শিরোনাম
৮ নভেম্বর লন্ডনে যাচ্ছেন খালেদা জিয়া! যুক্তরাষ্ট্রের ৪৭তম প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প টেস্ট ও টি-টোয়েন্টি থেকে অবসরের ঘোষণা সাকিবের জার্মানিতে ইরানের সব কনস্যুলেট বন্ধ ঘোষণা কড়া নিরাপত্তায় নয়াদিল্লির বাংলোয় আছেন শেখ হাসিনা সরকারের সমালোচনামূলক গান, ইরানি র‍্যাপারের মৃত্যুদণ্ড ২০ সেপ্টেম্বর থেকে বন্ধ হয়ে যাবে যাদের জিমেইল টিকটক নিষিদ্ধ হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২০টির বেশি অঙ্গরাজ্যে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেলেন হান কাং বিশ্বসেরার স্বীকৃতি পেল ইস্তাম্বুল বিমানবন্দর ইরানের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিলে দাঁতভাঙা জবাব পাবে ইসরায়েল-যুক্তরাষ্ট্র: খামেনি নিভে গেল বাতিঘর..... গুগল-অ্যাপলকে পেছনে ফেলে সবচেয়ে দামি ব্র্যান্ড অ্যামাজন পড়াশোনা শেষে ব্রিটেনে থাকতে পারবেন বিদেশি শিক্ষার্থীরা
Update : 16 June, 2019 02:31
রিজার্ভ ৩৩ বিলিয়ন ডলার

দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির অগ্রনায়ক রেমিটেন্স যোদ্ধারা

দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির অগ্রনায়ক রেমিটেন্স যোদ্ধারা
আহমাদুল কবির, মালয়েশিয়া :

বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির পিছনে তিনটি সেক্টরের গভীর অবদান রয়েছে। এগুলো হলো গার্মেন্টস, সেবা এবং অভিবাসন খাত। সাধারণভাবে আমরা গার্মেন্টসকে সর্বোচ্চ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনকারী খাত হিসাবে চিহ্নিত করে থাকি। গার্মেন্টস খাতের কাঁচামাল আমদানির খরচ বাদ দিলে দেখা যায়, অভিবাসী কর্মীদের পাঠানো রেমিট্যান্স  থেকে নেট বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন গার্মেন্টসের চাইতে তিনগুণ বেশি। 

দেশে প্রবাহিত বৈদেশিক সাহায্যের তুলনায় এটি ছয়গুণ এবং ফরেন ডাইরেক্ট ইনভেস্টমেন্টের বারোগুণ বেশি তাই এইকথা বলতে বাধা নেই যে ‘অভিবাসীর ঘামের টাকা সচল রাখছে দেশের চাকা’। বিদেশে কর্মরত শ্রমিকরা প্রতিবছর দেশে প্রায় ১৫ বিলিয়ন ডলার পাঠায়। প্রতিবছর এ মুদ্রা পাঠানো বৃদ্ধি পাচ্ছে। ২০০৫-০৬ অর্থবছরে বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ ছিল ৩.৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং চলতি অর্থবছরে এটি ৯ গুণ বেড়ে দেশের বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ ৩৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে দাঁড়িয়েছে।

১৩ জুন, অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল জাতীয় সংসদে ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট উত্থাপনকালে এ পরিসংখ্যান তথ্য জানান।

তিনি বলেন, “২০০৫-০৬ অর্থবছরে বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ ছিল ৩.৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং চলতি অর্থবছরে এটি ৯ গুণ বেড়ে ৩৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে পৌঁছেছে।”

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যানুযায়ী, ২০১৩-১৪ অর্থবছরে ১৪ দশমিক ২২৮ বিলিয়ন ডলার; ২০১৪-১৫ অর্থবছরে দেশে আসে ১৫ দশমিক ৩১৬ বিলিয়ন ডলার; ২০১৫-১৬ অর্থবছরে আসে ১৪ দশমিক ৯৩১ বিলিয়ন ডলার; ২০১৬-১৭ অর্থবছরে দেশে ১২ দশমিক ৭৬৯ বিলিয়ন ডলার; ২০১৭-১৮-তে আসে ১৪ দশমিক ৯৮১ বিলিয়ন ডলার এবং ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ১০ মাসে প্রবাসীরা দেশে অর্থ পাঠিয়েছে ১৩ দশমিক ৩০৩ বিলিয়ন ডলার। কিন্তু দেশে পাঠানো এই অর্থের দ্বিগুণ অর্থ অবৈধ চ্যানেল হুন্ডির মাধ্যমে পাঠানো হয়। ফলে অন্য দেশে বিপুল পরিমাণ অর্থ পাচার হয়ে যায়। হুন্ডির মাধ্যমে প্রবাসী আয় দেশে আসার ক্ষেত্রে ওই দেশে বসে থাকা হুন্ডির এজেন্টরা প্রবাসীদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে নেয়। আর দেশে অবস্থানরত অপর এজেন্ট প্রবাসীদের পরিজনদের কাছে টাকা দিয়ে দিয়ে। এর ফলে প্রবাসীর পরিজনরা দেশে টাকা পেলেও প্রবাসী আয় থেকে বঞ্চিত হচ্ছে দেশ। এ ছাড়া দেশে টাকা না পাঠিয়ে বিদেশে পাঠানোর ঘটনাও ঘটছে। নতুন অর্থবছরের (২০১৯-২০) বাজেটে প্রবাসীদের জন্য বীমা সুবিধার প্রস্তাব করা হয়েছে, যা আগের কোনো বাজেটেই ছিল না।

এর মধ্য দিয়ে রেমিটেন্স-যোদ্ধাদের দীর্ঘদিনের একটি দাবি পূরণ হচ্ছে। এর আওতায় বীমাকারী মারা গেলে, দুর্ঘটনাজনিত স্থায়ী ও সম্পূর্ণ অক্ষমতা বা পঙ্গুত্ববরণ করলে মূল বীমার শতভাগ পরিশোধ করার বিধান রাখা হয়েছে। অন্যান্য ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণের ভিত্তিতে দাবি পরিশোধ করা হবে।

এবারের বাজেটে প্রবাসীদের জন্য দেয়া হয়েছে আরেকটি সুখবর- এটিও এবারই প্রথম। বৈধপথে দেশে টাকা পাঠালে ২ শতাংশ হারে প্রণোদনা পাবেন তারা। 

বৃহস্পতিবার বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, প্রবাসী আয় পাঠানোর ক্ষেত্রে বাড়তি ব্যয় কমানো এবং বৈধপথে অর্থ প্রেরণ উৎসাহিত করতে প্রস্তাবিত বাজেটে ৩ হাজার ৬০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। ফলে বৈধপথে প্রবাসী আয় আসার পরিমাণ বাড়বে এবং হুন্ডি ব্যবসা নিরুৎসাহিত হবে বলে আশা করছি। 

প্রস্তাবে বলা হয়েছে, বীমা নীতিমালার আওতায় প্রবাসী কর্মীদের জীবন বীমা সুবিধা প্রদান করা হবে। সাধারণত মৃত্যুর ক্ষেত্রে বীমা সুবিধায় প্রিমিয়াম হার ও বীমা অঙ্ক বীমা গ্রহীতাদের বয়সভেদে পার্থক্য হয়ে থাকে। 

তবে প্রবাসী কর্মীদের একটি গ্রুপ হিসেবে বিবেচনায় নিয়ে বীমা প্রকল্পটি বা পলিসি সহজীকরণের লক্ষ্যে বীমা গ্রহীতাদের বয়স নির্বিশেষে অভিন্ন প্রিমিয়াম হার আরোপ করা হবে।

এদিকে প্রবাসীরা বৈধ চ্যানেলে অর্থ পাঠালে একই সঙ্গে দেশ ও প্রবাসীদের পরিজনরা উপকৃত হন। প্রবাসীরা যখন বৈধ পথে দেশে অর্থ পাঠান তখন ব্যাংকগুলো বাংলাদেশি মুদ্রায় ওই অর্থ স্থানান্তর করে দেশে অবস্থানরত পরিজনদের কাছে হস্তান্তর করে। আর ওই বৈদেশিক মুদ্রা বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ অর্থ হিসাবে জমা থাকে। কিছু অর্থ বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোও জমা রাখে। এ অর্থ বৈদেশিক বাণিজ্য ও ঋণ পরিশোধে ব্যবহৃত হয়। বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভ আকারে বাংলাদেশ ব্যাংকে জমা থাকলে সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান সহজ শর্তে বৈদেশিক ঋণ পেতে পারে। আমদানির ক্ষেত্রে এলসি (ঋণপত্র) খুলতে দেশি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর গ্রহণযোগ্যতা বাড়ে। 

সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, হুন্ডির মাধ্যমে টাকা পাঠানো রোধ ও প্রশিক্ষিত করে শ্রমিকদের বিদেশে পাঠাতে পারলে প্রবাসী আয় ৩৩ বিলিয়ন ডলারের কোটা থেকে কয়েক বছরের মধ্যে ৪০ বিলিয়নে উত্তীর্ণ হওয়া অসম্ভব নয়।

গত পাঁচবছরে কর্ম উদ্দেশ্য নিয়ে বিদেশে যাওয়া অভিবাসীর সংখ্যায় এক ধরনের স্থবিরতা দেখা দিয়েছে।

বাংলাদেশের শ্রমবাজার মূলত সাত থেকে দশটি দেশের মাঝে সীমাবদ্ধ। তার ওপরে আবার একেক বছরে একেকটা দেশে প্রায় ৫০ ভাগের অধিক কর্মী গিয়ে থাকেন। গত সাত বছর ধরে বাংলাদেশ সৌদি আরবে পুরুষ শ্রমিক প্রেরণ করতে পারছিল না। কুয়েতে দীর্ঘদিন ধরে অভিবাসান প্রায় বন্ধ। জিটুজি-র ব্যর্থতার কারণে গত চার বছরে মালয়েশিয়াতেও খুব অল্প সংখ্যক লোকই যেতে পেরেছিল। 

রেমিট্যান্স আহরণের ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন, মানি লন্ডারিং-এর ওপর আন্তর্জাতিক নজরদারি ব্যাংকসমূহের উৎসাহে বৈধ পথে রেমিট্যান্স প্রেরণের হার বেড়েছে। তবে সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, সংযুক্ত আরব আমিরাত এই তিনটি দেশ থেকে পাঠানো রেমিট্যান্সের অনেকটাই এখনও হুন্ডির মাধ্যমে হচ্ছে। সিঙ্গাপুর এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতের সাথে আমদানি-রপ্তানি ব্যবসায় নিয়োজিতরা ‘আন্ডার ইনভয়েসিং' এবং ‘ওভার ইনভয়েসিং' করে ট্যাক্স ফাঁকি দেয়ার কাজে হুন্ডির টাকা ব্যবহার করে। স্বর্ণ পাচারকারীরাও হুন্ডি ব্যবহার করে থাকে ফলে এই দেশ গুলো হতে বৈধ পথে রেমিট্যান্স বেশ কম আসছে অভিবাসন বাংলাদেশের গ্রামীণ সমাজে দারিদ্র বিমোচনেও ভূমিকা রেখেছে। 

সমীক্ষা থেকে দেখা গেছে, আন্তর্জাতিক অভিবাসী পরিবারে মাত্র ১৩ ভাগ দারিদ্রসীমার নীচে বাস করেন। অনভিবাসী পরিবারগুলো প্রায় ৪০ ভাগই দারিদ্রসীমার নীচে বাস করছেন।

আন্তর্জাতিক অভিবাসন হয় না এমন এলাকার তুলনায় অভিবাসন হয় এমন এলাকায় মজুরি বেশি, স্থানীয় বাজারের সম্প্রসারন বেশি, প্রযুক্তি নির্ভর বিশেষায়িত পণ্যর ব্যবহার বেশি, কৃষি আধুনিকিকরণে বিনিয়োগ বেশি। অর্থাৎ অভিবাসীরা স্থানীয় অর্থনীতিতে পরোক্ষভাবে অবদান রাখছেন ‘মাল্টিপ্লায়ার এফেক্ট' তৈরি করে।

মালয়েশিয়ার ইসলামিক ইউনিভার্সিটির প্রফেসর এসএম আবাদুল কুদ্দুছ (পিএইচডি) বলছেন, ২০১৪ সালের শুরুতে আমরা দেখেছি অবৈধ সমুদ্র পথে অভিবাসনে প্রলুব্ধ করেছে কিছু মানবপাচারকারী গোষ্ঠী। থাইল্যান্ড এবং মালয়েশিয়ার জঙ্গলে গণকবরে শুয়ে আছেন বহু নাম না জানা অভিবাসী। ১০ হাজার টাকায় তাদের মালয়েশিয়া নিয়ে যাওয়া হবে বলে নৌকায় তুলে মাঝ পথে মুক্তি পণ দাবি করা হয়েছে। না দিতে পারলে তাদের অনেককেই সমুদ্রে ফেলে দেওয়া হয়েছে। অনেক সময় মনে হয়েছে দোষী ব্যক্তিদের শাস্তি দিতে প্রশাসন দ্বিধাগ্রস্ত ক্রস ফায়ারে পরে গেছেন নীচের দিকের কিছু দালালেরা। যথাযত আইনে মামলা রজু হয়নি। বৈধ অভিবাসনের পথ সচল রাখতে হলে অবৈধ অভিবাসন পরিচালনাকারীদের অবশ্যই বিচারের আওতায় আনতে হবে।

মাহাসা ইউনিভার্সিটির প্রফেসর ডা: আবুল বাসার বলছেন, অভিবাসনকে উন্নয়নের মূলধারার সাথে সম্পৃক্ত করতে হবে। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, আর্থিক অন্তর্ভুক্তি, প্রাকৃতিক দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, খাদ্য নিরাপত্তা, প্রবৃদ্ধি এবং সমতা অর্জনের লক্ষ্যগুলোর সাথে অভিবাসী পরিবারগুলো কীভাবে সম্পৃক্ত হবে তার দিক নির্দেশনা দেওয়া প্রয়োজন।

মানবাধিকার কর্মী হারুন আল-রশিদ বলছেন,২০০০ সালের শুরু থেকে বিভিন্ন সরকার অভিবাসনে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় নজর দিয়েছেন। নতুন মন্ত্রণালয় খোলা হয়েছে, নীতি এবং আইন তৈরি হয়েছে, সহজ শর্তে ঋণদানের জন্যে প্রবাসী ব্যাংক খোলা হয়েছে কিন্তু অভিবাসন এমন একটি জটিল বিষয় যে এখানে সুফল ধরে রাখা বেশ কঠিন। বিশ্বায়ন থেকে ছুড়ে দেওয়া বিভিন্ন সমস্যা মোকাবেলায় নিত্যনতুন পদক্ষেপ গ্রহণ প্রয়োজন। 

তিনি মনে করেন,দালালের হয়রানি কমাতে, গ্রহণকারী দেশে সেবা দিতে, ফিরে আসা কর্মীদের পুর্নবাসনে নির্দষ্ট পলিসি, চাই অর্থ আর রিসোর্স বরাদ্দ করা আর সরকারের দায়বদ্ধতা।

প্রবাসী শ্রমিকনেতা শাহ আলম হাওলাদার বলছেন, বাংলাদেশ থেকে প্রতিবছর ৭-৯ লাখ মানুষ দেশের বাইরে যায়। বিপুলসংখ্যক জনশক্তি বাইরে গেলেও এর প্রায় পুরোটাই অদক্ষ। ফলে তাদের উপার্জনও কম। এ ক্ষেত্রে সরকার প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ করে তাদের বিদেশে পাঠাতে চায়। বর্তমানে সীমিত পরিসরে এ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা চালু থাকলেও দালালের মাধ্যমে বা অবৈধভাবে বিদেশে যান তারা প্রশিক্ষণ ছাড়াই যান। শাহ আলম আরোও বলছেন, প্রবাসে বৈধ অবৈধ সবাই রেমিটেন্সযোদ্ধা। 

বর্তমানে মালয়েশিয়া যারা বৈধ অবৈধ কর্মরত রয়েছেন। কেউই ভাল নয়। কারন অবৈধরা মালয়েশিয়া সরকারের চলমান অবৈধ শ্রমিক ধরপকড় অভিযানের ভয়ে ফেরারি হয়ে দিনাতিপাত করছেন। দুই দেশের কূটনৈতিক আলোচনার মাধ্যমে তাদের বৈধতা বা অবৈধদের  একটি শৃঙ্খলার মধ্যে ফিরিয়ে আনার দাবি জানিয়েছেন।

উপরে