মালয়েশিয়ায় ১২ বাংলাদেশিসহ ৪১৬ বিদেশি করোনায় আক্রান্ত
মালয়েশিয়ায় করোনা ভাইরাসে ১২ জন বাংলাদেশিসহ ৪১৬ বিদেশি অভিবাসীদের আক্রান্তের খবর প্রকাশ করেছে সেদেশের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক দাতুক ডাঃ নূর হিশাম আবদুল্লাহ বলেছেন, মন্ত্রণালয় বিদেশিদের মধ্যে বাংলাদেশের ১২ জনসহ ৪১৬ জনকে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত (কোভিড -১৯)সনাক্ত করেছে।
ডাঃ হিশাম বলেছেন, ৪১৬ জনের মধ্যে করোনা আক্রান্ত কোভিড -১৯ রয়েছে ইন্দোনেশিয়ার ৫১, ভারতের ৩৭, মিয়ানমারের ৩১, পাকিস্তানের ২৯, ফিলিপাইনের ২, চীনের ২৫, বাংলাদেশের ১২ জন। বাকিরা অন্যান্য দেশের নাগরিক।
বৃহস্পতিবার (৯ এপ্রিল) এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, "শরণার্থী ও আশ্রয়প্রার্থীরা যাতে সরকার কর্তৃক পরিচালিত প্রতিরোধমূলক কার্যক্রমের আওতাভুক্ত হয় তা নিশ্চিত করতে মন্ত্রণালয় জাতিসংঘের শরণার্থী হাই কমিশন (ইউএনএইচসিআর) এর সাথে নিবিড় ভাবে কাজ করছে।
ডাঃ হিশাম আরও জানান, সংশ্লিষ্ট বিদেশী মিশনগুলিকে তাদের নাগরিকের অবস্থান সম্পর্কে অবহিত করা হয়েছিল। তিনি আরও বলেন, জেলা স্বাস্থ্য অফিসের স্বাস্থ্য আধিকারিকদের পাশাপাশি মন্ত্রনালয়টি বহু বেসরকারী সংস্থাগুলি (এনজিও) এবং অন্যান্য ফিল্ড ট্র্যাকিং সনাক্তকরণের জন্য স্বেচ্ছাসেবীদের কাছ থেকে সহায়তা পেয়েছে। বৃহস্পতিবার নিয়মিত প্রেস ব্রিফিংএ মালয়েশিয়ায় নতুন করে আক্রান্ত হয়েছে ১০৯ জন এবং ২ জন মারা গেছেন।
এ নিয়ে দেশটিতে এখন পর্যন্ত করোনায় মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৪ হাজার ২২৮। মারা গেছেন ৬৭ জন এবং সুস্থ হয়েছেন ১৬০৮ জন। তবে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত ১২ জন বাংলাদেশি চিকিৎসাধীন অথবা সুস্থ হয়ে বাসায় ফিরেছে কিনা সে ব্যাপারে কিছু জানানো হয়নি।
এ দিকে মালয়েশিয়ার মসজিদ ইন্ডিয়ার দুটি ভবণ লকডাউন। ভবন দুটিতে আটকেপড়া বাংলাদেশিরা রয়েছেন শংকায়। লকডাউনের তিনদিন অতিবাহিত হলেও দূতাবাস থেকে খোজঁ নেয়া হচ্ছেনা তাদের। এমনটি জানালেন আটকে পড়া বাংলাদেশিরা।
মঙ্গলবার সেলাঙ্গর ম্যানশন ও মালায়ান ম্যানশনে ১৫ জন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার পর ভবন দুটি লকডাউন করা হয়। সরকার বর্ধিত মুভমেন্ট কন্ট্রোল অর্ডার (ইএমসিও) এর আওতায় এনে কাটাতারের ভেড়া দিয়ে ভবন দুটি ঘিরে রেখেছে, কুয়ালালামপুর সিটি হল (ডিবি কেএল) এর ক্রাইসিস ম্যানেজমেন্ট সেন্টার, সেনাবাহিনী, পিডি আরএম ও পুলিশ।
সিনিয়র মন্ত্রী দাতুক সেরি ইসমাইল সাবরি ইয়াকুব ৮ এপ্রিল বুধবার এক প্রেস ব্রিফিংএ বলেছেন, উভয় ভবনের ৯৭% বাসিন্দা বিদেশি। দুটি প্রায় টাওয়ারে ৬০০০ বাসিন্দা রয়েছেন, করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়তে না পেরে সে জন্য ভবন দুটি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, ভবন দুটিতে আটকে পড়া বিদেশিদের তাদের দূতাবাসগুলি বর্তমানে বর্ধিত মুভমেন্ট কন্ট্রোল অর্ডার (ইএমসিও) এর আওতাধীন সেলেঙ্গর ম্যানশন ডান মালায়ান ম্যানশনে বসবাসরত নাগরিকদের জন্য খাবার সহ প্রয়েজনীয় জিনিসপত্র সরবরাহের জন্য দায়বদ্ধ। খাদ্য সহ প্রতিদিনের চাহিদা পূরণ করা প্রতিটি দূতাবাসের দায়িত্ব।
এর পরেও, যদি তাদের কোনও সহায়তার প্রয়োজন হয় তবে তারা এমসিও অপারেশন সেন্টারে যোগাযোগ করতে পারেন।
সেলাঙ্গর ম্যানশনে আটকেপড়া বাংলাদেশি হারুন টেলিফোনে এ প্রতিবেদককে জানান, আমরা একটি রোমে চার জন বাংলাদেশি অবস্থান করছি। মঙ্গলবার আমাদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয়েছে। দূতাবাস আমাদের সাথে যোগাযোগ করার কথা থাকলেও এখন পর্যন্ত কেউ আমাদের খোজঁ নেয়নি। হারুন জানান, মঙ্গলবার তাদের স্বাস্থ্য পরীক্ষার সময় নরসিংদীর কবির নামে একজন বাংলাদেশিকে করোনা সন্দেহে ১৪ দিনের হোম কোয়ারেন্টাইনে আলাদা করে রাখা হয়েছে। তবে তিনি সুস্থ আছেন বলে জানান হারুন।এ বিষয়ে দূতাবাসে যোগযোগ করা হলে মিশনের সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মালয়েশিযা সরকারের পক্ষ থেকে ঘিরে রাখা ভবনের দায়িত্বরত কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ অব্যাহত রয়েছে। দূতাবাস থেকে দুইজন কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। আটকে পড়া বাংলাদেশিদের সঙ্গে ইচ্ছে করলেই যোগাযোগ করা যাচ্ছেনা। কারন মালয়েশিয়া সরকারের বেধে দেয়া ক্রাইটেরিয়ার মাধ্যমেই যোগযোগ অব্যাহত রয়েছে।
ইএমসিওর আওতায় বাসিন্দাদের ভবন ছাড়তে নিষেধ করা হয়েছে। এমনকি দর্শনার্থীদের ভবন ২টি তে প্রবেশ নিষেধ করা হয়েছে। চিকিৎসকরা মঙ্গলবার থেকে সার্স-জাতীয় প্যাথোজেনের বাহকের জন্য বাসিন্দাদের পরীক্ষা করা হচ্ছে। ভবন গুলিতে ৩৬৫ আবাসিক এবং বাণিজ্যিক ইউনিটে প্রায় ৬০০০ বাসিন্দা রয়েছে। তবে কিছু প্রতিবেদন মতে ভারত থেকে আসা নাগরিকদের জন্য জনপ্রিয় এই টাওয়ারগুলিতে বসবাসকারীদের সংখ্যা প্রায় ৭,০০০ এরও বেশি বলে জানানো হয়েছে। এ দুটি ভবনে কতজন বাংলাদেশি রয়েছেন তা এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত জানা যায়নি।
এর আগে ৩১ মার্চ একই এলাকার মুন্সী আবদুল্লাহ রোডের সিটি ওয়ান প্লাজা কোভিড-১৯ প্রাদুর্ভাবে লকডাউন করা হয়। সিটি ওয়ান ভবনটিতে প্রায় এক হাজারেরও অধিক বাংলাদেশি রয়েছেন। ভবনটিতে আটকে পড়া বাসিন্দাদের মেডিকেল চেকআপ করা হয়েছে মঙ্গলবার। তবে বাংলাদেশি আক্রান্তের খবর পাওয়া যায়নি। সিটি ওয়ান প্লাজায় আটকে পড়া বাংলাদেশিদের মধ্যে গোপাল গোপালঞ্জের মো: রসি ও সোহেল এবং মন্সীগন্জের কাশেম জানান, তারা ১০ দিন ধরে বন্দি জীবন অতিবাহিত করছেন। এখ নপর্যন্ত বাংলাদেশ হাইকমিশন থেকে তাদের সঙ্গে কেউ যোগাযোগ করেননি।