার্ট ফোনে। ইতালি থেকে যে আইইএমই নাম্বারের স্মার্ট ফোনে তিনি ফেসবুকে ঢুকেছিলেন, সেই একি ফোনে তিনি ঢাকা থেকে ফেসবুকে ঢুকেছেন। তাই সেই সুত্র ধরে ‘গুগুল’ মামা এখন জানে তার দেশি সিমের নাম্বার কত? এবার সিম আর টেলিকম টাওয়ারের সুত্র ধরে ‘গুগুল’ মামা নিশ্চিত জেনে গেছে গফুর সাহেবের বেডরুমের ঠিকানা। ইতোমধ্যে কতবার তিনি করোনাভাইরাস সংক্রান্ত কি কি ডেটা সার্চ করেছেন এবং তার কব্জিতে বাধা স্মার্ট ওয়াচের মাধ্যমে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে ‘গুগুল’ মামা অলরেডি প্রায় নিশ্চিত যে গফুর নামের এই লোকটাকে অনতিবিলম্বে ‘কোয়ারেন্টাইন’ নামক প্রক্রিয়ার ভেতর দিয়ে যাবার জন্য তাগিদ দেয়া জরুরী। সফটওয়্যার প্রোগ্রাম হিসেবে গুগুল মামার ক্ষেত্রে উদ্বেগ উৎকণ্ঠা শব্দগুলো খাটে না একেবারেই। তবে মানবীয় গুনাবলী থাকলে এই মুহুর্তে তার হতাশা পরিস্কার বোঝা যেত। প্রোগ্রামিং প্যারামিটারের কারনে ‘গুগুল’ মামা গফুর সাহেবকে সম্ভাব্য বিপদজনক একজন হিসেবে ইতিবাচক ভাবেই সনাক্ত করেছে। কিন্তু বাংলাদেশকে এ তথ্যটি জানাবার মত উপযুক্ত প্ল্যাটফর্ম না থাকায় সে কাউকেই কিছু জানাতে পারছেনা!
এ এক বিচিত্র কপোট্রনিক হতাশা!