বিপাকে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা: দেশে ফিরতে সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা
গোটা মালয়েশিয়া জুড়ে চলছে লকডাউন। করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার পরিপ্রেক্ষিতে আতঙ্ক ও উৎকণ্ঠায় দিন কাটাচ্ছেন দেশটির বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্টানে অধ্যয়নরত প্রায় ৬ হাজারেরও অধিক বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা।
করোনা ভাইরাসের কারণে দেশে ফেরত আসতে চাইছেন বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীরা। তারা মালয়েশিয়ায় অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের যথাযথ হস্তক্ষেপ চেয়েছেন।
ক্যাম্পাসের আশপাশে সুপার শপগুলো বন্ধ হওয়াতে বিপাকে পড়েছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। সব ধরনের নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য কিনতে বেগ হতে হচ্ছে তাদের। এমনকি ক্যাম্পাসে বাহিরের লোকজন ভিতরে প্রবেশের অনুমতিও মিলছেনা। অগামি জুলাই পর্যন্ত দেশটির সকল ইউনিভার্সিটি কলেজ বন্ধ ঘোষনা করা হয়েছে।
প্রাণঘাতী এ ভাইরাসে এ পর্যন্ত দেশটিতে ২৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। দেশজুড়ে ভাইরাসে দুই হাজার ১২১ জনের আক্রান্ত হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সংশ্লিষ্টরা। তবে এ রিপোর্ট লিখা পর্যন্ত মালয়েশিয়ায় অবস্থানরত বাংলাদেশিদের এখন পর্যন্ত করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া যায়নি।
মালয়েশিয়াা বাংলাদেশ ফোরাম এসোসিয়েশনের সভাপতি অধ্যাপক ডাঃ মোহাম্মদ আবুল বাশার বলেন, বাংলাদেশি শিক্ষার্থী ও পরিবারের মধ্যে গভীর উদ্বেগ। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস জুন পর্যন্ত বন্ধ করেছে সরকার। ছাত্রদের অনেকেই বাংলাদেশে ফিরতে চান। এমন পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ হাই কমিশনকে অনাবাসী বাংলাদেশীদের পাশে দাঁড়ানো এবং সংশ্লিষ্টদের সকলকে তাদের সহায়তার জন্য বিশেষ বিমান এবং উদ্দীপনা প্যাকেজের ব্যবস্থা করার জন্য অনুরোধ জানিয়েছেন। এ বিষয়ে তিনি হাইকমিশনার মহ. শহীদুল ইসলামের সঙ্গে শনিবার কথা বলেছেন। হাইকমিশনার তাকে আশ্বস্ত করেছেন, যারা ফিরে যেতে চায় তাদের বিষয়েও কথা হচ্ছে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে। যেহেতু পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আন্তর্জাতিক বিমান চলাচল বন্ধ রয়েছে চলমান পরিস্থিতি ধর্য্যরে সাথে মোকাবেলা করতে হবে।
ইসলামিক ইউনিভার্সিটি মালয়েশিয়ার প্রফেসর এস এম আব্দুল কুদ্দুছ বলেন, "নিঃসন্দেহে আমরা করোনা ভাইরাসের জন্য খুবই খারাপ সময় পার করছি। এর তুলনা করার সাধ্য নাই আমার। যার যার সাধ্যমত সেইফ এন্ড সিকিউর্ডের মধ্যে থাকতে হবে। আপনারা দয়া করে ফেসবুকে করোনা ভাইরাস নিয়ে প্যানিক (আতঙ্ক) না করে করোনা ভাইরাসের জন্য সতর্ক থেকে মাস্ক ব্যবহার করুন। সাবধানে থাকুন।"
তিনি বলেন, "আমরা এখনো ভালো আছি, বেঁচে আছি। আমরাও দেশে যেতে চাই, তবে ভাইরাস নিয়ে নয়। আমরা নিয়ম মানছি, সতর্ক আছি।"
ইউনিভার্সিটি মালয়ার বাংলাদেশি এ গবেষক খালেদ শুকরান জানান, চিকিৎসাকর্মীরা তাদের বাড়িতে না গিয়ে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। হাতে গুনা কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের এই পরিস্থিতি প্রতিরোধ ও মোকাবিলা করতে নির্দেশিকা নিয়মিতভাবে জানানো হচ্ছে এবং ব্যক্তিগত পর্যায়ে খোঁজ নেওয়া হলেও ইউনিভার্সিটি মালয়ার বিদেশি শিক্ষার্থীদের কোনো খোজঁ নেয়া হচ্ছেনা। বিদেশি শিক্ষার্থীরা তাদের পরিবার নিয়ে রয়েছেন উৎকন্ঠায়। তিনি জানান, মালয়ার বিদেশি শিক্ষার্থীরা পার্টটাইম, ফ্রিল্যান্স জব করে আনুসাঙ্গিক খরচ মিটাত সেটাও বন্ধ হয়ে গেছে। এমন পরিস্থিতিতে তারা কি করবে সেটাও সংশ্লিষ্টরা দেখতে হবে।
ইউনিভাসির্িিট পুত্রা মালয়েশিয়ায় অধ্যয়নরত মো: আব্দুল রউফ বলেন, "সন্দেহ নেই বর্তমানে আমরা কঠিন সময় অতিবাহিত করছি। এরপরও বলব বর্তমান পরিস্থিতিতে আমরা যারা মালয়েশিয়ায় আছি, এটি মোকাবেলা করার জন্য যে পরিমাণ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে অন্য কোথাও এত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি।"তবে এ পরিস্থিতিতে অনেকে দেশে ফিরতে চাইছেন।
সানওয়ে ইউনিভার্সিটিতে অধ্যয়নরত বৃষ্টি খাতুন বলেন, "এখানের অবস্থা খুব একটা ভালো না। আমি আতঙ্কের মধ্যে আছি। রাস্তাঘাটে কোনো মানুষ নেই। তিনি বলেন, "সরকারের প্রতি আমার অনুরোধ, এখানে আমরা যারা বাংলাদেশিরা আছি, তারা আক্রান্ত হওয়ার আগেই ব্যবস্থা নিলে ভালো হয়।"
ইউনিভার্সিটি পুত্রা মালয়েশিয়ার বিএস ইউ এমের সভাপতি জহিরুল ইসলাম জানান, "বিএস ইউ এম সংগঠনের পক্ষ থেকে স্বেচ্ছাসেবক দলটি দেশটিতে অধ্যয়নরত বাংলাদেশিদের সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রেখে তাদেরকে উদ্বিগ্ন না হয়ে নিজ নিজ বাসস্থানে নিরাপদে থাকতে বলা হচ্ছে।"
গোটা মালয়েশিয়া কার্যত ভুতুড়ে নগরীতে পরিণত হয়েছে। শহরের রাস্তা জনমানবশূন্য। ১৮ মার্চ থেকে ৩১ মার্চ বেঁধে দেয়া এ আদেশ বাড়িয়ে এ আদেশ চলবে ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত। প্রাণঘাতি করোনার কারণে সর্বসাধারণের চলাফেরা নিয়ন্ত্রণে আনতে নেয়া হয়েছে পর্যাপ্ত ব্যবস্থা।
সরকার করোনাভাইরাস রোগীদের চিকিৎসা সেবা এবং ডাক্তারদের জন্য আলাদা ফান্ড গঠন করা হয়েছে। দেশটির ব্যবসায়ীরা এ কাজে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। এছাড়া মালয়েশিয়ার মন্ত্রীদের দু মাসের বেতনও দান করেছেন এ ফান্ডে।
এ দিকে বিনা কারণে ঘর থেকে বের হলেই করা হচ্ছে জেল জরিমানা। সরকারের দেয়া নিয়ন্ত্রণ অমান্য করায় আটক করা হয়েছে প্রায় জনকে। এ অবস্থায় বাংলাদেশিসহ সকল প্রবাসী চরম দুশ্চিন্তা-আতঙ্ক ও অনিশ্চয়তায় দিনাতিপাত করছেন। সাময়িক অসুবিধা হলেও অবস্থানরত দেশের নিয়ম-কানুন মেনে চলছেন প্রবাসীরা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মালয়েশিয়াস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসের কাউন্সিলর ২য় মো: হেদায়েতুল ইসলাম এ প্রতিবেদককে জানা, মালয়েশিয়া সরকারের আদেশে করোনা নিয়ন্ত্রণে লকডাউন চলছে। সেখানে বা মালয়েশিয়ার অন্য কোনো স্থানে বাংলাদেশি কেউ করোনা ভাইরাসে আক্রান্তের খবর নেই। ইতিমধ্যে ঢাকায় জানানো হয়েছে এখানকার পরিস্থিতি।"
বাংলাদেশ দূতাবাস কোনো খোঁজ নিচ্ছে না বলে অভিযোগ করছে দেশটিতে অবস্থানরত বাংলাদেশি অনেক ছাত্র। এ বিষয়ে ওই কর্মকর্তা বলেন, দূতাবাস থকে ২৪ ঘণ্টা হটলাইন সেবা দেয়া হচ্ছে। দূতাবাস কর্মকর্তারা পালাক্রমে ডিউটি দিচ্ছেন। আমরা রাজধানিসহ অন্যান্য শহরে অবস্থানরত সবার সঙ্গে যোগাযোগ অব্যাহত রেখেছি। যেই সমস্যা নিয়ে ফোন করছেন তাদের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।"
তিনি আরও বলেন, "দূতাবাস হটলাইনের মাধ্যমে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি। আমরা বাংলাদেশ সরকার, মালয়েশিযা সরকার ও স্থানীয় প্রশাসনের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ অব্যাহত রেখেছি।"