করোনায় স্থবির গোটা মালয়েশিয়া
প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে স্থবির হয়ে পড়েছে গোটা বিশ্ব। ভাইরাসের সংক্রমণ-বিস্তার ঠেকাতে বিশ্বের দেশগুলো এখন সঙ্গনিরোধ (কোয়ারেন্টাইন) নীতি অনুসরণ করছে।
বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা বিশ্ববাসীকে যার যার সাবধানতা-সতর্কতা অবলম্বন করতে উপদেশ দিয়েছে। বিভিন্ন দেশ ইতোমধ্যে নিজেদের এবং বিদেশী নাগরিকদের করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে হোম কোয়ারেন্টাইন, চলাচল নিয়ন্ত্রণ, বিমান যোগাযোগ বন্ধ , সীমান্ত বন্ধসহ নানান পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।
বিভিন্ন দেশের মধ্যেকার আমদানি-রপ্তানি প্রায় বন্ধের পথে। এর মধ্যেই মানবিক বিশ্ব খাদ্য সরবরাহ, ঔষধ, জীবনরক্ষাকারি পণ্য এবং জরুরি চিকিৎসা সামগ্রি উৎপাদন ও পরিবহন করছে। কার্যত একদিকে মানুষ ও দেশ একা হয়ে যাচ্ছে। অপরদিকে এর বিস্তার রোধে চলছে প্রচেষ্টা এবং গবেষণা। বর্তমান পরিস্থিতে মাইগ্রেন্ট বা অভিবাসীদের প্রসঙ্গটি সামনে এসেছে জোরালোভাবে। ৫ এপ্রিল রবিবার বাংলাদেশে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ে পররাষ্ট্র ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাথে উচ্চ পর্যায়ে যৌথ সভায় বিভিন্ন দেশে থাকা প্রবাসীদের বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।
বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, সরকার প্রবাসীদের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট দেশের সরকারের সাথে আলোচনা করে ব্যবস্থা নিবে। এতে প্রবাসীদের মধ্যে আশার সঞ্চার করেছে। ওয়েজ আর্নার্স ওয়েলফেয়ার বোর্ডের মাধ্যমে সরকার জরুরি সহযোগিতা প্রদান করছে। অভিবাসীদের নিয়ে কাজ করে বিভিন্ন সংগঠন স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য সরকারকে অনুরোধ করেছে।
মালয়েশিয়া সরকার ইতোমধ্যে মুভমেন্ট কন্টোল অর্ডারের ফলে বন্ধ থাকা কলকারখানার কর্মীদের বেতন দিতে নির্দেশ দিয়েছে, এ অজুহাতে বেতন কাটা বা ছুটি দেওয়া যাবে না, বৈধ ও অবৈধ নির্বিশেষে সকল বিদেশির জন্য করোনা চিকিৎসা ফ্রি করেছে। মালয়েশিয়া স্বাস্থ্য বিভাগের পাশাপাশি সে দেশে অবস্থানরত বাংলাদেশি চিকিৎসকরাও টেলিফোনের মাধ্যমে প্রবাসীদের স্বাস্থ্য বিষয়ক পরামর্শ দিচ্ছেন বলে জানালেন বি এম এফ এর সভাপতি প্রফেসর ডা: আবুল বাশার।
চলমান এ সংকটময় মুহুর্তে মালয়েশিয়ায় নিজ নিজ আবাসস্থলে থাকা প্রবাসীদের বাংলাদেশ হাইকমিশন, প্রবাসী ব্যবসায়ি, বিভিন্ন সামাজিক ও রাজনৈতিক সংগঠন, ছাত্র সংগঠন ও ব্যক্তি উদ্যোগে খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করছেন। খাদ্য সামগ্রীর মধ্যে চাল, ডাল, আলু, তেল, পেয়াজ, সাবান ও মাস্ক।
বাংলাদেশ হাইকমিশন অনলাইন ফরম পূরণের মাধ্যমে প্রবাসীদের খাদ্য চাহিদা গ্রহণ করে খাদ্য সামগ্রী পৌছে দিচ্ছে। ফরম পূরণ করতে পারেননি তাদের বেলায় হাইকমিশনের ফোন নাম্বারে যোগাযোগ করলেই খাদ্য সামগ্রী পৌছানোর ব্যবস্থা করা হচ্ছে। তবে যাদের নিয়োগকর্তা বা অন্য কোনো ভাবে খাবার পাচ্ছে তাদের এ সহযোগিতা ফরম পূরণ না করে প্রকৃত প্রয়োজন আছে এমন ব্যক্তিকে সুযোগ দিতে অনেক প্রবাসী অনুরোধ করেছেন। দূতাবাসের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা অনলাইনের পাশাপাশি ফোনেও প্রবাসীদের সাথে যোগাযোগ অব্যাহত রেখেছে।
এ বিষয়ে জানা গেছে, মালয়েশিয়ার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে শত শত ফোন আসছে কথা বলছে এবং রেকর্ড রাখছে মিশন। একজনের সাথে কথা বললে অন্য জনের ফোনে কথা বলা সম্ভব হয় না এ বিষয়টি বিবেচনা করে ফোন করলে সবাই কথা বলতে পারবেন। প্রতিনিয়ত তথ্য হাইকমিশনে আবেদন ও ফোন জমা হয়ে যেমন প্রয়োজনকে বুঝিয়ে দিচ্ছে তেমনি মালয়েশিয়ার বর্তমান পরিস্থিতিতে যানবাহন চলাচল নিয়ন্ত্রণ, করোনা বিস্তার প্রতিরোধ ব্যবস্থা গ্রহণ করে এবং প্রত্যন্ত অঞ্চলে থাকা লোকদের নিকট খাদ্য সহায়তা প্রদান করা রীতিমত চ্যালেঞ্জ। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় যে সকল সামর্থবান প্রবাসী আছেন তারাও নিজ নিজ এলাকায় সাহায্য সহযোগিতা করার আহবান জানানো হয়েছে হাইকমিশন থেকে।
খোজঁ নিয়ে দেখা গেছে, অনেক প্রবাসী যারা এজেন্টের মাধ্যমে কাজ করে তাদের নির্দিষ্ট মালিক না থাকায় মূলত তাদেরই সমস্যা বেশি হচ্ছে।
বাংলাদেশ প্রেসক্লাব অব মালয়েশিয়ার সভাপতি মনির বিন আমজাদ। ব্যবসায়ি কাজে বাংলাদেশে অবস্থান করছেন। সংকটময় মুহুর্তে দেশে থেকেও মালয়েশিয়ায় কর্মরত প্রেসক্লাবের সকল সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ অব্যাহত রেখেছেন। মনির বিন আমজাদ সাংবাদিকদের ১৫ দিনের খাদ্য সামগ্রী দিয়েছেন। এ ছাড়াও মনির বিন আমজাদসহ কমিউনিটির নেতৃবৃন্দ খাদ্য সামগ্রী বিতরন করছেন।
মালয়েশিয়া বিমান বন্দরে কর্মরত বাংলাদেশি কর্মীদের খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করেছেন মতিয়ারা কায়ামাস কোম্পানীর পরিচালক মোহাম্মদ ইউসরি বিন মোহাম্মদ ইউসুফের অর্থায়নে তার কোম্পানীতে কর্মরত বাংলাদেশি, নেপালি, পাকিস্তানী, ইন্দোনেশিয়ান কর্মীদের খাদ্য সামগ্রী বিতরন করেন। খাদ্য সামগ্রী বিতরন করেন কোম্পানীর সিনিয়র এক্সিকিউটিভ অফিসার আতিকুর রহমান।
প্রবাসীদের সহযোগিতা করছেন মালয়েশিয়া আওয়ামী লীগ নেতা বিশিষ্ট ব্যবসায়ি মকবুল হোসেন মুকুল, আহ্বায়ক রেজাউল করিম রেজা, যুগ্ম-আহ্বায়ক কামরুজ্জামান কামাল, ওয়াহিদুর রহমান অহিদ, হাজী জাকারিয়া, জাতীয় শ্রমিক লীগ মালয়েশিয়ার সভাপতি ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক নাজমুল ইসলাম বাবুল ও মোহাম্মদ সেলিমসহ অনেকে। এছাড়া তরুন উদ্যেক্তা ফরিদগাজী, মিজান চৌধূরী, রফিকুল ইসলামসহ আর অনেকে নিজ উদ্যোগে সহযোগিতা করছেন। তারা কুয়ালালামপুরের বিভিন্ন স্থানে অসহায় প্রবাসীদের মাঝে নিত্য প্রয়োজনীয় খাবার, মাস্ক ও হ্যান্ড স্যানিটাইজার বিতরণ করেন।
ভালোবাসি বাংলাদেশ: ভালোবাসি সংগঠনের পক্ষ থেকেও প্রবাসীদের সহায়তা দিচ্ছে। অনলাইন ফরম পূরণের মাধ্যমে খাদ্য সামগ্রী পৌছে দেয়া হচ্ছে। এ পর্যন্ত প্রায় ৫০ হাজারেরও প্রবাসী ফরম পূরণের মাধ্যমে তাদের সমস্যার কথা জানিয়েছেন।
সাধ্য মত সংগঠনের পক্ষ থেকে সংগঠনটি সহযোগিতা করছে বলে জানালেন সংগঠনের কর্ণধার মানবাধিকার কর্মী হারুন আল রশিদ। তিনি বলেন, মালয়েশিয়ায় মুভমেন্ট কন্ট্রোল চলমান থাকায় চেষ্টা করেও পারা যাচ্ছেনা। তারপরেও আমাদের চেষ্টার কমতি হচ্ছেনা।
ইউনিভার্সিটি পুত্রা মালয়েশিয়ার বিএস ইউ এমের সভাপতি জহিরুল ইসলাম জানান, বিএস ইউ এম সংগঠনের পক্ষ থেকে স্বেচ্ছাসেবক দলটি দেশটিতে অধ্যয়নরত বাংলাদেশিদের সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রেখে তাদেরকে উদ্বিগ্ন না হয়ে নিজ নিজ বাসস্থানে নিরাপদে থাকতে বলা হচ্ছে। তিনি বলেন, মালয়েশিয়া সরকার, বাংলাদেশ সরকার ও দূতাবাসের শিক্ষার্থীদের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে প্রতিনিয়ত আলোচনা হচ্ছে।
এছাড়া গুগল অনলাইন ফরম পূরণের মাধ্যমে যার যার সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করা হচ্ছে সংগঠনের পক্ষ থেকে। জহিরুল ইসলাম জানান এ পর্যন্ত বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্টানে অধ্যয়নরত ১১২জন শিক্ষার্থী ফরম পূরণ করেছেন তাদের সমস্যার কথা জানিয়েছেন। আমরা আমাদের সাধ্যমত চেষ্টা করছি এ সংকটময় সময়ে তাদের পাশে দাঁড়াতে।